নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা । Napoleon Continental system

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা বা নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা শত্রূ দেশ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গৃহীত একটি কার্যকরী ব্যবস্থা।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, যিনি ছিলেন ফ্রান্সের একজন প্রধান রূপকার।

ফ্রান্সের ডাইরেক্টরির শাসনব্যবস্থার দুর্নীতিতে আঘাত করে নেপোলিয়ন কনসুলেটের শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করেন।

এর আগে পর্যন্ত নেপোলিয়ন ছিলেন একজন সাধারণ সৈনিক। কিন্তু কনসুলেটের শাসন দ্বারা ফ্রান্সের আমূল সংস্কার করেন তিনি।

ধীরে ধীরে নেপোলিয়ন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সামরিক সাফল্য পেতে থাকেন। কিন্তু নেপোলিয়ন তথা ফ্রান্সের পরম শত্রূ ছিল ইংল্যান্ড।

এমনকি এমিয়েন্স-র সন্ধির দ্বারা ফ্রান্সের সাথে ইংল্যান্ডের শান্তিচুক্তি স্থাপনও হয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি।

ইওরোপে নেপোলিয়নের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও একমাত্র ইংল্যান্ডই ছিল অপরাজিত শত্রূ। তাই ইংল্যান্ড-কে কিভাবে ধ্বংস করা যায় তা নেপোলিয়ন ভাবতে থাকেন।

সমাধান সূত্র হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক শক্তিকে বিনষ্ট করার কাজে উঠেপড়ে লাগেন। এদিকে ইংল্যান্ড ছিল তার নৌশক্তিতে বলীয়ান।

তাই নেপোলিয়ন অনুভব করেন ইংল্যান্ডকে সামরিক শক্তিতে পরাজিত না করে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করাই শ্রেয় হবে।

তাই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বা মহাদেশীয় ব্যবস্থা বলতে বোঝায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক যুদ্ধকেই।  

Continental system,নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ( মহাদেশীয় ব্যবস্থা )

১) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার উৎপত্তি 

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নেপোলিয়ন চালু করেছিলেন একথা ঠিক।

তবে ফ্রান্সে বিদেশী পণ্যের আমদানি কমানো ও তার ওপর চড়া শুল্ক বসানো বহু আগে থেকেই চালু ছিল।

সপ্তদশ শতকে ফ্রান্সের মন্ত্রী কলবেয়ার বিদেশী পণ্যের আমদানি ও শুল্ক নীতি প্রথম চালু করেছিলেন।

ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকার থাকাকালীনও ফ্রান্স-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি রদ হয়েছিল। এরপর ডাইরেক্টরির শাসনকালেও ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে একই নিয়ম দেখা যায়।

সেইসময় ফ্রান্সে ব্রিটিশ পণ্য আমদানি কঠোরভাবে নাকচ করা হয়।

ডাইরেক্টরির থেকে নেপোলিয়নের হাতে ক্ষমতা আসার পর নেপোলিয়ন গোটা ইওরোপ মহাদেশ জুড়ে এই অবরোধ প্রথা চালু করেন। 

২) মন্টজেলার্ড রিপোর্ট ( মহাদেশীয় ব্যবস্থা )

ইংল্যান্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করবার ক্ষেত্রে মন্টজেলার্ড পরিকল্পনাকেই হাতিয়ার করা হয়। মন্টজেলার্ড ছিলেন নেপোলিয়নের একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি।

১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে মন্টজেলার্ড-র তাঁর রিপোর্টে অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের শক্তি খর্ব করার প্রস্তাব পেশ করেন।

মূলত এটাই ছিল মহাদেশীয় ব্যবস্থার প্রথম খসড়া। এরসাথে যুক্ত হয় মার্কেন্টাইলবাদী অর্থনীতির তত্ত্ব।

মার্কেন্টাইল অর্থনীতি বলতে বোঝায়, অন্যদেশ থেকে নিজের দেশে পণ্য আমদানি কমিয়ে বরং নিজের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো।

সেইসাথে অন্য রাষ্ট্রের আমদানি মালের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ এইরূপ অর্থনীতির অন্যতম নিয়ম।

তাই নেপোলিয়ন অনুভব করলেন ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবরোধ ফ্রান্সে খুবই জনপ্রিয় হবে। আর ইংল্যান্ড থেকে মাল আমদানি নিষিদ্ধ করলে মার্কেন্টাইল অর্থনীতির নিয়মও রক্ষা হবে। 

আরও পড়ুন : মুঘল যুগের মুদ্রাব্যবস্থা

৩) নেপোলিয়নের জারি করা ডিক্রি ( মহাদেশীয় ব্যবস্থা )

ফ্রান্স নৌ শক্তিতে ইংল্যান্ডের থেকে পিছিয়ে ছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নৌ যুদ্ধে জয়লাভ নেপোলিয়নের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ ইংল্যান্ড ছিল সমুদ্রের রানী।

নিজের উন্নত নৌশক্তির সাহায্যে উপনিবেশ, ব্যবসা-বাণিজ্যে একচেটিয়া অধিকার কায়েম করেছিল।

আবার ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ইংল্যান্ড আক্রমণ ফ্রান্সের পক্ষে ছিল কার্যত অসম্ভব।

কারণ অতন্দ্র প্রহরী রূপে ইংলিশ চ্যানেল পাহারাতে ইংল্যান্ডের নৌ শিবির সদা ব্যস্ত ছিল। এক্ষেত্রে ফ্রান্স ছিল অসহায়।

এমতাবস্থায় নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করে এক অভিনব পদক্ষেপ নিলেন। কয়েকটি ঘোষণা বা ডিক্রি জারির মাধ্যমে এই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলবৎ হয়েছিল।

i) বার্লিন ডিক্রি –

১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি ঘোষণা বা জারি করেন। বার্লিন ডিক্রিতে বলা হয়েছিল যে, ফ্রান্সের মিত্র দেশের বন্দরে ইংল্যান্ডের কোনো মালবাহী জাহাজ ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদি ইংল্যান্ডের কোনো পণ্য অন্য দেশের জাহাজের মারফৎ ফ্রান্সের বন্দরে নামানো হয় তা তৎক্ষণাৎ বাজেয়াপ্ত হবে। বস্তুত এটাই ছিল বার্লিন ডিক্রির ঘোষণা। 

ii) মিলান ডিক্রি –

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ঘোষণা করেন মিলান ডিক্রি। এই ঘোষণাতে বলা হয়, ইংল্যান্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত মিত্র বা নিরপেক্ষ দেশের জাহাজও ব্রিটিশ সম্পত্তি হিসেবেই বাজেয়াপ্ত হবে। এমনকি নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ ব্রিটেনের বন্দরে নোঙ্গর করলে তাকে শত্রূ দেশের জাহাজ হিসেবেই দেখা হবে। 

iii) ওয়ারস ও ফন্টেনব্লিউ ডিক্রি –  

নেপোলিয়ন আগের দুটি ডিক্রি বা ঘোষণা জারি করেই ক্ষান্ত হলেন না। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে জারি করলেন ওয়ারস ডিক্রিফন্টেনব্লিউ ডিক্রি। এই ডিক্রিতে বলা হোলো ফ্রান্সের আদেশ ভঙ্গ করার অপরাধে বাজেয়াপ্ত ব্রিটিশ পণ্য জনসমক্ষে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। আসলে বার্লিন, মিলান, ওয়ারস ও ফন্টেনব্লিউ এই চারটি ডিক্রীর ঘোষণাকেই মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা বা ( Continental system ) কন্টিনেন্টাল সিস্টেম বলা হয়।

৪) অর্ডারস ইন কাউন্সিল ( Orders in council )

নেপোলিয়নের ঘোষণা করা ডিক্রির পাল্টা জবাবে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড অর্ডারস ইন কাউন্সিল নামে নির্দেশ জারি করে। এটি ছিল ইংল্যান্ডের একটি ঘোষণাপত্র।

যাতে বলা হয়েছিল যে, ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের মিত্র দেশগুলিতে ইংল্যান্ড নৌ অবরোধ করবে।

ইওরোপের কোনো দেশ ফ্রান্সের বন্দরে পণ্য বোঝাই জাহাজ নিয়ে ঢুকলে ইংল্যান্ড পুরোটাই আটক করবে।

নিরপেক্ষ দেশের জাহাজ যদি একান্তই ফ্রান্সের বন্দরে যেতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই ইংল্যান্ডের থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।

আর এই লাইসেন্স পাওয়া যাবে উপযুক্ত শুল্ক দাখিল করে। সেইসময় ইংল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন ক্যানিং।

তিনি স্পষ্টই বুঝেছিলেন ইংল্যান্ডের শক্তিশালী নৌশক্তির সাহায্যেই ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এই অর্থনৈতিক অবরোধ সম্ভব।

ইংল্যান্ডের ওপর মহাদেশীয় অবরোধের প্রভাব 

বলা বাহুল্য চারটি ডিক্রি জারির মাধ্যমে নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে বেসামাল করে দিতে পেরেছিলেন। ব্রিটেন তথা ইংল্যান্ডের অর্থনীতি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের লাইসেন্স পাওয়া ব্রিটিশ ও অন্য দেশের জাহাজগুলি বেশিরভাগই ফ্রান্স বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিল।

এর ফলে ১৮০৮-১৮১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। ইংল্যান্ডের রপ্তানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের গুদামে রপ্তানির জন্য মজুত পণ্য গুদামেই নষ্ট হয়।

যার ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। কর্মহীন শ্রমিকদের দল ইংল্যান্ডে বিদ্রোহ করতে শুরু করে।

তার মধ্যে এইসময়কালে ইংল্যান্ডে অনাবৃষ্টির ফলে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

নেপোলিয়ন এইসময় তাঁর মার্কেন্টাইলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন। অর্থাৎ নিজের দেশে পণ্যের আমদানি কমিয়ে অপর দেশে পণ্যের রপ্তানি বাড়ান।

যেমনটা তিনি করলেন দুর্ভিক্ষের সময় ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে খাদ্য রপ্তানি করে। আসলে নেপোলিয়নের উদ্দেশ্য ছিল, খাদ্যশস্য ইংল্যান্ডে রপ্তানি করে ইংল্যান্ডের সঞ্চিত সম্পদে ভাগ বসানো।

আরও পড়ুন : গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্ম

ফ্রান্সের ওপর মহাদেশীয় অবরোধের প্রভাব

মহাদেশীয় অবরোধের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ফ্রান্সেও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে ফ্রান্সের লায়নস প্রদেশে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন।  

ইংল্যান্ড তার জারি করা অর্ডারস ইন কাউন্সিল শিথিল করে নিজের আর্থিক সংকটকে সামলে ওঠে। ইংল্যান্ড মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে।

কিন্তু নেপোলিয়নের ফ্রান্স এই অবরোধকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।

ইংল্যান্ডের গুদামে মজুত পণ্যের রপ্তানির জন্য ইংল্যান্ড ইতিমধ্যেই নতুন বাজারের সন্ধান পায়।

ইংল্যান্ডের পণ্য ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, এশিয়ার তুরস্ক প্রভৃতি স্থানে ভালোই রপ্তানি হতে থাকে।

নেপোলিয়নের দুর্বল নৌশক্তির প্রভাবে ইওরোপের উপকূল জুড়ে ব্রিটেনের পণ্য এইসময় চোরাপথে আমদানি হয়। এই চোরাপথে ব্রিটিশ পণ্য আমদানির সাথে নেপোলিয়নের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরাও যুক্ত ছিলেন।

এমনকি ফ্রান্সের সাধারণ জনগণের মধ্যেও ইংল্যান্ডের পণ্যের বেশ চাহিদা ছিল। ফলে বাধ্য হয়ে নেপোলিয়নকে মহাদেশীয় অবরোধের বাঁধন আলগা করতে হয়।

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার ব্যর্থতা

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার জেরে ইংল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, ইংল্যান্ড শীঘ্রই এই সংকটকে কাটিয়ে উঠেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছিল। মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার ব্যর্থতার কয়েকটি কারণ আছে।

  • ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী নৌশক্তি ফ্রান্সের কাছে না থাকায় ইওরোপের উপকূলে ফ্রান্সের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ব্রিটিশ নৌশক্তির প্রাধান্য ছিল প্রবল। ফলে ইওরোপের বন্দরগুলি অবরুদ্ধ রেখে ফ্রান্স ও ফ্রান্সের প্রভাবাধীন দেশগুলির বাণিজ্য নষ্ট করা ইংল্যান্ডের পক্ষে সহজ হয়। 
  • নেপোলিয়ন তাঁর যুদ্ধ ও অবরোধকে কার্যকর করতে গিয়ে বিরাট অংকের ব্যয়ের মুখে পড়েছিলেন। আর এরজন্য তিনি বণিক ও শিল্পপতিদের ওপর চড়া হারে কর চাপান। এই শিল্পপতিগণ মহাদেশীয় অবরোধের বিরোধিতা শুরু করলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। 
  • ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটায় ইংল্যান্ড শ্রেষ্ঠ শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়। ইউরোপের বাজারে ব্রিটিশ শিল্পপণ্যের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু ফ্রান্স শিল্পে অনুন্নত হওয়ায় চাহিদা পূরণে সক্ষম ছিল না। এই পরিস্থিতিতে ইওরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ায় বণিকগণ চোরাপথে ব্রিটিশ পণ্য আমদানি করে। এমনকি রাশিয়াও এই অবৈধ বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। ইওরোপের জনগণ নেপোলিয়নের প্রতি বিক্ষুব্ধ হওয়ায় নেপোলিয়ন শেষমেশ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেন।         

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার ফলাফল

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এই ব্যবস্থার ফলে ব্রিটেন তথা ইংল্যান্ডই বেশি লাভবান হয়েছিল।

ইংল্যান্ড তার দক্ষ শক্তিশালী নৌশক্তির সাহায্যেই এই অবরোধ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়েছিল। তবে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

  • এই অবরোধ ব্যবস্থার ফলে ব্রিটেনের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় পরিবর্তে মোটের ওপর বৃদ্ধি পেয়েছিল।
  • মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থায় সমুদ্রপথে ইওরোপের নিরপেক্ষ দেশগুলির বাণিজ্য জাহাজের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেইস্থানে ব্রিটিশ জাহাজগুলি পণ্যসামগ্রী বিশ্বের সর্বত্র বহন করে নিয়ে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে। 
  • মহাদেশীয় ব্যবস্থায় ব্রিটিশ বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় পণ্যসামগ্রীর মূল্য প্রবলহারে বেড়ে যায়। ইওরোপের সাধারণ জনগণ সংকটের সম্মুখীন হলে তাঁরা নেপোলিয়নের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন।
  • নেপোলিয়নের এই অর্থনৈতিক অবরোধ নীতির ফলে রাশিয়ার বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। যেকারণে রুশ সম্রাট প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের প্রতি রুষ্ট হন।
  • এই জবরদস্তি ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ও ব্রিটেনের চোরাই পণ্য আমদানি রুখতে নিরপেক্ষ দেশগুলিতে ফরাসি সৈন্য নেপোলিয়ন মোতায়েন করেন। ফলে বিভিন্ন দেশের সাথে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়ান তিনি।
  • পোপ মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা চালু করতে রাজী না হলে নেপোলিয়ন পোপকে বন্দি করেন। এরফলে তিনি পোপের বিরাগভাজন হন।
উপসংহার  

ইংল্যান্ডকে সামরিক যুদ্ধে পরাস্ত করতে না পেরে নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

যার ফলে তিনি চালু করেছিলেন মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা। এটি ছিল একপ্রকার অর্থনৈতিক অবরোধ।

নেপোলিয়নের এই ব্যবস্থার ফলে ইংল্যান্ড সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষপর্যন্ত মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়েছিল।

কিন্তু নেপোলিয়ন তাঁর এই জবরদস্তি নীতিকে কার্যকর করতে গিয়ে ইওরোপের পর্তুগাল, স্পেন প্রভৃতি নিরপেক্ষ দেশগুলির সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। 

যুদ্ধগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয়। গোটা ইওরোপে নেপোলিয়নের প্রতি বিক্ষোভ জন্মায়।

তাই বলা যায় মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা নীতি শেষপর্যন্ত নেপোলিয়নের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ঐতিহাসিক লজ ( Lodge ) মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে নেপোলিয়নের চরম ব্যর্থতার নিদর্শন বলেই আখ্যায়িত করেছেন। 

আরও পড়ুন : ফরাসী বিপ্লবে দার্শনিকদের ভূমিকা

আশা করি ‘নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা’ পোস্টটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পেরেছো। পোস্টটি ভালো লাগলে তোমরা অবশ্যই কমেন্ট ও শেয়ার কোরো। তোমাদের মূল্যবান মতামত আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে।        

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!