ফরাসী বিপ্লব (French Revolution)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভাল আছো।
ভারতবর্ষের ইতিহাস জানার পাশাপাশি তোমার ভারতের বাইরের দেশ গুলির ইতিহাস জানাটাও খুব দরকার। ফ্রান্স (France) দেশটির নাম তুমি নিশ্চই জানো। যার রাজধানী এখন প্যারিস (Paris) | খুব সুন্দর একটি দেশ। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) |
আজকে তুমি যে ফ্রান্স কে দেখছ সেই ফ্রান্সে কিন্তু একটা সময় বিপ্লব ঘটেছিল। হ্যা তুমি ঠিকই ধরেছ আমি ফরাসী বিপ্লবের (French Revolution) কথাই বলছি। একটা সমাজ ব্যবস্থা যখন তার গতি হারিয়ে ফেলে , রুগ্ন হয়ে যায় তখন এক শক্তি এসে একটি নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
সমাজের এই দ্রুত পরিবর্তনটিই বিপ্লব নামে পরিচিত।
যাই হোক ফিরে আসি আলোচনায়। ফ্রান্সের এই বিপ্লব দেখা দিয়েছিল ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে। এই বিপ্লব হঠাৎ কোন কারণে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সের রাজনীতি , সমাজ ও অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি চলে আসছিল। ফ্রান্সের জনগণরা তা মেনে নিতে পারেননি।
তাই শেষপর্যন্ত ফ্রান্সের বুর্জোয়া শ্রেণীর মানুষেরা একটি নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এগিয়ে আসে। বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে ছিল ফ্রান্সের সাধারণ মানুষরাও।
তাহলে চল দেখে নিই , ফরাসী বিপ্লবের পিছনে রাজনৈতিক কারণ কি ছিল ?
রাজার সৈরাচারী ক্ষমতা :- ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই (১৪ তম ) ছিলেন একজন সৈরাচারী শাসক।এই যুগের রাজারা ভাবতেন যে ভগবানই তাকে রাজকার্যে নিয়োগ করেছেন। ভগবানের দেওয়া ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে লুই রাজতন্ত্রকে ক্ষমতার কেন্দ্রে পরিণত করেন। তিনি এও বলেন যে , “রাজাই হলেন রাষ্ট্র” । ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সভার অধিবেশনও তিনি ডাকতে দেননি। কারণ তিনি নিজের ইচ্ছে মত শাসন চালাবেন বলে। সাধারণ মানুষের ওপর কর্তব্যের কথা তারা ভাবত না। সাধারণ মানুষের অসুবিধা , অভিযোগ রাজার কানে পৌঁছত না। এই সৈরাচারী মনোভাবের জন্য সাধারণ মানুষ রাজতন্ত্রের থেকে আলাদা হয়ে যান। বেছে নেন বিপ্লবের পথ।
অভিজাতশ্রেণীর প্রভাব :- ফ্রান্সে বুরবোঁ রাজতন্ত্রের শাসন ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও অভিজাতরাই ক্ষমতা হস্তগত করে ভোগ করত। পঞ্চদশ লুই (১৫ তম ) ছিলেন বিলাসী ও পরিশ্রম বিমুখ। তাই এই বুরবোঁ রাজাদের অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে অভিজাতরা ক্ষমতা ভোগ করত। ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জন্য যা মোটেই ভাল ছিল না।
বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি :- বুরবোঁ রাজতন্ত্রের মহিমা নষ্ট হয়েছিল দুর্নীতির কারণে। ফ্রান্সের বিচারব্যবস্থা ছিল ত্রূটিপূর্ণ। লত্রে দ গ্রাস ও লত্রে দ কেসে (Letters de Grass & Letters de Cachet) আইনের দ্বারা রাজা কোন নাগরিকের শাস্তি মাফ ও কোন নাগরিককে কারাগারে আটকে রাখতেন পারতেন। কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা এই আইনের অপপ্রয়োগ করত। বিচার ব্যবস্থাকে তারা ব্যয়বহুল করে তুলেছিল। আইনের কাছে সাধারণ মানুষরা সমান অধিকার পেত না। এইভাবে দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের দুর্গতি চরমে ওঠে।
প্রাদেশিক সভার ক্ষমতা :- ফ্রান্সের প্রদেশ সভা গুলির অনুমতি ছাড়া রাজার কোন নির্দেশ প্রদেশে মান্যতা পেত না। রাজার তৈরি কোন আইন পার্লামেন্টে পেশ করা হলে পার্লামেন্ট তা নাকচ করে দিত। কারণ পার্লামেন্টের বিচারকরা ছিলেন অভিজাত শ্রেণীর। ফ্রান্সের পার্লামেন্ট -র সংখ্যা ছিল ১২ টি। এই ১২ টির মধ্যে Parlement of Paris ছিল সবথেকে ক্ষমতাবান। কিন্তু এই পার্লামেন্টে অভিজাত বিচারকরা থাকায় মন্ত্রী টুর্গ -র কিছু সংস্কারকে ফলপ্রসূ হতে দেয়নি। সুতরাং ফ্রান্সের রাজারা নিজেকে ঈশ্বরের দূত বলে দাবী করলেও তাদের ক্ষমতা কিন্তু ছিল খুবই সীমিত।
বৈদেশিক নীতি :- পঞ্চদশ লুই (১৫ তম ) অস্ট্রিয়ার যুদ্ধ ও সপ্তবর্ষের যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন। এর ফলে গোটা ইউরোপে ফ্রান্সের সামরিক গরিমা নষ্ট হয়। দুই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে ফরাসী বণিকদের ব্যবসা -বাণিজ্যের ভীষণ ভাবে ক্ষতি হয়েছিল। এর পরেও ষোড়শ লুই (১৬ তম ) আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যোগ দেন। এই বড় যুদ্ধগুলি ফ্রান্সের রাজকোষ শূন্য করে দেয়। যার ফল ভোগ করতে হয়েছিল সাধারণ মানুষদের।
রাজস্ব ব্যবস্থা :- ফ্রান্সের রাজস্ব ব্যবস্থা ছিল ভুলে ভরা। অভিজাত শ্রেণীর কাছে কর দেওয়াটা কোন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু দেখা যেত তারাই কর দেওয়া থেকে অব্যাহতি পেত। অন্যদিকে কর দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না খেটে খাওয়া কৃষক , বুর্জোয়াদের। তাদেরকে কর দিতেই হত। রাজা অভিজাতদের ওপর কর বসাতে সাহস করতেন না। তাই সরকারকে অর্থসঙ্কটের সামনে পড়তে হয়েছিল।
অযথা অর্থের খরচ :- বুরবোঁ রাজারা অযথা অর্থ খরচ করতেন। যুদ্ধে ফ্রান্সের ক্ষতির ফলে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। যা রাজস্ব আদায় করা হত তা দিয়ে সরকারের খরচ মেটানো সম্ভব ছিল না। এই অর্থ সঙ্কট থেকে বুরবোঁ রাজবংশ মুক্ত হতে পারেনি। তাদের দুর্বলতাগুলি সাধারণ মানুষের সামনে চলে আসে। শুরু হয় বিপ্লব।
বস্তুত এগুলিই ছিল ফরাসী বিপ্লব ঘটবার রাজনৈতিক কারণ সমূহ।
লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।
Excellent very informative thanks.
Many many thanks, stay well.