উপদ্বীপের যুদ্ধ । Peninsular war in bengali

উপদ্বীপের যুদ্ধ ( Peninsular war )নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থার এক অন্যতম ফল।

মহাদেশীয় অবরোধ জারী করে নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত করতে চেয়েছিলেন।

আসলে ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তির সাথে নেপোলিয়নের পেরে ওঠা কার্যত অসম্ভব ছিল। 

মহাদেশীয় ব্যবস্থার ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক ক্ষতি হলেও ইংল্যান্ড তা সামলে নিয়েছিল। কিন্তু মহাদেশীয় ব্যবস্থা ফ্রান্সের পক্ষে খুব সুখকর হয়নি।

ইংল্যান্ডের পণ্য ফ্রান্সে এতটাই জনপ্রিয় ছিল যার ফলে ব্রিটিশ পণ্যের চোরাকারবার নেপোলিয়নের পক্ষে ঠেকানো সম্ভব ছিল না।

ফ্রান্সের বণিক থেকে সাধারণ জনগণ নেপোলিয়নের বিরোধিতা শুরু করে। তাই নেপোলিয়ন মহাদেশীয় অবরোধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

কিন্তু নেপোলিয়ন ক্ষমতা দখলের নেশায় বুঁদ ছিলেন।

একপ্রকার জবরদস্তি ভাবে মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে ইওরোপের দেশগুলির সাথে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে নিজেকে জড়ান।

ইওরোপের দুটি দেশ স্পেন ও পর্তুগাল নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল। নেপোলিয়ন এই দেশদুটিকে শায়েস্তা করতে উঠেপড়ে লাগেন।

ফরাসী বাহিনীর আগ্রাসন প্রতিহত করতে স্পেন ও পর্তুগালে এক গণ অভ্যুত্থান ঘটে। একেই উপদ্বীপের যুদ্ধ‘ বা ‘পেনিনসুলার যুদ্ধ‘ বা নেপোলিয়নীয় যুদ্ধ বলা হয় ( Peninsular war )।

১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে এই উপদ্বীপের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল স্পেনের বিদ্রোহী জনগণ ও নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর মধ্যে। 

Peninsular war,উপদ্বীপের যুদ্ধ

উপদ্বীপের যুদ্ধ বা পেনিনসুলার যুদ্ধ ( Peninsular war )

১) নেপোলিয়নের স্পেন অভিযান ( Peninsular war )

নেপোলিয়ন ঘোষিত মহাদেশীয় ব্যবস্থায় স্পেন ও পর্তুগাল সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে। এই দেশদুটি নেপোলিয়নের বিরোধিতা করতে থাকে।

নেপোলিয়ন এদের শায়েস্তা করতে অগ্রণী হন। নেপোলিয়ন প্রথমে পর্তুগাল আক্রমণের জন্য স্পেনের ভিতর দিয়ে সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

কারণ ফন্টেনব্লিউ সন্ধির মতে নেপোলিয়ন পর্তুগাল আক্রমণের জন্য স্পেনের সাহায্য বাধ্যতামূলক করেন।

হঠাৎই ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন ফরাসীবাহিনী স্পেন অভিযান করে স্পেনের দুর্গগুলি অবরোধ করে। স্পেনের রাজা চতুর্থ চার্লসকে ফরাসি সেনা বন্দি করে। 

২) যোসেফ বোনাপার্টের সিংহাসন লাভ

ফরাসি সৈন্যের অকস্মাৎ স্পেন আক্রমণে স্পেনের রাজা চতুর্থ চার্লস ভীত হয়ে পালাতে চেষ্টা করলে তিনি বন্দি হন।

এরপর স্পেনবাসীরা চতুর্থ চার্লসের পুত্র ফার্দিনান্দকে রাজা মেনে নিয়ে নেপোলিয়নের প্রতি গর্জে ওঠেন। কিন্তু ফার্দিনান্দ ছিলেন একজন অপদার্থ শাসক।

নেপোলিয়ন অচিরেই ফার্দিনান্দকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করেন। পিতা ও পুত্র দুই স্পেন রাজাকেই নেপোলিয়ন নির্বাসনে পাঠান।

ফরাসি সেনাপতি মুরাটের সেনাদল অতি সহজেই স্পেনের সিংহাসনের দখল নেয়।

নেপোলিয়ন স্পেনের সিংহাসনে তাঁর বড়ো ভাই যোসেফ বোনাপার্টকে অভিষিক্ত করেন।

সিংহাসনে বসে যোসেফ বোনাপার্ট নেপোলিয়নের সংস্কারগুলিকেই স্পেনে প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। হয়তো এর মাধ্যমে স্পেনবাসীর ক্ষোভের ওপর প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যোসেফ বোনাপার্ট। 

আরও পড়ুন : নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা

৩) স্পেনজাতির অভ্যুত্থান ( Peninsular war )

যোসেফ বোনাপার্টকে স্পেনের সিংহাসনে বসালে সমগ্র স্পেনবাসী বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

নেপোলিয়নের জবরদস্তি মূলক সাম্রাজ্যবাদী সিদ্ধান্ত স্পেনের মানুষদের মধ্যে তিক্ততার জন্ম দেয়। তাঁদের মর্যাদা ও দেশপ্রেম বোধকে আঘাত করে।

তাই স্পেনবাসীরা স্পেন থেকে নেপোলিয়নের সৈন্যদের তাড়াতে বিদ্রোহের শপথ করে।

স্পেনের এই বিদ্রোহ ছিল নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলন।

স্পেনের বিভিন্ন স্থানে জুন্টা বা কমিউন গড়ে তুলে দেশপ্রেমিক নেতারা নিজেদের হাতে শাসনভার তুলে নেয়। স্পেনের কৃষকরা ফরাসি সৈন্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

এদিকে নেপোলিয়ন বিশ্বাসী ছিলেন বলপ্রয়োগ নীতিতে। কিন্তু স্পেনের জাতীয়তাবোধ নেপোলিয়নের সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানায়।

ধনী, দরিদ্র, কৃষক, জমিদার নির্বিশেষে প্রত্যেক স্পেনবাসী বিদ্রোহে অবতীর্ণ হয়। স্পেনে জাতীয় বিদ্রোহের সূচনা হয়।

৪) স্পেনের বিদ্রোহ কি জাতীয় বিদ্রোহ ছিল

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্পেনের প্রতিরোধ জাতীয় বিদ্রোহ কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

বিশিষ্ট ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন-র মতে, স্পেনবাসীদের মধ্যে গভীর স্বাধীনতাবোধ বিদ্যমান ছিল।

স্পেনরাজ চতুর্থ চার্লস ও তাঁর পুত্র ফার্দিনান্দ অযোগ্য হওয়া স্বত্বেও সমগ্র স্পেনের মানুষদের ভিতরে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ঐক্যবোধ ছিল অটুট।

স্পেনের অতীত ইতিহাস নিয়ে স্পেনের অধিবাসীরা গর্ব করতো। আসলে স্পেন ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ রাজতান্ত্রিক দেশ।

তবে স্পেনের যাজক শ্রেণীর মানুষেরা নেপোলিয়নের গির্জা সংস্কার, কোড নেপোলিয়ন প্রভৃতি সংস্কারকে ভয় পেতেন।

এঁরা স্পেনের প্রতিরোধে পাশে থাকলেও এঁদের স্বার্থ ছিল সংকীর্ণ। তাই একশ্রেণীর ঐতিহাসিকরা এইকারণে স্পেনের বিদ্রোহী অভ্যুত্থানকে জাতীয়তাবাদী বলতে চাননি।

তবু এসব সত্বেও বলতে হয় স্পেনের জনগণ ফরাসি সাম্রাজ্যবাদকে মেনে নিতে রাজী ছিলেন না।

নেপোলিয়নের জোরপূর্বক শাসনকে সহ্য না করে সমগ্র স্পেনের কৃষক, যাজক, ধনী, নির্ধন একসাথে মিলে সংগ্রামে ঝাঁপ দেয়।

এদিক থেকে বিচার করলে স্পেনের বিদ্রোহী অভ্যুত্থানকে অবশ্যই জাতীয় বিদ্রোহ বলা যায়।

উপদ্বীপের যুদ্ধে ইংল্যান্ডের হস্তক্ষেপ

নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে পর্তুগাল ও স্পেন মানতে অস্বীকার করলে পেনিনসুলার যুদ্ধ বা স্পেনীয় উপদ্বীপের যুদ্ধ ঘটে। এই অবস্থায় এই দুই দেশের পাশে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ড কার্যত উপদ্বীপের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। কারণ ইংল্যান্ডের সাথে নেপোলিয়নের সস্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না।

তার ওপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থার দ্বারা অর্থনৈতিক অবরোধ ইংল্যান্ডকে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য করে।

তৎকালীন ইংল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী জর্জ ক্যানিং আশ্বাস দেন যে, নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে কোনো দেশ প্রতিরোধ গড়ে তুললে ইংল্যান্ড সেদেশের পাশে থাকবে।

ইংল্যান্ডের সৈন্য বাহিনী স্পেনে ঢুকলে স্পেনে এক রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরী হয়। স্পেনের যুদ্ধে ইংল্যান্ডের যোগদান স্পেনের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল।

আসলে নেপোলিয়ন ইওরোপের একাধিক তাবড় শক্তিগুলিকে পরাস্ত করার পর আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন।

তিনি ভুলে গিয়েছিলেন স্পেনের জনগণের জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের কথা। যার দ্বারা স্পেনবাসী তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে।

আরও পড়ুন : ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব

উপদ্বীপের যুদ্ধগুলি 

১) টলভেরার ও ভিমিয়েরোর যুদ্ধ

ইংল্যান্ড স্পেনীয় বা উপদ্বীপের যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করায় স্পেনে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। এক্ষেত্রে স্পেনে গিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন ইংরেজ সেনাপতি আর্থার ওয়েলেসলি।

ইনি বেশি পরিচিত ছিলেন ডিউক অফ ওয়েলিংটন নামে। আর্থার ওয়েলেসলি পরিচয়ে ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলির ভাই ছিলেন।

তাঁর নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ভিমিয়েরো ও টলভেরার যুদ্ধে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনীকে পরাজিত করে।

এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের কৌশলকে হাতিয়ার করেই ইংরেজ বাহিনী জয় পায়। 

২) টোরেস ভেড্রার ব্যুহ 

স্পেনে টলভেরার ও ভিমিয়েরোর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নেপোলিয়ন তাঁর শ্রেষ্ঠ সেনাপতি ম্যাসেনা-কে স্পেনে পাঠান।

ইতিমধ্যেই ইংরেজ সৈন্য স্পেন ছেড়ে পর্তুগালে এসে অবস্থান করে। পর্তুগালে এসে আর্থার ওয়েলেসলি ইংরেজ সেনাদের নিয়ে টোরেস ভেড্রা নামক এক ব্যুহ তৈরি করেন।

এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক রেখা।

ফরাসি সেনাপতি ম্যাসেনা পর্তুগালে তাঁর সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হলে ইংরেজ সৈন্যরা এই ব্যুহর আড়াল থেকে লড়াই চালায়।

কিন্তু ম্যাসেনার পক্ষে এই আত্মরক্ষা রেখা অতিক্রম করে ইংরেজ সৈন্যবাহিনীর সাথে সম্মুখ লড়াই করা অসম্ভব হয়। তাই নেপোলিয়ন আরো একবার পরাজিত হন সেইসাথে গোটা ইওরোপে তাঁর মর্যাদাহানি হয়।

৩) স্যালামাঙ্কা ও ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধ

১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে টিলজিটের সন্ধির ( Treaty of Tilsit ) দ্বারা নেপোলিয়নের সাথে রাশিয়ার মিত্রতা স্থাপন হয়েছিল।

কিন্তু ক্রমশ রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডারের মনে নেপোলিয়নের কার্যকলাপ নিয়ে ক্ষোভ জন্মাতে থাকে।

বিশেষ করে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল।

কন্টিনেন্টাল সিস্টেম কার্যকরী করতে জার অস্বীকৃত হলে নেপোলিয়ন রাশিয়া অভিযান করেন।

আর এই সুযোগে ওয়েলেসলি ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে স্যালামাঙ্কা-র যুদ্ধে ফরাসি বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন।

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে যোসেফ বোনাপার্ট সহ ফরাসি সৈন্য পালাতে বাধ্য হয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ভিত্তোরিয়ার যুদ্ধে ফরাসি সেনাপতি জুর্দান চুড়ান্তভাবে পরাজিত হলে ফরাসি বাহিনী স্পেন ত্যাগ করে। 

উপদ্বীপের যুদ্ধের ফলাফল

উপদ্বীপের যুদ্ধ বা পেনিনসুলার যুদ্ধের ফলাফল নেপোলিয়নের পক্ষে হিতকর হয়নি। এই যুদ্ধের ফলে নেপোলিয়নের সামরিক মর্যাদা ভুলুন্ঠিত হয়। 

  • ১) নেপোলিয়ন তাঁর সামরিক শক্তির দ্বারা স্পেনের ওপর জয় হাসিল করতে চেয়েছিলেন। তিনি স্পেনীয় প্রতিরোধকে পাত্তা দিতে রাজী ছিলেন না। কিন্তু স্পেনই প্রথম নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলে। আর এই অভ্যুত্থানের জেরেই নেপোলিয়নের রণকৌশল ভেস্তে যায়।
  • ২) স্পেনের রাজা চতুর্থ চার্লস ও তাঁর পুত্র ফার্দিনান্দ-কে সিংহাসনচ্যুত করে নেপোলিয়ন নিজের ভাই যোসেফ বোনাপার্টকে স্পেনের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। নেপোলিয়নের এই স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করে স্পেন। স্পেনের এই দৃষ্টান্তে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতেও জাতীয়তাবাদী জাগরণের সূচনা হয়। 
  • ৩) মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে পর্তুগাল, স্পেন মেনে নিতে চায়নি। যার ফলস্বরূপ নেপোলিয়ন এদের শায়েস্তা করতে উঠেপড়ে লাগেন। কিন্তু মহাদেশীয় ব্যবস্থা এই দুটি দেশে বিফল হলে রাশিয়াও এই ব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ রাশিয়ার সাথে নেপোলিয়নের মিত্রতা ভঙ্গ হয়। 
  • ৪) ১৮০৮-১৮১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলা উপদ্বীপের যুদ্ধে নেপোলিয়নের প্রচূর ব্যয় হয়। স্পেনের সাথে চলা এই দীর্ঘ যুদ্ধে নেপোলিয়নের সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আসলে নেপোলিয়ন অধিকৃত দেশগুলি থেকে সম্পদ নিয়ে তাঁর বিরাট সেনাদলের খরচ যোগাতেন। এইরূপ কৌশল স্পেনে কার্যকরী হয়নি। 
  • ৫) নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্পেনবাসী গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়েছিল। স্পেনবাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে একসাথে যুদ্ধ চালায়। তার ওপর স্পেনের পার্বত্যভূমিতে দ্রুত যুদ্ধ করা ফরাসি সেনার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই এই যুদ্ধ চালাতে গিয়ে নেপোলিয়নের প্রভূত অর্থ খরচ হয়। 
  • ৬) স্পেনকে দেখে অস্ট্রিয়ার মতো দেশগুলিও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্পেনের প্রতিরোধ ইউরোপের অন্য দেশগুলির মনোবল বাড়ায়। ফলে নেপোলিয়ন চারিদিক থেকে আক্রান্ত হন। তাই নেপোলিয়ন বলেছিলেন যে, ”স্পেনের ক্ষতই আমার সর্বনাশ ডেকে আনে।” ‘The Spanish ulcer ruined me’. 

স্পেনের যুদ্ধ নেপোলিয়নের পতনের কারণ

স্পেনের উপদ্বীপের যুদ্ধকে নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ বলা যায়। নেপোলিয়ন নিজেই স্বীকার করেছিলেন, ‘স্পেনের ক্ষতই আমাকে ধ্বংস করে’।

নেপোলিয়নের ধারণা ছিলনা যে, স্পেনের মতো দেশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। স্পেনবাসীর আবেগ ও জাতীয়তাবোধ এই প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছিল।

স্পেনের আন্দোলন ইউরোপের অন্য দেশগুলিকে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করে।

অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া প্রভৃতি দেশগুলি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়।

লিপজিগের যুদ্ধে জার্মানির কাছে নেপোলিয়ন পরাজয় বরণ করেন। এইভাবে ইওরোপের প্রতিটি দেশে মুক্তি সংগ্রাম দেখা দিতে শুরু করে। সমগ্র ইওরোপে নেপোলিয়নের মর্যাদা নষ্ট হয়।

উপসংহার

কন্টিনেন্টাল সিস্টেম বা মহাদেশীয় ব্যবস্থাকে ইউরোপে কার্যকর করতে চেয়েছিলেন নেপোলিয়ন।

নেপোলিয়নের এই জবরদস্তি প্রথাতে সহযোগিতা করতে রাজী হয়নি স্পেন ও পর্তুগাল।

নেপোলিয়নের স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদ স্পেনবাসীর মর্যাদা ও দেশপ্রেমে আঘাত করে। স্পেনে ঘটে যায় নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে এক গণ অভ্যুত্থান।

স্পেনের এই বিদ্রোহে পাশে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। নেপোলিয়নের প্রধান শত্রূ ইংল্যান্ড ফরাসি সেনাদলকে পরাস্ত করে স্পেন ত্যাগ করতে বাধ্য করে।

এই উপদ্বীপের যুদ্ধে ইউরোপে নেপোলিয়নের সামরিক মর্যাদা বিনষ্ট হয়।

স্পেনের কাছ থেকে মনোবল পেয়ে ইউরোপের দেশগুলি ফরাসি সাম্রাজ্যের সংগঠনে কুঠারাঘাত করে। যা আসলে নেপোলিয়নের পতনকেই তরান্বিত করেছিল। 

আরও পড়ুন : ফরাসী বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ

আশা করি ‘উপদ্বীপের যুদ্ধ’ পোস্টটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পেরেছো। পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে তোমাদের মতামত জানিও। পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার কোরো। তোমাদের মূল্যবান মতামত ভীষণ অনুপ্রেরণা জোগায়।     

2 thoughts on “উপদ্বীপের যুদ্ধ । Peninsular war in bengali”

  1. Pingback: নেপোলিয়নের পতনের কারণ গুলি কি ছিল | Napoleon Bonaparte

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!