তিতুমীর কে ছিলেন (Who was Titumir)
নমস্কার বন্ধু কেমন আছো , আশা করি খুব ভালো আছো। এই পোস্টে আলোচনা করব তিতুমীর সম্পর্কে। তিতুমীর ও তাঁর আন্দোলন সম্পর্কে বিশদে জানতে এই পোস্টটি পড়বার জন্য তোমাকে অনুরোধ করছি।
আগের পোস্টটি ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে করা হয়েছে চাইলে এটিও তুমি পড়তে পারো। আশা রাখি এই পোস্টটি পড়ে তুমি উপকৃত হবে।
পরিচিতি :
১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বারাসাত অঞ্চলের নিকটবর্তী হায়দারপুর গ্রামে জন্ম হয় তিতুমীরের। পরিবারটি ছিল একটি গৃহস্থ চাষির পরিবার। তিতুমীরের পিতার নাম ছিল সৈয়দ হাসান আলি।
জীবনের প্রথমদিকে তিতুমীর নদিয়ার বিভিন্ন জমিদারীতে লাঠিয়ালের কাজ করতেন। এই কাজের সূত্রে জমিদারী অত্যাচারের দিকটি তিনি জানতেন।
তিতুমীরের আসল নাম ছিল মীর নিসার আলি। যৌবনে মক্কায় হজ করতে গিয়ে তাঁর সাথে ওয়াহাবি নেতা সৈয়দ আহমেদের পরিচয় হয়।
তিনি ওয়াহাবি আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং ফিরে এসে সমগ্র বাংলায় ওয়াহাবি আদর্শ প্রচার করতে থাকেন।
তিতুমীরের অনুগামীগণ :
তিতুমীরের অনুগামীদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল দরিদ্র মুসলমান চাষী ও জোলা (তাঁতি) শ্রেণীর মানুষজন। এঁদের মধ্যে তিনি ওয়াহাবি আদর্শ প্রচার করেন। এমনকি এঁদেরকে নিয়েই তিতুমীর তাঁর বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।
তিতুমীরের মতাদর্শ :
তিতুমীর বলতেন, ‘ পীর পয়গম্বর মান্য করার জন্য মসজিদ তৈরির প্রয়োজন নেই , টাকা ধার দিয়ে সুদ নিতে নেই ‘ ইত্যাদি।
এছাড়াও মূর্তিপূজা, বিভিন্ন কুসংস্কার, সুদের কারবারের তিনি তীব্র বিরোধী ছিলেন।
তিতুমীর তাঁর ওয়াহাবি অনুগামীদের মাথা কামানোর ও বিশেষ ধরণের দাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিতুমীর তাঁর আন্দোলনের নাম দিয়েছিলেন শরিয়ত-ই-মহম্মদী।
তিতুমীরের ওয়াহাবি সাম্রাজ্য :
তিতুমীরের ওয়াহাবি সাম্রাজ্য বারাসাত, গোবরডাঙ্গা, টাকি, বসিরহাট সহ সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের অঞ্চল জুড়ে ছিল।
আরও পড়ো : ওয়াহাবি আন্দোলন
জমিদারের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ :
সেইসময় বাংলার পুঁড়া নামের একটি গ্রামের জমিদার ছিলেন কৃষ্ণদেব রায়। কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার।
তাঁর জমিদারী এলাকায় ওয়াহাবিদের জনপ্রিয়তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তিনি প্রত্যেক ওয়াহাবিদের দাড়ির ওপর আড়াই টাকা কর ধার্য করেন।
এছাড়াও তাঁদের কাছ থেকে জোর করে জরিমানা আদায় ও তাঁদের প্রতি দুর্ব্যবহার করেন।
এতে তিতুমীর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগামীদের এই কর দিতে নিষেধ করেন।
এর ফলে কৃষ্ণদেব রায় ক্রূদ্ধ হয়ে তিতুমীরের গ্রাম আক্রমণ করেন ও একটি মসজিদ পুড়িয়ে দেন।
বহু ওয়াহাবিদের উপর নির্যাতন করেন। তিতুমীর এর প্রতিশোধ নিতে কৃষ্ণদেব রায়ের জমিদারী আক্রমণ করেন এবং একটি মন্দির অপবিত্র করেন।
তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা :
তিতুমীরের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে অন্য জমিদারগণ ভীত হন। জমিদারদের উদ্দেশ্য ছিল তিতুমীর ও তাঁর ওয়াহাবি অনুগামীদের ধ্বংস করা।
একাজে জমিদারদের সাথে অত্যাচারী নীলকর সাহেবরাও যোগ দিয়েছিল। তিতুমীরের অনুগামীরা বহু নীলকুঠি ও তার নথিপত্র ধ্বংস করেছিলেন।
এর উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র কৃষকদের ঋণগ্রহণ সংক্রান্ত প্রমাণ লোপাট করা।
কিছুদিনের মধ্যে তিতুমীর বারাসাতের নারকেলবেড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা বা দুর্গ স্থাপন করে বারাসাত বিদ্রোহের সূচনা করেন।
তিতুমীর বাদশাহ উপাধি নেন। তিতুমীরের সেনাপতি হন ভাগিনেয় গোলাম মাসুম এবং তিতুমীরের প্রধানমন্ত্রী হন মৈনুদ্দিন নামে এক দরিদ্র জোলা।
এই কেল্লায় ইংরেজদের সাথে লড়াই করার জন্য অস্ত্র মজুত করা হয়। বাঁশের কেল্লা থেকে তিনি অত্যাচারী, মুনাফালোভী ইংরেজ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক দেন।
তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহের উদ্দেশ্য :
এই বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, অত্যাচারী হিন্দু ও মুসলমান জমিদারদের দমন করা।
সেইসাথে অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের হাত থেকে গরীব কৃষকদের বাঁচানো এবং নিষ্ঠূর ব্রিটিশ সরকারের শাসনের অবসান ঘটানো।
ইংরেজদের সাথে তিতুমীরের সংঘর্ষ :
তিতুমীরের ক্ষমতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর বিদ্রোহকে দমন করতে ইংরেজরা উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে।
১৮৩১ সালের ১৪ই নভেম্বর কর্নেল স্টুয়ার্ট এর নেতৃত্বে বিশাল ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে।
এই যুদ্ধে কামানের ব্যবহার করা হয়েছিল। ইংরেজ সৈন্যরা কেল্লার দিকে এগোনো মাত্রই ইট ও তীরবর্ষণ শুরু হয়। বহু ইংরেজ সৈন্য আহত হয়।
অবশেষে কামানের গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ উন্নতমানের সামরিক অস্ত্রের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে।
তিতুমীর যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ হারান। তাঁর সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। বাকি অনুগামীদের বন্দি করা হয়।
মূল্যায়ন :
ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ তিতুমীরের এই আন্দোলনকে ‘কৃষকদের শ্রেণীসংগ্রাম’ বলে বর্ণনা করেছেন।
জমিদার ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিতুমীরের সংগ্রামকে স্বাধীনতা সংগ্রামও বলা যায়।
তাই তিতুমীর ছিলেন বাংলার একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। এই সংগ্রামে তিতুমীরের পাশে দরিদ্র কৃষকেরা ছিল। তিতুমীর লড়েছিলেন দরিদ্র কৃষকদের স্বার্থে।
তাই বহু মানুষের কাছে তিতুমীর স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আরও পড়ো : ফরাজি আন্দোলন
” আশা করি এই পোস্টটি পড়ে তোমার ভালো লেগেছে। যদি তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভালো থেকো বন্ধু , আর ইতিহাস পড়তে থেকো “।