ওয়াহাবি আন্দোলন । Wahabi Movement in bengali

ওয়াহাবি আন্দোলন (Wahabi Movement)

নমস্কার বন্ধু কেমন আছো, আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। এই পোস্টে আলোচনা করব ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে।

এই আন্দোলনটি সম্পর্কে জানতে হলে এই পোস্টটি তোমায় অবশ্যই পড়তে হবে।

আশা করি তুমি এটি পড়ে উপকৃত হবে। আগের পোস্টটি ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কিত রোবসপিয়ার-কে নিয়ে করা হয়েছে চাইলে এটিও পড়তে পারো। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা :  

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের মধ্যে কিছু ধর্মীয় দুর্নীতি প্রবেশ করেছিল।

এই দুর্নীতি দূর করার জন্য যে ধর্মসংস্কারক আন্দোলন শুরু হয় তাকেই ওয়াহাবি আন্দোলন বলা হয়।

ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় আরবের মক্কায়আব্দুল ওয়াহাব নামে আরবের এক সংস্কারক এই আন্দোলন শুরু করেন।

তাঁর নাম থেকেই ওয়াহাবি কথাটি এসেছে। এখানে ওয়াহাবি শব্দের অর্থ হল ইসলামের নবজাগরণ

ওয়াহাবি আন্দোলনের অপর নাম হল ‘ তারিখ-ই-মহম্মদীয়া ‘ বা হজরত মহম্মদ নির্দেশিত পথ।   

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন : 

আরবের মক্কায় সূচনা হওয়ার পর ভারতেও ওয়াহাবি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে।

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ও  প্রবর্তক ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলির সৈয়দ আহমেদ

দিল্লীর পীর শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তাঁর পুত্র শাহ আব্দুল আজিজের  দিল্লীতে ইসলামের শুদ্ধিকরণ আন্দোলনের দ্বারাও সৈয়দ আহমেদ প্রভাবিত হয়েছিলেন।

সৈয়দ আহমেদের অনুপ্রেরণায় ওয়াহাবি আন্দোলন ভারতে তীব্র রূপ নিয়েছিল।

ওয়াহাবি আন্দোলনের সময়কাল :

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সময়কাল ১৮২০ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিসতৃত ছিল। 

আরও পড়োফরাজি আন্দোলন

ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য :

সৈয়দ আহমেদ প্রচার করেন যে ভারতীয় ইসলামের মধ্যে কুসংস্কার জন্ম নিয়েছে। তাই এই কুসংস্কার দূর করতে তাঁর অনুগামীদের পবিত্র কোরানের শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানান।

সেইসাথে এই আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের বিধর্মী শাসকদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন।

ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বিধর্মী শাসকগোষ্ঠী বা ইংরেজদের উচ্ছেদ করে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

সৈয়দ আহমেদ ওয়াহাবি আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে দার-উল-হারব বা বিধর্মীর দেশ থেকে দার-উল-ইসলামে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন।

ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতাবৃন্দ :    

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন সৈয়দ আহমেদ।

এছাড়াও তাঁর দুই শিষ্য বিলায়েৎ আলি এবং  এনায়েৎ আলিও ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল।

এঁরা পাটনায় ওয়াহাবি কেন্দ্রের খলিফা নিযুক্ত হয়েছিলেন।

অল্পদিনের মধ্যেই এঁদের নেতৃত্বে জৌনপুর, গৌরক্ষপুর, শাহরানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ওয়াহাবি আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন :

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াহাবি মতাদর্শ প্রচার করে সৈয়দ আহমেদ ১৮২১ সালে বাংলায় আসেন। বাংলার বারাসাত অঞ্চলের বাসিন্দা তিতুমীর সৈয়দ আহমেদের ওয়াহাবি মতাদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন।

তিতুমীরের প্রকৃত নাম হল  মীর নিসার আলি

তিতুমীর তাঁর ওয়াহাবি আন্দোলনের নাম দেন শরিয়ত-ই-মহম্মদী। তাঁর ওয়াহাবি আন্দোলন বাংলাতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

ইংরেজ শাসন ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তিতুমীর ও তাঁর অনুগামীরা মিলে নারকেলবেড়িয়া গ্রামে নির্মাণ করেছিলেন বাঁশের কেল্লা।

তিতুমীর নিজেকে স্বাধীন বাদশাহ বলে ঘোষণা করেছিলেন। তিতুমীরের আন্দোলন ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। 

ওয়াহাবি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ :

এতকিছু সত্ত্বেও ওয়াহাবি আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। এই আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি হল —

১) আন্দোলনের প্রথমদিকে শিখদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হলে হিন্দুদের মধ্যে ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। কারণ এই আন্দোলন হিন্দু সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়। 

২) ওয়াহাবিরা হিন্দুধর্ম সম্পর্কে নিন্দাবাদ শুরু করলে হিন্দুরা এই আন্দোলনের প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

৩) ওয়াহাবি আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও উৎসাহ সৃষ্টি করলেও, তা জাতীয় আন্দোলন হয়ে উঠতে পারেনি। 

৪) ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত আন্দোলন। এবং এখানে মুসলিমদের স্বার্থই দেখা হয়েছিল। কিন্তু সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর স্বার্থের দিকটি এই আন্দোলনে স্থান পায়নি।

৫) ওয়াহাবিরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করেছিল ঠিকই। কিন্তু স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের এই চেষ্টা আপামর ভারতীয়দের জন্য ছিল না। বরং তা ছিল মুসলমানদের প্রাধান্য স্থাপনের জন্য।

৬) ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমেদ বালাকোটের যুদ্ধে শিখদের হাতে নিহত হন। তাঁর এই মৃত্যুর ফলে ওয়াহাবি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে ব্রিটিশ সরকারের নিপীড়নের ফলে আন্দোলন আরও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।  

মূল্যায়ন :    

ওয়াহাবি আন্দোলন ধর্মকে কেন্দ্র করে আরম্ভ হলেও পরে তা ধর্মীয় সীমারেখা অতিক্রম করে জমিদার ও ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামে পরিণত হয়েছিল।

বলা যায় যে, ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক স্বশস্ত্র আন্দোলন। 

আরও পড়ো : সমাজসংস্কারক রামমোহন রায়

আশা করি এই পোস্টটি পড়ে তোমার ভালো লেগেছে। যদি তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভালো থেকো বন্ধু , আর ইতিহাস পড়তে থেকো  “। 

4 thoughts on “ওয়াহাবি আন্দোলন । Wahabi Movement in bengali”

  1. Shamim Mahmud

    ওহাবী আন্দোলনের নামটা আব্দুল ওহাব নজদীর নাম থেকে এসেছে। এর অর্থ পুনর্জাগরণ না। দারুল হরব অর্থ যুদ্ধক্ষেত্র, বিধর্মীর দেশ না। বিধর্মী শাসিত দেশ বলতে পারেন।

    1. ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়বার জন্য। নিশ্চই সংশোধন করার চেষ্টা করবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!