ফা – হিয়েন কে ছিলেন । Who was Fa-Hien in bengali

ফা – হিয়েন কে ছিলেন ( Who was Fa-Hien )

এমন কোনো বিদেশী পর্যটক নেই যিনি ভারতে আসেননি। বারে বারে বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটেছে এদেশে। তাঁরা ভারতে এসেছিলেন ভারতকে জানতে।

চীনা পর্যটকরাই বা খামোখা বাদ যাবেন কেনো , তাই তাঁরাও ভারতে এসে ভারতের কথা তাঁদের বইতে লিখলেন। এখন এই চীনা পরিব্রাজকদের মধ্যে প্রথম যিনি ভারতে এসেছিলেন তিনি হলেন ফা – হিয়েন।

হ্যাঁ তুমি ঠিক ধরেছো এই পোস্টে ফা – হিয়েন-র কথাই বলবো। ফা – হিয়েন ছিলেন একজন চীনা পরিব্রাজক ও  বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা ভিক্ষু। 

সেই সুদূর চীনদেশ থেকে ফা – হিয়েন ভারতে এসেছিলেন চতুর্থ শতকে। তখন ভারতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ চলছে।  

ফা – হিয়েন ভারত ভ্রমণ করে সেই বিবরণ লিখলেন তাঁর গ্রন্থে। কি লিখলেন তিনি ? কিংবা এই ফা হিয়েন কে ছিলেন ? এগুলি জানতে হলে এই পুরো পোস্টটি পড়তে হবে তোমাকে। 

জন্ম

ফা – হিয়েন চীনের শানসি প্রদেশে আনুমানিক ৩৩১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিবরণ থেকে জানা যায় যে ফা – হিয়েনের নাম প্রথমে ফা – হিয়েন ছিল না।

ফা – হিয়েনের আসল নাম ছিল কুঙ্গ। বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর এই ফা – হিয়েন নামটি রাখা হয়েছিল। 

ফা – হিয়েন শব্দের অর্থ

ফা – হিয়েন শব্দের অর্থ ” বিনয়ের প্রতিমূর্তি “। অর্থাৎ যাঁর চরিত্র নম্র , ভদ্র , শান্ত , বিনয়ে পরিপূর্ণ। 

ফা – হিয়েন কোন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন

ফা – হিয়েন চীন দেশের পরিব্রাজক ছিলেন। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে চীনের রাজধানী চ্যাংগান থেকে ভারতের দিকে রওনা হয়েছিলেন। 

চ্যাংগান-এর পুরোনো নাম ছিল হাইফেং। পরে এর নাম হয়েছিল সিয়ান।

আরও পড়ো : মৌর্য যুগের শিল্পকলা

ভয়ঙ্কর গোবি মরুভূমিকে পেরিয়ে সিল্ক রুট বা ( Silk Route ) রেশম বাণিজ্যের পথ ধরে খোটান , হিন্দুকুশ পর্বতমালাকে পার করে খাইবার পাসের ভিতর দিয়ে হেঁটে পৌঁছেছিলেন মথুরায়।

এরপর একে একে কনৌজ , পাটলিপুত্র , রাজগৃহ ,কপিলাবস্তু ( গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান ) , সারনাথ ইত্যাদি বৌদ্ধ তীর্থগুলো পরিক্রমা করেছিলেন ফা – হিয়েন। 

এই গোটা যাত্রাপথটি সম্পূর্ণ পায়ে হেঁটে এসেছিলেন ফা – হিয়েন। একবার ভেবে দেখো আজকের মতো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন ছিল না। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন ফা – হিয়েন। 

ফা – হিয়েন ভারতে এসেছিলেন কেন 

এইরকম বিপদসংকুল পথ পায়ে হেঁটে কিসের উদ্দেশ্যে ফা – হিয়েন ভারতে এসেছিলেন , এই প্রশ্নটি নিশ্চই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

ফা – হিয়েন রচিত গ্রন্থের নাম  ফো-কু-কি। এই গ্রন্থে ভারতের সেসময়কার অবস্থার কথা তেমন কিছু জানা যায় না।

বরং বেশি লিখেছেন বৌদ্ধ ধর্মস্থান ও সংঘারামগুলির বিবরণ। ফা – হিয়েনের ভারতে আসার আসল উদ্দেশ্যই ছিল গৌতম বুদ্ধের মতবাদ সংকলিত ” বিনয় পিটক ” -এর সম্পূর্ণ বিবরণটি সংগ্রহ করা।

যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি স্থল ছিল ভারত , তাই ভারতে এসে বৌদ্ধধর্মকে জানতে চেয়েছিলেন ফা – হিয়েন।

ফা – হিয়েন কার সময় ভারতে আসেন

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় ফা – হিয়েন ভারতে আসেন। 

ফা – হিয়েনের লিখিত ভারতবর্ষের বিবরণ

আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন ফা – হিয়েন। তারপর দীর্ঘ চৌদ্দ বছর ফা – হিয়েন ভারতে ছিলেন।

এই চৌদ্দ বছর ভারতের বহু নগর , গ্রাম ও বৌদ্ধ তীর্থগুলির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। 

চৌদ্দ বছরের মধ্যে ছয় বছর ( ৪০৫ – ৪১১ খ্রিস্টাব্দ ) ফা – হিয়েন ছিলেন উত্তর ভারতে।

ফা – হিয়েনের এই ভারত ভ্রমণের সঙ্গী ছিলেন তাও – চিং নামে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরে তাও – চিং চীনে ফিরে না গিয়ে ভারতবর্ষকেই নিজের ঘর বলে মেনে নিয়েছিলেন। 

সমগ্র ভারত ঘুরে ফা – হিয়েন তাঁর রচিত বই ফো-কু-কি তে লিখলেন ভারত বৃত্তান্ত। লিখলেন কি ? জানা যাক সেগুলি….

পাটলিপুত্রের বর্ণনা

চতুর্থ শতকে পাটলিপুত্র ( বর্তমান পাটনা ) ছিল গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী। ফা – হিয়েন পাটলিপুত্রে প্রায় তিন বছর ছিলেন। এখানে তিনি শিখেছিলেন সংস্কৃত।

ফা – হিয়েন তাঁর লেখায় পাটলিপুত্রকে শ্রেষ্ঠ নগরের তকমা দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন যে ,পাটলিপুত্রের লোকেরা খুবই সৎ ও দানশীল। সেইসাথে তাঁরা ভীষণ সুখী ও ধনবান। নগরের প্রতিটা মানুষ একে অপরের ভালোর চিন্তা করেন।

ধনী ব্যক্তিরা সমাজের জনহিতকর কাজে অকাতরে দান করে থাকেন। এমনকি দরিদ্র , অনাথদের থাকা – খাওয়া ও চিকিৎসার ভার পর্যন্ত নেন। 

ভারতীয়দের জীবনযাত্রার বিবরণ

ভারতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে তিনি ভারতীয়দের জীবনযাত্রাকে সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন। ফা – হিয়েন লিখছেন , – দেশের মধ্যে মানুষজন ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারতেন।

কোনো কঠোর বিধিনিষেধ ছিল না। রাজার শাসনে মৃত্যুদণ্ডের স্থান না থাকায় তিনি অপরাধ বিচার করে অপরাধীদের বড়ো বা ছোটো কোনো সাজা দিতেন।

সমাজে কেউ মদ্যপান করতো না। নিরামিষ খাদ্যের প্রতি মানুষের ঝোঁক ছিল বেশী। দেশে চোর ডাকাতের উপদ্রব না থাকায় মানুষ নিশ্চিন্তে দরজা জানালা খুলে রেখে ঘুমোতে পারতো।

এইরকম উর্বর , শস্য , শ্যামলা দেশ আর একটি নেই। এদেশের মানুষ সত্যিই অতিথিপরায়ণ। বিদেশী অতিথিদের খাতির যত্নে কোনো ত্রূটি রাখে না। 

রাজগৃহের গৃধ্রকূট পর্বতের ঘটনার বিবরণ

গৃধ্রকূট পর্বতের একটি ঘটনার বিবরণ তিনি দিয়েছেন। অনেকটা এইরকম , ফা – হিয়েনকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি এই পর্বতে রাত কাটিয়েছিলেন।

ফা – হিয়েনের বিশ্বাস ছিল যে , এই গৃধ্রকূট পর্বতে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ এসে পঞ্চভূত দেহে হয়তো দেখা দেবেন। আশীর্বাদ হিসেবে প্রার্থনা করবেন বিশ্বশান্তির। ফা – হিয়েন পুরো রাতটাই ধ্যানমগ্ন হয়ে বসেছিলেন এই পর্বতে।  

ফা – হিয়েনের চীনে প্রত্যাবর্তন

ফা – হিয়েন এসেছিলেন পায়ে হেঁটে। কিন্তু ভারত থেকে চীনে ফিরে গিয়েছিলেন জলপথে।

ফা – হিয়েনের বয়স তখন ৭৯ বছর। বাংলার তাম্রলিপ্ত ( বর্তমান তমলুক ) বন্দর থেকে প্রথমে যান সিংহলে ( বর্তমান শ্রীলঙ্কা )।

সিংহলের অনুরাধাপুর-এর বৌদ্ধ বিহারগুলি দর্শন করে সেখান থেকে যবদ্বীপ ঘুরে অবশেষে ফিরে যান চীনে। সময়টা ছিল আনুমানিক ৪১৩ খ্রিস্টাব্দ। এরপর আনুমানিক ৪২২ খ্রিস্টাব্দে চীনে ফা – হিয়েনের মৃত্যু হয়। 

আরও পড়ো : ষোড়শ মহাজনপদ

আশা করি এই পোস্টটি পড়ে ফা – হিয়েন সম্পর্কে তুমি জানতে পেরেছো। যদি এইবিষয়ে তোমার অন্য কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি Comment করে আমাকে জানাতে পারো। আর অবশ্যই পোস্টটি অন্যদের সাথে Share কোরো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে।

2 thoughts on “ফা – হিয়েন কে ছিলেন । Who was Fa-Hien in bengali”

  1. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

    ফাহিয়েন কত খ্রিষ্টাব্দে চিনে ফিরে যায়?

    1. যতদূর জানা যায় ৪১৪ খ্রিস্টাব্দে ফা-হিয়েন চীনে ফিরে গিয়েছিলেন। পোস্টটি পড়বার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!