হিউয়েন সাং কে ছিলেন । Who was Hiuen Tsang in bengali

হিউয়েন সাং কে ছিলেন ( Who was Hiuen Tsang )

৩০০ – ৯০০ খ্রিস্টাব্দ এই সময়কালের মধ্যে চীন থেকে বহু পরিব্রাজক ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। এঁরা কেউ এসেছিলেন স্থলপথে , আবার কেউ এসেছিলেন জলপথে।

উদ্দেশ্য একটাই ভারতবর্ষ -কে দেখা এবং বৌদ্ধ ধর্মকে জানা। চীনা পরিবাজকদের মধ্যে প্রথম ভারতে আসেন ফা – হিয়েন , চতুর্থ শতকে।

ফা – হিয়েনের আসবার ঠিক ২০০ বছর বাদে আরো একজন চীনা পরিব্রাজক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভারতে এলেন।

কে ইনি ? দেখোতো এনাকে চিনতে পারো কিনা। নাম তাঁর সুয়ান জাং ( Xuanzang )। 

বোধ হয় চিনতে পারলে না। এবার নামটা একটু সহজ করে বলি। নামটি হোলো হিউয়েন সাং ( Hiuen Tsang ) ।

এবার আশা করি চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না। হ্যাঁ ঠিক ধরেছো এই পোস্টে আলোচনা করবো চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং -কে নিয়ে। জানবো তাঁর সম্বন্ধে। এজন্য পুরো পোস্টটি তোমাকে পড়তে হবে।

জন্ম ও পরিচিতি 

হিউয়েন সাং ৬০২ খ্রিস্টাব্দে চীনের লুইয়াং প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মেছিলেন এক পন্ডিত পরিবারে। হিউয়েন সাং-রা ছিলেন চার ভাই।

সবার ছোটো তিনিই। তাঁর দাদা বৌদ্ধ শ্রমণ হওয়ায় , তিনি হিউয়েন সাং-কে অতি অল্প বয়সেই বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দেন। দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি চীনা ভাষায় বৌদ্ধশাস্ত্র গুলির চর্চা শুরু করেন।

সমস্যার শুরু এখানেই। বৌদ্ধ শাস্ত্রগুলির অর্থ কিছুতেই বুঝতে পারতেন না হিউয়েন সাং। কারণ সেগুলি সংস্কৃত থেকে চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। 

চীনে সংস্কৃতে সুপন্ডিত সেইসময় তেমন কেউ নেই , যিনি এই শাস্ত্রগুলির অর্থ বুঝিয়ে দেবেন তাঁকে।

তাই হিউয়েন সাং ঠিক করলেন ভারতবর্ষে গিয়ে সংস্কৃত শিখবেন। মনে যত প্রশ্ন আছে বৌদ্ধ শাস্ত্র সম্বন্ধে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বার করবেন। 

আরও পড়ুন : ফা – হিয়েন কে ছিলেন

ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা 

হিউয়েন সাং-এর বয়স তখন আঠাশ কিংবা ঊনত্রিশ। মনস্থির করলেন ভারতবর্ষ ভ্রমণে যাবেন। কিন্তু চীন থেকে ভারতে আসা তো মুখের কথা নয়। 

এর জন্য চাই চীন সম্রাটের অনুমতি। অনুমতি বলতে চীনা পাসপোর্ট। কারণ তখন নিয়ম ছিল চীন সম্রাটের বিনা অনুমতিতে চীনের ভূখণ্ড কেউ ত্যাগ করতে পারবে না।

চীন সম্রাটের অনুমতি হিউয়েন সাং পেলেন না। কিন্তু যেতে যে তাঁকে হবেই। লুকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন একদিন।

যেতে হবে বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে। 

ভয়ঙ্কর গোবি মরুভূমি পার করে , তুনহুয়ান , তুরফান অতিক্রম করে তিয়েনশান পর্বতের উত্তর দিক দিয়ে এসে উঠলেন তাশখন্দে।

এরপর সেখান থেকে বলখ , কাবুল হয়ে খাইবার পাস ধরে চলে এলেন ভারতে।

হিউয়েন সাং ভারতে আসেন ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে। তুমি কি জানো এই পুরো পথটি হেঁটে এসেছিলেন তিনি। শুনতে অসম্ভব মনে হলেও তা সম্ভব করেছিলেন হিউয়েন সাং। 

ভারতের নালন্দায় হিউয়েন সাং    

হিউয়েন সাং রাজা হর্ষবর্ধন-এর রাজত্বকালে ভারতে আসেন। প্রায় পনেরো-ষোলো বছর তিনি ভারতে ছিলেন। গিয়েছিলেন নালন্দায়।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়-র খ্যাতি সেইসময় জগৎজোড়া। হর্ষবর্ধনের সময় নালন্দা বেশ উন্নতি করেছিল। তখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন বিখ্যাত পন্ডিত শীলভদ্র

হিউয়েন সাং নালন্দায় বেশ কিছুদিন বিদ্যাচর্চা করেছিলেন। তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন নালন্দায়।

নালন্দার পন্ডিতেরা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি সেখানেই থেকে যান। কিন্তু হিউয়েন সাং সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

কারণ তাঁর যে সেখানে থাকলে চলবে না। কারণ তিনি ভারতের সংস্কৃতি , ধর্ম প্রভৃতি সম্পর্কে জেনে সেই জ্ঞান নিয়ে যাবেন চীনদেশে।

হিউয়েন সাং-এর বিবরণ 

সুয়ান জাং বা হিউয়েন সাং -এর লেখা গ্রন্থের নাম ‘ সি-ইউ-কি ‘। কি লিখেছেন এতে তিনি ? জেনে নেওয়া যাক। হর্ষবর্ধন ,তাঁর রাজত্বকাল , ভারতের বিভিন্ন নগর ,বন্দর প্রভৃতির বিবরণ এই বইটিতে আছে।

তিনি লিখেছেন — হর্ষবর্ধন ( হর্ষবর্ধন শিলাদিত্য উপাধি নিয়েছিলেন ) থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশের রাজা ছিলেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী শাসক ছিলেন তিনি।

রাজ্যের সর্বত্র ঘুরে নিজের শাসন সম্পর্কে প্রজাদের মতামত গ্রহণ করতেন। হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন দানশীল রাজা।

গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গমে অবস্থিত প্রয়াগে পাঁচ বছর অন্তর এক বিরাট উৎসবের আয়োজন করতেন হর্ষবর্ধন। প্রয়াগ ‘ দানক্ষেত্র ‘ নামে পরিচিত ছিল।

হিউয়েন সাং এই উৎসব নিজের চোখে দেখেছিলেন। প্রয়াগে বিগত পাঁচবছরের জমানো সমস্ত অর্থ হর্ষবর্ধন ভিক্ষু , দরিদ্র , অনাথ দের মধ্যে বিলিয়ে এক কাপড়ে রাজধানীতে ফিরে আসতেন।

হিউয়েন সাং কে সম্মান জানাতে হর্ষবর্ধন কনৌজে একটি ধর্ম সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। একটি সোনার বুদ্ধমূর্তিকে সম্মেলনের স্থানে শোভাযাত্রা করে নিয়ে আসা হয়েছিল।

রাজা হর্ষ নিজে এই শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন। হিউয়েন সাং এই সভায় মহাযান বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে ভাষণ দেন। 

তাম্রলিপ্ত , মহাবলীপুরম , কাবেরীপত্তনম ছিল সেসময়কার ব্যস্ত বন্দর। বারাণসী ও কনৌজ সমৃদ্ধ নগর ছিল। পাটলিপুত্র , শ্রাবস্তী , কপিলাবস্তু প্রভৃতি হিউয়েন সাং-র বিবরণে অবক্ষয় নগর ছিল।

হিউয়েন সাং-এর চীনে প্রত্যাবর্তন 

কামরূপ ( বর্তমান আসাম ) রাজ্যে গিয়ে হিউয়েন সাং তাঁর ভারত ভ্রমণ শেষ করেন। প্রায় পনেরো থেকে ষোলো বছর ভারতে কাটিয়ে স্থলপথেই চীনে ফিরে যান।

ভারত থেকে প্রায় ৬৫৭ খানা পুঁথি , অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি ও রেশমের কাপড়ের ওপর আঁকা আলেখ্য গুলি তিনি নিয়ে যান।

চীন সম্রাট তাঁকে ভারতে যাওয়ার অনুমতি দেননি।

কিন্তু যখন আনুমানিক ৬৪৬ বা ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে চীনের নগরে এসে তিনি উপস্থিত হন , চীন সম্রাট সত্যিই হিউয়েন সাং কে সেদিন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। 

ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠায় হিউয়েন সাং-এর ছবিটিতে পিঠে বাঁধা একটি অংশ আমাদের চোখে পড়ে। ওই অংশটি হোলো বেতের তৈরী একধরণের ঝুড়ি।

যাতে ছিল বেশ কিছু বই , পুঁথি ও যাত্রাপথের রসদ। আর হিউয়েন সাং-এর মাথার সামনে ঝুলে থাকা অংশটি ছিল বাতি।

অন্ধকারে পথ চলতে ও বই পুঁথি পড়তে বাতির আলো হিউয়েন সাং-কে সাহায্য করতো। হয়তো আজও এই পথে হিউয়েন সাং হেঁটে চলেছেন। আসছেন আবার আমাদের ভারতে। 

আরও পড়ুন : ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাল

আশা করি এই পোস্টটি পড়ে হিউয়েন সাং সম্পর্কে তুমি অনেক তথ্য জানতে পেরেছো। যদি এবিষয়ে তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি Comment করে আমাকে জানাতে পারো। আর অবশ্যই পোস্টটি অন্যদের সাথে Share কোরো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!