রণজিৎ সিংহের কৃতিত্ব । Ranjit Singh in bengali

রণজিৎ সিংহের কৃতিত্ব ( Ranjit Singh )

রণজিৎ সিংহের ( Ranjit Singh ) কৃতিত্ব আলোচনা প্রসঙ্গে শিখ ধর্মের উত্থান তথা শিখ সাম্রাজ্যের উত্থানের কথা উল্লেখ করতেই হয়। গুরু নানক ছিলেন শিখ ধর্মের প্রবর্তক। শিখ সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে তাঁর সময় থেকেই।

১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের তালবন্দিতে গুরুনানক জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রচারিত শিখধর্মে ধর্ম সহিষ্ণুতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বর্জন করা হয়েছে কুসংস্কার ও জাতিভেদকে।

গুরু নানকের মৃত্যুর পর গুরু অর্জুনের আগে পর্যন্ত শিখ গুরুদের সাথে মুঘলদের ভালো সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে সাহায্য করতে গিয়ে জাহাঙ্গীর কর্তৃক গুরু অর্জুনের মৃত্যুদণ্ড হয়।

এর পরই শিখজাতি হয়ে ওঠে মুঘলদের শত্রূ। শিখ সম্প্রদায় নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য সামরিক শক্তির প্ৰয়োজনীয়তা অনুভব করে।

শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুরকেও সম্রাট ঔরঙ্গজেব মৃত্যুদণ্ড দেন। মুঘলদের সাথে যুদ্ধে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শিখদের দশম ও শেষ গুরু গোবিন্দ সিংহ মৃত্যুবরণ করলে গুরুপদ শেষ হয়।

কিন্তু মুঘলদের সাথে শিখদের লড়াই জারি থাকে। কিন্তু সেই লড়াইয়ে জাতীয় ঐক্যের অভাব ছিল।

শিখ সম্প্রদায় নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। অবশেষে গুরু গোবিন্দ সিংহের প্রতিষ্ঠিত খালসা-কে ১২ টি মিসলে ভাগ করে দেওয়া হয়।

এইরকমই একটি শিখ মিসলের নায়ক তথা নেতা ছিলেন রণজিৎ সিংহ। শিখ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রঞ্জিৎ সিংহের উত্থান ঘটে। সেইসাথে রণজিৎ সিংহের কৃতিত্বেরও সূত্রপাত হয়। 

Ranjit Singh

শিখ মিসল ( Ranjit Singh )

এখন প্রশ্ন হোলো এই শিখ মিসল কি ? শিখ মিসলগুলির নাম কি ? আর কারাই বা ছিলেন মিসলগুলির সর্দার ?

১৬৯৯ খ্রিস্টাব্দে বৈশাখী দিনে শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহ ‘খালসা‘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খালসা ছিল শিখ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।

গুরু গোবিন্দ সিংহ ঘোষণা করেছিলেন যে, গুরুই হোলো খালসা; খালসা-ই হোলো গুরু।

কিন্তু মুঘলদের সাথে যুদ্ধে গুরু গোবিন্দের মৃত্যু হলে শিখদের লড়াই কিছুটা স্তিমিত হলে খালসাও দূর্বল হয়।

গুরু গোবিন্দ সিংহের মৃত্যুর পর বান্দা নামে একজন নিজেকে গুরু বলে প্রচার করেন ও শিখদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন।

কিন্তু বান্দার মৃত্যুর পর শিখ সম্প্রদায় পুনরায় নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।

এইসময় মারাঠা-মুঘল-আফগানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। এই সুযোগে শিখ খালসা বাহিনী হারানো মনোবল ফিরে পেয়ে পাঞ্জাবে শিখ জাতির স্বাধীন রাজ্য স্থাপনে তৎপর হয়ে ওঠে।

সাহারানপুর, আটক, সুলতানপুর ইত্যাদি বিস্তীর্ণ অংশে খালসা রাষ্ট্র গঠন হয়েছিল।

খালসা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও সঠিক পরিচালনার জন্য অমৃতসরে এক সম্মেলনে খালসাকে ১২ টি ‘শিখ মিসলে’ ভাগ করা হয়। মিসলের অর্থ ছিল সকলে সমান।

১২ টি মিসল বারোজন জাঠেদারের অধীনে ছিল। এগুলি হোলো –

      মিসলের নাম                মিসলের জাঠেদারগণ 

১) আলুওয়ালিয়া মিসল –             যশ সিংহ 

২) ফৈজল পুরিয়া মিসল –         কাপুর সিংহ 

৩) সুকারচাকিয়া মিসল –           নাউব সিংহ 

৪) ওয়ালিয়া মিসল –                দাসৌন্ধা সিংহ 

৫) ভাঙ্গি মিসল –                      হরি সিংহ 

৬) কানহাইয়া মিসল –             জয় সিংহ 

৭) নাককাইয়া মিসল –             হীরা সিংহ 

৮) দালে ওয়ালিয়া মিসল –      গুলাব সিংহ 

৯) শাহিদিয়া মিসল –               দীপ সিংহ 

১০) সিংঘিয়া মিসল –             কারোরা সিংহ 

১১) রামপাডিয়া মিসল –         নন্দ সিংহ 

১২) খুলকিয়া মিসল –             আগা সিংহ 

আরও পড়ুন : শিখ ধর্মের উত্থান

রণজিৎ সিংহের উত্থান ( Ranjit Singh )

১) জন্ম

১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা নামক স্থানে রণজিৎ সিংহ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহন সিংহ ছিলেন সুকেরচাকিয়া মিসলের নেতা।

জানা যায় যে, শৈশবে রণজিৎ সিংহ বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন।

শিক্ষার সুযোগ রণজিৎ সিংহের জীবনে না ঘটলেও ইতিহাসের পাতায় নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত প্রতিভাবলে।

পিতার মৃত্যুর পর মাত্র বারো বছর বয়সে রঞ্জিৎ সিংহ সুকেরচাকিয়া মিসলের নেতা তথা দলপতি হন।

শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম, বুদ্ধি, সাহস, কৌশল, ধৈর্য দ্বারা তিনি শিখ রাজ্যের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিপতি হয়েছিলেন।

পূর্বে ভাগ হওয়া বারোটি মিসলকে ঐক্যবদ্ধ করে রণজিৎ সিংহ পাঞ্জাবে শিখ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

২) অখণ্ড শিখ সাম্রাজ্য গঠন 

বারোটি ভাগে বিভক্ত মিসলগুলির মধ্যে ক্রমশ শুরু হয়েছিল অন্তর্দ্বন্দ্ব। মিসলগুলির মধ্যে ঐক্যবোধ, সদ্ভাব কমতে শুরু করে। 

রণজিৎ সিংহ সুকেরচাকিয়া মিসলের দলপতি হওয়ার পর মিসলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক পতাকার তলায় নিয়ে আসেন।

পাঞ্জাবের এক বৃহত্তম অংশে অখণ্ড বা অখিল শিখ সাম্রাজ্য গঠনের চেষ্টায় ব্রতী হন। এই অখণ্ড শিখ সাম্রাজ্য গঠনের স্বপ্ন ছিল গুরু গোবিন্দ সিংহের।

কিন্তু তাঁর সেই অপূর্ণ স্বপ্নকে সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব রণজিৎ সিংহ নিজের কাঁধে তুলে নেন। ঝগড়া বিবাদ দূর করে ভাঙ্গি মিসলের হাত থেকে অমৃতসর, লুধিয়ানা রক্ষা করে নিজের রাজ্যভুক্ত করেন রঞ্জিৎ সিংহ।

শতদ্রু নদী পর্যন্ত তাঁর রাজ্যসীমা বৃদ্ধি পায়। মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।

কাবুলের অধিপতি জামান শাহ-র কাছ থেকে রণজিৎ সিংহ ‘মহারাজা’ উপাধি পান। মহারাজা রণজিৎ সিংহ উপাধি পেলেও নিজের পাগড়িতে সম্রাটের কোনো প্রতীক ব্যবহার করতেন না।

এমনকি গুরু নানকের নামেই মুদ্রা প্রকাশ করে নাম দিয়েছিলেন ‘নানকশাহী মুদ্রা‘। শুধু লক্ষ্য একটাই ছিল অখিল শিখ সাম্রাজ্য গঠন।   

৩) ইংরেজদের সাথে সম্পর্ক : অমৃতসরের সন্ধি

কিছু মিসলের সর্দার বা জাঠেদারগণ রণজিৎ সিংহের রাজ্যসীমা বিস্তার দেখে আশঙ্কিত হন। শিখ মিসলগুলিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁরা ইংরেজদের শরণাপন্ন হয়।

এদিকে নেপোলিয়নের দ্বারা ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা মাথাচাড়া দিয়েছিল।

এইঅবস্থায় ফরাসি আক্রমণ ঠেকাতে ও রণজিৎ সিংহের সাথে মিত্রতা করতে চার্লস মেটকাফকে রণজিৎ সিংহের দরবারে পাঠানো হয়।

রণজিৎ সিংহ শিখ রাজ্যগুলির ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তারের দাবীতে ইংরেজদের কাছে অনড় থাকেন। যুদ্ধের পথে না গিয়ে ইংরেজদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।

কারণ রঞ্জিৎ সিংহ উপলব্ধি করেছিলেন ইংরেজদের সাথে সংঘাত এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ইংরেজদের সাথে সুদীর্ঘ আলোচনার পর একটি আত্মরক্ষামূলক চুক্তি সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অবশেষে ১৮০৯ সালে রণজিৎ সিংহ ও ইংরেজদের মধ্যে ‘অমৃতসরের সন্ধি‘ ( Treaty of Amritsar ) স্বাক্ষরিত হয়। অমৃতসরের সন্ধির শর্ত ছিল –

১) শতদ্রু নদী রণজিৎ সিংহের রাজ্যের পূর্ব সীমারেখা হিসেবে চিহ্নিত হয়। 

২) শতদ্রুর পূর্ব তীরে অবস্থিত শিখ মিসলগুলির ওপর রণজিৎ সিংহ হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকেন। 

৩) সন্ধির শর্ত অনুযায়ী স্থির হয়, শতদ্রুর পূর্ব তীরের শিখ মিসলগুলির ওপর ব্রিটিশ প্রাধান্য স্থাপিত হবে। এমনকি সেখানে ইংরেজ সৈন্য পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়। 

তবে এই সন্ধির ফলে ব্রিটিশ প্রাধান্য স্থাপিত হলে শিখসম্প্রদায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। কারণ শতদ্রুর পূর্ব তীর বরাবর অখন্ড শিখ রাজ্য বিস্তারের সম্ভাবনা অধরাই থেকে যায়।

অন্যদিকে এই সন্ধির ফলে ইংরেজরা লাভবান হন। তাঁদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

আসলে অমৃতসরের সন্ধি ছিল ইংরেজদের মস্তিষ্ক প্রসূত এক কৌশল। আর শিখজাতির পক্ষে এক ক্ষতিকর আপোষ নীতি।

সবমিলিয়ে অমৃতসরের সন্ধির ব্যর্থতার দিকটি প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। 

রণজিৎ সিংহের রাজ্যবিস্তার : ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তি

অমৃতসরের সন্ধির ফলে অখন্ড শিখ সাম্রাজ্য গঠনে ছেদ পড়লেও রণজিৎ সিংহ কিন্তু দমে যাননি। রাজ্যবিস্তারের কাজে তিনি মন দেন।

১৮০৯-১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কাংড়া, আটক, মুলতান, কাশ্মীর, পেশোয়ার দখল করেন। পাঞ্জাব থেকে খাইবার গিরিপথ ও সিন্ধুদেশের সীমান্ত পর্যন্ত তাঁর রাজ্য বিস্তার ঘটে।

সিন্ধু উপত্যকায় রণজিৎ সিংহের অগ্রগতি ঘটলে গভর্নর জেনারেল বেন্টিঙ্ক দূত হিসেবে আলেকজান্ডার বার্নেসকে দরবারে পাঠান।

বেন্টিঙ্ক ও রণজিৎ সিংহের মধ্যে একটি নতুন মৈত্রী চুক্তি স্থাপিত হয়।

এই মৈত্রী চুক্তির সাত বছর পর ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে কাবুলের শাহ সুজা, রণজিৎ সিংহ ও ইংরেজদের মধ্যে ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

শাহ সুজাকে সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এছাড়াও এই চুক্তির ফলে প্রথম ইঙ্গ আফগান যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।

ভারতীয় ঐতিহাসিক এন. কে. সিংহ-র মতে, ‘রণজিৎ সিংহ ইংরেজদের সাথে মৈত্রী চুক্তির ফলে নিজে ঘোড়া হয়েছেন এবং ইংরেজকে ঘোড়সওয়ারে পরিণত করেছেন’।

কৃতিত্বের দিক 

ভারতবর্ষের ইতিহাসে মহারাজা রণজিৎ সিংহ এক বিশিষ্ট নাম ও ব্যক্তিত্ব। রণজিৎ সিংহকে ‘পাঞ্জাব কেশরী’ বা ‘শের-ই-পাঞ্জাব’ নামে ডাকা হোতো।

সিংহ বনের রাজা, নিজের সাহস, শৌর্য-র দ্বারা বনের পশুরাজ হিসেবে খ্যাত হয়েছে। তেমনি রণজিৎ সিংহ তাঁর সাহস, শৌর্য, বুদ্ধি, পরিশ্রম দিয়ে এক অখণ্ড শিখ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে প্রয়াসী ছিলেন।

তাই ইতিহাসে তাঁর অবাধ বিচরণ সিংহের ন্যায়। ‘সব লাল হো জায়গা‘ এই বিখ্যাত উক্তিটিও করেছিলেন রণজিৎ সিংহ স্বয়ং।

নিজের প্রতিভায় বিচ্ছিন্ন ও বিবাদে জড়িয়ে থাকা শিখ মিসলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনে তৎপর ছিলেন। তাই তাঁকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক বলা যায়। 

রণজিৎ সিংহের চরিত্রে যথেষ্ট দৃঢ়তা থাকায় তাঁর সামরিক প্রতিভা ফুটে উঠেছিল। একজন শাসক ও সামরিক সংগঠক রূপে মহারাজা রণজিৎ সিংহ বেশ দক্ষ।

পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও শুধুমাত্র প্রতিভা, সাহস, বাস্তববোধের দ্বারা নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ছিলেন একজন প্রজাহিতৈষী শাসক।

তৎকালীন সময়ে তাঁর সেনাবাহিনী ছিল যথেষ্ট শক্তিধর।

সহজ সরল সাদামাটা জীবনযাত্রায় রণজিৎ সিংহ অভ্যস্ত ছিলেন।ইংরেজদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিগুলির ফলে তাঁর অখণ্ড শিখ রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল।

তা নাহলে অনায়াসে রণজিৎ সিংহের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে সক্ষম ছিল। রঞ্জিৎ সিংহের সাহস ও উদ্যমের প্রেক্ষিতে ফরাসি পর্যটক জ্যাঁকেমো তাঁকে ‘নেপোলিয়নের ক্ষুদ্র সংস্করণ‘ বলেছেন। 

রণজিৎ সিংহের ত্রূটি   

এতকিছু সত্বেও রণজিৎ সিংহের বেশকিছু ত্রূটি লক্ষ্য করা যায়।

১) ইংরেজদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় তিনি দিতে পারেননি। ইংরেজদের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলিতে তাঁর দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। 

২) রণজিৎ সিংহের কূটনৈতিক পরাজয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পথ প্রশস্ত করেছিল।

৩) গুরু গোবিন্দ সিংহের শিখরাজ্য গঠনের অপূর্ণ স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব রণজিৎ সিংহ নিজে নিলেও তাঁর রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত ছিল দুর্বল ও অসংগঠিত। 

৪) খালসা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থাও রণজিৎ সিংহ করেননি। 

৫) অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষর করা রণজিৎ সিংহ-র পক্ষে কার্যত ছিল ইংরেজদের সাথে একপ্রকার আপোষ রফা। এর ফলে শিখজাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাঁদের শিখরাজ্য গঠনের স্বপ্ন কার্যত বিলীন হয়ে যায়।

মূল্যায়ণ  

বিবদমান শিখ মিসলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র গড়বার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রণজিৎ সিংহ। এক্ষেত্রে তিনি কতকটা সফল, আবার কতকটা ব্যর্থ।

তবে শিখগুরু গোবিন্দ সিংহের অসমাপ্ত কাজকে নিজের দায়িত্বে পূর্ণ করার পণ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর সাহসী, দৃঢ়, পরিশ্রমী মনোভাব শিখদের উদ্বুদ্ধ করেছিল এক নতুন চেতনায়।

একথা স্বীকার করতেই হয় যে, তাঁর আমলে শিখ শক্তির রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও জাতীয় মর্যাদা চরম সীমায় উপনীত হয়েছিল।  

আরও পড়ুন : শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান 

আশা করি রণজিৎ সিংহের কৃতিত্ব সম্পর্কে এই পোস্টটি পড়ে তোমারা অনেক কিছু জানতে পেরেছো। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে তোমাদের মূল্যবান মতামত জানিও। আর পোস্টটি অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার কোরো। তোমাদের মূল্যবান মতামত আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা দেয়। ভালো থেকো বন্ধুরা। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!