শাহজাহানের কৃতিত্ব ( Shah Jahan achievements )
Shah Jahan, শাহজাহানের কৃতিত্ব, চরিত্র বিশ্লেষণ ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন মুঘল শাসক, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
শাহজাহানের রাজত্বকাল ভারত ইতিহাস তথা মুঘল ইতিহাসে সুবর্ণযুগ নামে খ্যাত। সত্যিই শাহজাহান ছিলেন একজন প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি।
১৫৯২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারি লাহোরে শাহজাহানের জন্ম হয়। তাঁর মাতা ছিলেন রাজা উদয়সিংহের কন্যা রাজপুত রাজকুমারী জগৎ গোঁসাই।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর শাহজাহান যোগ্য পুত্র হিসেবে সিংহাসনে বসেন।
তাঁর সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় জাহাঙ্গীরকে আকর্ষিত করেছিল।
জাহাঙ্গীর তাঁর পুত্র শাহজাহানের সামরিক কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘শাহজাহান’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ফার্সি ভাষা অনুযায়ী জাহাঙ্গীর এই নাম রেখেছিলেন।
শাহজাহান কথাটির অর্থ পৃথিবীর রাজা। এই নামের আগে শাহজাহান পরিচিত ছিলেন খুররম নামে।
একজন দক্ষ মুঘল সামরিক শাসক হিসেবে তাঁর তরবারি গর্জে উঠেছে, একথা যেমন সত্য।
আবার স্থাপত্যশিল্পেও পরিচয় দিয়েছেন অসাধারণ সৌন্দর্য প্রীতির। এরজন্য শাহজাহান পরিচিত হয়েছেন The prince of builders নামে।
এইসবের দরুন শাহজাহানের কৃতিত্ব ও চরিত্র ইতিহাস তথা ঐতিহাসিকদের কাছে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।
শাহজাহানের গুণাবলী বা কৃতিত্বের দিক
মুঘল সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট ছিলেন শাহজাহান। ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জানুয়ারি পিতার দেওয়া ‘শাহজাহান’ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন।
১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর শাসনকাল ভারত ইতিহাসের এক গৌরবজ্জ্বল অধ্যায়।
তিনি আগ্রা থেকে দিল্লীতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন। এরপর বিভিন্ন দিকে তাঁর গুণাবলী, কৃতিত্ব প্রকাশিত হতে শুরু করে।
১) দাক্ষিণাত্য নীতি
পিতামহ আকবর এবং পিতা জাহাঙ্গীরের সম্প্রসারিত সাম্রাজ্যের সীমা শাহজাহানের সময় বৃদ্ধি পায়।
পিতামহ ও পিতার মতোই তিনিও দাক্ষিণাত্য অভিযান করেছিলেন। জাহাঙ্গীর নিজের আমলে দাক্ষিণাত্যে আহম্মদনগর বিজয়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এমনকি বিজাপুর ও গোলকুণ্ডাও অধিকার করতে পারেননি। তাঁর বিজয়ের কাজ অসমাপ্তই রয়ে যায়।
কিন্তু শাহজাহানের হাত ধরে মুঘলদের দাক্ষিণাত্য নীতি সফল হয়।
আহম্মদনগর, বিজাপুর, গোলকুন্ডা মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। আকবরের সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি শাহজাহানের আমলে পরিণতি লাভ করে।
আরও পড়ুন : শিখ ধর্মের উত্থান
২) পর্তুগিজদের দমন
পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হলে ভারতে পর্তুগিজ বণিকদের আগমনের সূচনা হয়।
পর্তুগিজদের পরের প্রতিনিধি আলবুকার্ক ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন স্থায়ী সাম্রাজ্য গঠনে।
এরপর ধীরে ধীরে দিউ, গোয়া, দমন, সুরাট, বাংলার হুগলি প্রভৃতি জায়গা পর্তুগিজরা দখল করে।
আকবর ও জাহাঙ্গীর দুজনেই তাঁদের আমলে পর্তুগিজদের ওপর সদয় হয়ে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেন। কিন্তু পর্তুগিজরা শান্ত থাকবার জাতি ছিল না।
বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্থানে লুণ্ঠন, দাস ব্যবসা, জোর করে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করা, জোর করে শুল্ক আদায় তাঁরা করতে থাকে।
এবিষয়ে ঢাকার শাসক কাশিম খান শাহজাহানকে পর্তুগিজদের তাড়ানোর সুপারিশ জানান। শাহজাহান এঁদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নেন এবং পর্তুগিজ সমস্যা নির্মূল করেন।
বিধর্মী জলদস্যু পর্তুগিজদের হাত থেকে বাংলার মান-ইজ্জত রক্ষা করেন শাহজাহান।
৩) সুদৃঢ় মুঘল প্রশাসনব্যবস্থা
মুঘল প্রশাসনব্যবস্থা প্রথম থেকেই ভারতে সুদৃঢ় ছিল। আকবরের আমলে তা আরো পূর্ণতা পেয়েছিল।
শাহজাহানের আমলেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রশাসনব্যবস্থা দৃঢ় থাকায় শাহজাহানের রাজত্বকালে কোনো বিদেশী শক্তি ভারত আক্রমণ করতে সাহস পায়নি।
এমনকি রাজ্যের ভিতরেও কোনো বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিতে পারেনি।
শাহজাহানের আমলে দাক্ষিণাত্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুঘল শাসনের অধীনে আসায় সেখানেও প্রশাসনব্যবস্থা দৃঢ় ছিল।
অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজ করায় শাহজাহানের আমলে ভারতবর্ষ ছিল সুখী ও সমৃদ্ধ।
৪) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি
দেশের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা থাকায় দেশের ভেতরে ও বাইরে দুই বাণিজ্যই বিকাশ লাভ করে।
এইসময় সুরাট হয়ে ওঠে বহির্বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল। ভারতের সাথে পারস্যের মাধ্যমে ইউরোপের সঙ্গেও বাণিজ্য স্থাপন হয়।
ভারতের পণ্য রপ্তানির ফলে মুঘল রাজকোষে প্রচূর অর্থের আগমন ঘটে। দেশের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি হয়। এর সাথে কৃষি ও কৃষকের অভাবনীয় সাফল্য বৃদ্ধি পায়।
ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড তাই শাহজাহানের রাজত্বকালকে ‘Period of agrarian tranquility’ বলেছেন।
মুঘল দরবারি ঐতিহাসিক আবদুল হামিদ লাহোরির রচনা থেকে জানা যায় শাহজাহান কৃষির উন্নতির জন্য সেচ পরিকল্পনা নিয়েছিলেন।
রাভি নদীর খাল খনন করা হয়েছিল। কৃষির উন্নতির ফলে শাহজাহানের আমলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
মুঘল স্থাপত্য ও সংস্কৃতিতে কৃতিত্ব
শাহজাহানের রাজত্বকাল ভারত-ইতিহাসে সুবর্ণযুগ নামে পরিচিত। বিশেষ করে স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষের জন্যই সুবর্ণযুগের তকমা দেওয়া হয়েছে।
শাহজাহান ছিলেন একজন মহান স্থপতি। তাই তাকে ‘the prince of builders’ বলা হয়েছে।
মুঘল স্থাপত্যে শাহজাহানের কৃতিত্ব সত্যিই উল্লেখের দাবি রাখে।
১) স্থাপত্য
পিতা জাহাঙ্গীরের আমলে চিত্রশিল্পের উন্নতি ঘটেছিল। কিন্তু শাহজাহানের আমলে মুঘল স্থাপত্য শিল্প অন্য রূপ পেয়েছিল।
শাহজাহানের আমলের বেশির ভাগ স্থাপত্যের কাজই করা হয়েছিল শ্বেত পাথর দিয়ে। বলা যায় সৌধ নির্মাণ করাই ছিল তাঁর নেশা।
দিল্লী নগরীর নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করেছিলেন ‘শাহজাহানাবাদ‘।
শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শনগুলো আগ্রা, দিল্লী, লাহোর দুর্গের ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে।
লাল পাথরের পরিবর্তে সাদা মার্বেল পাথরের ব্যবহার করে তাক লাগিয়েছেন তিনি।
আগ্রার দুর্গে ও দিল্লির লালকেল্লায় শাহজাহান দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, মতি মসজিদ, শিসমহল ইত্যাদি নির্মাণ করেছিলেন। দেওয়ান-ই-আম ও দেওয়ান-ই-খাস অপূর্ব শিল্পসুষমায় মন্ডিত।
মার্বেল পাথরের তৈরী শিসমহল, রঙমহল তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি। এখানে ক্লান্তি অবসাদ কাটিয়ে পরিবারের সাথে আনন্দ উপভোগ করে সময় কাটাতেন সম্রাট।
এছাড়াও জামি মসজিদ, মুসাম্মন বার্জ শাহজাহান নির্মিত নয়ন মনোহর সৌধ।
আগ্রা দুর্গের অনুকরণে দিল্লিতে তিনি নির্মাণ করেছিলেন লালকেল্লা। লাল বেলেপাথরে তৈরী এটি।
সুবিশাল সৌধটি শাহজাহানের অহংকার ও গর্ব। ২৬শে জানুয়ারির প্রজাতন্ত্র দিবস ও ১৫ই আগস্টের স্বাধীনতা দিবসের গৌরব বহন করে চলেছে লালকেল্লা।
দিল্লি যে আজও ভারতের রাজধানী।
২) তাজমহল নির্মাণ
সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি এবং কৃতিত্বের অন্যতম ফসল হোলো সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল ( Tajmahal ) নির্মাণ।
১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাজমহল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।
প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের মৃত্যুর পর নিজের প্রেমকে কালজয়ী করে রাখার উদ্দেশ্যে এই নির্মাণ। শাহজাহানের সৃষ্টি এই অপূর্ব শিল্পস্থাপত্য আজও পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে পরিগণিত হয়।
যমুনার তীরের এই স্মৃতিসৌধ প্রত্যেকের মনে বিস্ময় বোধ তৈরী করে। বাইশ বছর ধরে প্রায় তিনকোটি টাকা ব্যয়ে শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের রক্ত ঝরানো পরিশ্রমের ফসল এই তাজমহল।
পারস্যের শিরাজ-র অধিবাসী বিশিষ্ট স্থপতিকার ওস্তাদ ইশা তাজমহলের নক্শা তৈরী করেছিলেন এবং ছিলেন প্রধান স্থপতি।
ইন্দো-পারসিক শিল্পসুষমার ধারার স্পষ্ট ছাপ তাজমহলে বিদ্যমান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘এটি হোলো সম্রাটের দুঃখ বিগলিত হৃদয় থেকে নিঃসারিত অশ্রুবিন্দু ‘।
শ্বেতশুভ্র মার্বেল পাথরের তৈরী তাজমহলের অনুপম সৌন্দর্য অমর ও শাশ্বত। এছাড়াও দেওয়ান-ই-আম এর ময়ূর সিংহাসন শাহজাহানের অন্যতম শিল্পকীর্তি।
পারস্যের বিখ্যাত শিল্পী বেবাদল খান ময়ূর সিংহাসন নির্মাণ করেছিলেন। সিংহাসনটির বাহন ছিল একটি বহুমূল্য রত্নখচিত ময়ূর।
দেওয়ান-ই-খাসের খোদিত একটি উক্তি, ‘আগর ফিরদৌস বর রু-ই জমিন আস্ত, হামিন আস্ত, উ-হামিন আস্ত, উ-হামিন আস্ত ‘।
উক্তিটি দিল্লি, আগ্রার সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর সেই অর্থে শাহজাহান ছিলেন সত্যিকারের The prince of builders.
৩) সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক
শাহজাহানের রাজত্বকাল সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্যও বিখ্যাত। তিনি নিজে ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক। নিজে বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন।
ফার্সি, তুর্কি, আরবী, হিন্দি ভাষা বলতে ও লিখতে পারতেন।
কাব্য, সংগীত, নাচ, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান শাহজাহানের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপক প্রসারলাভ করেছিল। হিন্দু শাস্ত্রীয় সংগীতকে শ্রদ্ধা করতেন।
হিন্দুকবি সুন্দরদাস, চিন্তামণি, কবীন্দ্র আচার্য-র মতো গুণী বিদগ্ধ ব্যক্তি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
শাহজাহান কর্তৃক কবি জগন্নাথ ‘মহাকবি রাই‘ উপাধি লাভ করেছিলেন। সঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের জামাতা লাল খান ছিলেন শাহজাহানের অত্যন্ত স্নেহভাজন।
শাহজাহানের হস্তলিপি ছিল অতি সুন্দর।
মুন্তাখাব-উল-লুবাব রচয়িতা কাফী খাঁ, পাদশাহনামা ও শাহজাহাননামা রচয়িতা আবদুল-হামিদ-লাহোরী দের মতো গুণীজনদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শাহজাহান।
শাহজাহানের চরিত্র
শাহজাহানের কৃতিত্বের পাশাপাশি চরিত্রের দিকটিরও আলোচনা প্রয়োজন।
১) জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর পত্নী নুরজাহান শাহজাহানের সিংহাসনে বসা নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও শাহজাহান তাঁর উদার মনোভাবের দরুন নুরজাহানের প্রতি সদয় ব্যবহার করেন।
২) মুঘল স্থাপত্য নির্মাণে শাহজাহানের চরিত্রের সৌখিন ও শিল্পরসিক দিকটি ফুটে ওঠে।
৩) নিজের পুত্রদের প্রতি শাহজাহানের অতিরিক্ত পুত্র বাৎসল্য দিকটি তাঁর চরিত্রের অন্যতম দিক। পুত্রদের মধ্যে উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব চলাকালীনও তাঁর স্নেহ ছিল অটুট।
৪) ধর্ম ব্যাপারে শাহজাহান ছিলেন সহনশীল। ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দিকটি তাঁর চরিত্রের বড়ো দিক। জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তনের করার তিনি কোনো চেষ্টাই দেখাননি।
৫) নিজে বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। নিজের রাজসভায় গুণী ও বিদগ্ধ ব্যক্তিবর্গকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এইপ্রকার শিক্ষানুরাগী মনোভাব শাহজাহানের রাজত্বকালকে উন্নীত করেছে অনেক উর্ধ্বে।
৬) নিজের মৃত পত্নীর প্রতি প্রেমকে কালজয়ী করে রাখতে নির্মাণ করেছিলেন তাজমহলের। নিজের অকৃত্রিম ভালোবাসার সাক্ষীস্বরূপ তাজমহলের নির্মাণ শাহজাহানের কোমল প্রেমী মনের পরিচায়ক।
কৃতিত্বের সমালোচনা
এতক্ষন শাহজাহানের কৃতিত্বের কথা আমরা জানলাম। কিন্তু শাহজাহানের রাজত্বকাল সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। কোনো কোনো দিক বিচার করলে দেখা যায় যে তাঁর রাজত্বকাল অনেক ত্রূটিতে পরিপূর্ণ।
i) শাহজাহান উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল তাঁর ব্যর্থতার অন্যতম দৃষ্টান্ত। তিনি কাবুল, কান্দাহার উদ্ধার করতে পারেননি।
ii) বলখ ও বাদাখশান জয় করতে গিয়ে প্রায় চার কোটি টাকা অপচয়ের সাথে মুঘল সামরিক শক্তির দুর্বলতাকে বিদেশিদের কাছে উম্মুক্ত করে দেন।
iii) বহু ঐতিহাসিক শাসক হিসেবে তাঁর সমালোচনা করেছেন। কারণ শাহজাহানের জীবিতকালেই পুত্রদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।
iv) শাহজাহানের আমলে দেশের জনগণ নাকি সুখী ছিল। কিন্তু তাঁর আমলে আগত বিদেশী পর্যটক বার্নিয়ের বিবরণে কৃষকদের দুর্দশার চিত্রই ফুটে উঠেছে।
v) শিল্প-স্থাপত্যে অতিরিক্ত জাঁকজমক ও আড়ম্বর করতে গিয়ে মুঘল অর্থ ভান্ডারকে শাহজাহান বিপর্যস্ত করেছিলেন। যার ফলে রাজ্যে অর্থসংকট দেখা দিয়েছিল।
vi) অর্থসঙ্কটের ফলে প্রজাদের ওপর করের বোঝা বাড়তে থাকে। প্রজারা হয়ে ওঠে সম্রাটের প্রতি বিক্ষুব্ধ।
মূল্যায়ণ
সবদিক বিচার করে বলা যায় যে শাহজাহান তাঁর রাজত্বকালে সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক দিক থেকে ততটা সাফল্যের অধিকারী হতে পারেননি।
শাহজাহানের দাক্ষিণাত্যে সাম্রাজ্য বিস্তার ছাড়া সেইরকম উল্লেখযোগ্য সামরিক অভিযান নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি, মধ্য এশিয়া নীতি গ্রহণে তিনি ব্যর্থই হয়েছেন। বেশ কিছু ভুল পদক্ষেপের জন্য নিজের আমলেই পতনের বীজ বুনেছিলেন।
কিন্তু যদি শিল্প-স্থাপত্য, সাহিত্য-সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, তাহলে বলা যায় শাহজাহানের রাজত্বকাল মুঘল ইতিহাসের সুবর্ণ যুগ।
আরও পড়ুন : মুঘল চিত্রকলা বা শিল্পকলা
আশা করি ‘শাহজাহানের কৃতিত্ব’ সম্পর্কে এই পোস্টটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছো। যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে তোমাদের মতামত জানিও। আর পোস্টটি অন্যদের সাথে অবশ্যই শেয়ার কোরো। তোমাদের মুল্যবান মতামত আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করে। ভালো থেকো বন্ধু ।