history of samosa,সিঙাড়ার ইতিহাস

জানুন সিঙাড়ার ইতিহাস । History of Singara

সিঙাড়ার ইতিহাসের ( History of Singara ) কথা উঠলেই প্রত্যেকের জিভে জল আসবেই। সমগ্র ভারতেই জমিয়ে সিঙাড়া খাওয়ার চল আছে।

খাস্তা, মুচমুচে ভেতরে আলুর নরম পুর একথা ভাবতেই আহ্লাদে আটখানা হতে হয়। ভারতবাসী চিরকাল রসনাবিলাসী। খেয়ে খাইয়ে যেন তাঁর তৃপ্তি।

ভাবছেন, ইতিহাস ধর্মী এই ওয়েবসাইটটি কি ইতিহাসচর্চা ছেড়ে রান্নাঘরের হেঁশেলে ঢুকে পড়লো। আজ্ঞে না, ইতিহাস চর্চাই মূল উদ্দেশ্য।

তাহলে, পোস্টের শিরোনাম দেখে এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গিয়েছেন কি বিষয়ে এই পোস্টটি।

সিঙাড়া আমরা প্রত্যেকে খেয়ে থাকি। তা সে বন্ধুদের আড্ডায় হোক কিংবা অফিসের আড্ডায় কিংবা বাড়িতে পরিবারের সবাই একসাথে মিলে।

গরম চায়ের সাথে সিঙাড়ার জুড়ি মেলা ভার। তবে মুড়ির সাথেও সিঙাড়ার সম্পর্কটা তেমন মন্দ নয়।

যাই হোক, আলোচনাটা যখন সিঙাড়া নিয়ে তখন এই খাদ্যবস্তুটির পিছনে নিশ্চয় একটা ইতিহাস থাকবেই। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাসকে।

history of singara, সিঙাড়ার ইতিহাস

সিঙাড়ার ইতিহাস ( Singara )

১) সিঙাড়ার নামকরণ ( history of singara )

সিঙাড়ার অন্য বিভিন্ন নামের তালিকা কিন্তু বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছে যেমন – সমভুজা, সম্ভোজা, সামোসা, সিভুসা ইত্যাদি। আর চলতি কোথায় আমাদের সবার পরিচিত নাম সিঙাড়া তো রয়েছেই।

প্রায় ৯০০ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে পারস্যের মানুষজন যব ও ময়দার মিশ্রণের মণ্ড তৈরী করতেন। এরপর তার সাথে সব্জি এবং মাংসের মিশ্রণ যুক্ত করে বর্তমানের সিঙাড়ার আকৃতির মতো করে আগুনে সেঁকে নিতেন।

এইভাবে তৈরী হোতো পারসিকদের মুখরোচক এই পদটি। পারসিকরা তাঁদের তৈরী সিঙাড়াকে বলতেন ‘সনবশাখ’। কালক্রমে ভারতে সনবশাখ পরিচিত হোলো সিঙাড়া নামে।

কিন্তু ইদানীং সিঙাড়ার সবচেয়ে যে নামটি বেশি প্রচলিত তা হোলো সমোসা ( Samosa )। গুজরাতে নাম হয়েছে ‘কুচি’ নামে।

তবে পারসিক সনবশাখ থেকে শিঙাড়ার নামের উৎপত্তি হয়েছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ ঐতিহাসিকরা অন্য কথা বলছেন।

তাঁদের মতে, বহু অতীতেই ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ইরান থেকে আগত বণিকরা ভারতে ব্যবসার কাজে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় খেতেন ‘সাম্বুসা’।

যা তৈরী হোতো ময়দা ও মাংসের সহযোগে। তবে আমাদের সংস্কৃতে উল্লেখিত ‘শৃঙ্গাটক’ শব্দটির অর্থ হোলো সিঙাড়া। অতএব এথেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে সিঙ্গাড়া আমাদের দেশেরই।

নামকরণ এদেশেরই।

২) সিঙাড়া কি ? :

সিঙাড়া বাংলা তথা ভারতবর্ষের একধরণের ত্রিকোণাকৃতি তেলে ভাজা মুখোরোচক খাদ্যবস্তু। এতে মশলাসহ আলুর পুর বা অন্য কোনো পুর ব্যবহার করা হয়। এটি পরিবেশন করা হয় গরম গরম।

৩) সিঙাড়া আবিষ্কারের কাহিনী

সিঙাড়া আবিষ্কারের কাহিনীটি বেশ মজাদার। আর সেই আবিষ্কারের সাথে কৃষ্ণচন্দ্রের নাম জড়িয়ে রয়েছে। হ্যাঁ, এই কৃষ্ণচন্দ্র অবশ্যই নদীয়ার অধিপতি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় ( Krishnachandra Roy )।

নদীয়া রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ রাজা তিনি। বিদ্বান, সংস্কৃতিরসিক এবং বহু গুণী ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। সেই গুণী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন শাক্ত সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র, গোপাল ভাঁড় প্রমূখরা।

একজন খাদ্যরসিক হিসেবেও কৃষ্ণচন্দ্র কম যেতেন না। ওড়িশার এক হালুইকর কৃষ্ণচন্দ্রের হেঁশেলে খাস রাঁধুনি হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন।

তাঁর নাম ছিল গিরিধারী বেহেরা।

একদিন একটি ঘটনা ঘটে। সেদিন হালুইকর গিরিধারী মহারাজের ভোজের জন্য লুচির আয়োজন করেছিলেন।

কিন্তু গরম লুচি নিমেষে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হালুইকরের ওপর রেগে আগুন হন।

শূলে চড়ানোর নির্দেশও দেন। কিন্তু হালুইকরের কাতর আর্জিতে মহারাজ শূলের পরিবর্তে তাঁকে রাজ্যছাড়া হওয়ার আদেশ দেন। হালুইকর পড়লো মহাবিপাকে।

এমন সময় গিরিধারীর স্ত্রী ধরিত্রী দেবীর মাথায় এক মস্ত বুদ্ধি খেলে গেলো।

রাজ্যছাড়ার আগে স্বামী গিরিধারীকে সাথে নিয়ে ধরিত্রী দেবী কৃষ্ণচন্দ্রের রাজদরবারে হাজির হন শেষ সুযোগের আশায়। মহারাজকে কথা দেন যে এমন লুচি তরকারি তিনি বানাবেন যা দীর্ঘসময় বাদে খেলেও গরম থাকবে।

কৃষ্ণচন্দ্র একথা মেনে নিয়ে ধরিত্রী দেবীকে তৎক্ষণাৎ রাজ হেঁশেলে যাওয়ার আদেশ দেন।

পাকশালায় গিয়ে গিরিধারী স্ত্রীর নির্দেশে উনুনে আলুর তরকারি চাপিয়ে যথারীতি ময়দা মাখার কাজে লেগে যান।

লুচির মতো করে বেলে হাতের নিপুণ কারিগরীতে ঠোঙার মতো আকার দিয়ে তাতে আলুর তরকারি ভরে দেন।

দেখতে হয় অনেকটা তিনকোণা সম বস্তুর মতো। তারপর সেগুলিকে গরম তেলে ভেজে রুপোর থালায় সাজিয়ে পরিবেশন করেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সামনে।

মহারাজ খেয়ে বেজায় খুশি হয়ে ধরিত্রী দেবীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন এটা কি ? উত্তরে বলা হয়েছিল এটি ‘সমভূজা’। মহারাজ ধরিত্রীদেবীকে পুরস্কৃত করে হালুইকর গিরিধারীকে দন্ডমুক্ত করেন।

আসলে এইভাবেই ধরিত্রী দেবী স্বামীর সম্মান রক্ষার্থে মগজাস্ত্রের প্রয়োগ ঘটান। কিস্তিমাত করেন ; আবিষ্কার হয় সিঙাড়ার।

আরও পড়ুন : মায়া সভ্যতার ইতিহাস

৪) লেখকদের রচনায় সিঙাড়া :

সিঙাড়া এমন একটি পদ যা ছাড়া বাঙালির আড্ডা জমে ওঠে না। বাঙালি চিরকালই রসনাবিলাসী। ভালোমন্দ খেয়েই যেন তাঁর তৃপ্তি।

শুধু বাঙালি নয় ভারতের সর্বত্রই সিঙ্গারার চল রয়েছে। একেক রাজ্যে একেক নাম। তাই বলা যেতে পারে সিঙাড়াই প্রথম ফাস্টফুড। আর এই ফাস্টফুডের উল্লেখ লেখকদের লেখাতেও আছে।

আমির খসরু ( Amir Khasru ) তেরো শতকের একজন সুফি কবি। তাঁর লেখাতে শিঙাড়ার বর্ণনা আছে। তিনি লিখেছেন, সিঙাড়া মাংসের পুর ভরা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার।

আমির খসরু ছিলেন বিখ্যাত একজন গায়ক। অসামান্য কণ্ঠস্বরের জন্য ‘তুতাক-ই-হিন্দ’ বা ‘ভারতের তোতাপাখি’ নামে পরিচিত ছিলেন।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ছিলেন কাওয়ালি গানের জনক। এছাড়াও গজল সঙ্গীতেরও উদ্ভাবক। বিখ্যাত সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার প্রিয় শিষ্য ছিলেন খসরু।

দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার পাশের কবরে তাঁর প্রিয় এই শিষ্য শায়িত রয়েছেন। আবুল ফজলের ‘তারিক-ই-বেহকি’ বইতেও সিঙাড়ার উল্লেখ আছে।

সেখানে সিঙাড়াকে বলা হয়েছে ‘সাম্বোসা’। শিঙাড়ার কথা বলা হয়েছে মালবের সুলতান খিয়াত শাহের ‘নিমতনামা-ই-নাসিরুদ্দিন-শাহি’ গ্রন্থেও।

বইটি মধ্যযুগের ভারতীয় রান্নার একটি অমূল্য গ্রন্থ। বর্তমানে বিখ্যাত এই রান্নার বইটি লন্ডনের ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে সুরক্ষিত রাখা আছে।

মাংসের সিঙাড়া ছাড়াও ক্ষীর, বাদাম, মিষ্টি ইত্যাদি সহযোগে তৈরী সিঙাড়ার কথাও উল্লেখিত আছে বইটিতে।

সুদূর মরোক্কো থেকে ভারতে আসা পর্যটক ইবন বতুতার ( Ibn Botuta ) রচনাতেও সিঙাড়া স্থান পেয়েছে। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায় মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজসভাতে নাকি পরিবেশিত হোতো লোভনীয় সিঙাড়া।

সিঙাড়া বানানোর রেসিপি

সিঙাড়ার ইতিহাস তো না হয় জানলাম, কিন্তু বানানোর রেসিপিটাও জানা দরকার।

প্রায় ৯০০ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের লোকেরা যব ও ময়দার তৈরী খোলের ভেতর মাংস, সব্জির পুর ভরে আগুনে সেঁকে শিঙাড়া বানিয়ে খেতেন।

অতীতে ইরান থেকে আসা বণিকরাও এইভাবেই তৈরী করতেন সাম্বুসা বা সিঙাড়া। সময় বদলালো সিঙাড়ার বানানোর রেসিপিতেও বদল এলো।

১৮৮৫-১৯০২ সালে বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের ‘পাক প্রণালী’ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে সিঙাড়া বানানোর পদ্ধতির বর্ণনা আছে।

সেখানে বলা হচ্ছে , সেদ্ধ আলুর খোসা ছাড়িয়ে কালো জিরে, মরিচ, জয়িত্রী গুঁড়ো দিয়ে মিশিয়ে সিঙাড়ার পুর তৈরির কথা।

আবার , বিনা মশলায় শুধু ছোটো ছোটো আলু ভেজে ময়দার খোলের ভিতরে ভরে ঘিয়ে ভাজা সিঙাড়া তৈরির রেসিপির কথাও বলা আছে।

তবে বর্তমানে অধিকাংশ দোকানে তেলে ভাজা সিঙাড়ারই চল আছে।

প্রথমে ময়দার সাথে তেল , লবণ ও খানিকটা খাওয়ার সোডা মিশিয়ে ময়দা ভালোকরে মেখে নেওয়া হয়।

এরপর কড়াইতে তেল গরম করা হয়। তার মধ্যে মৌরি, ধনেগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, হলুদ, মরিচগুঁড়ো, সেদ্ধ আলু, আদা-রসুন বাটা, পেঁয়াজ, বাদাম-কে ভালোভাবে ভাজা হয়।

এইভাবেই তৈরী করা হয় সিঙাড়ার পুর। তারপর মাখা ময়দার লেচি কেটে সেগুলিকে লুচির মতো বেলে ছুরির সাহায্যে মাঝখান দিয়ে কেটে নেয়।

এই কাটা অংশকে হাতের সাহায্যে পানের মতো খিলি করে তাতে ভরে দেওয়া হয় পুর।

কড়াইতে পুনরায় তেল চাপিয়ে কাঁচা সিঙাড়া গুলিকে গরম তেলে লাল করে ভেজে নিলেই প্রস্তুত হয় মুখোরোচক সিঙাড়া।

তবে আজকাল পাড়ার অনেক মুখোরোচক খাবারের দোকানেই চাউমিন, পনির কিংবা মাছের পুরওয়ালা সিঙারাও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

আসলে সময়ের সাথে সাথে ভোজন রসিকদের স্বাদও আরও ক্ষুরধার হয়েছে। আর হালুইকররাও সেই স্বাদের খবর রাখেন।

আরও পড়ুন : তারকেশ্বরের ইতিহাস

বাঙালিদের সিঙাড়াপ্রীতি : –

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার সভাকবি ছিলেন বাংলার শাক্ত সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন ( Ramprasad Sen )। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হালিশহরে রামপ্রসাদের জন্ম।

হিন্দু দেবী কালীর উদ্দেশ্যে তাঁর রচিত গানগুলি ‘রামপ্রসাদী গান’ হিসেবেই পরিচিত। বাংলায় কালী আরাধনার প্রবর্তক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্য ছিলেন রামপ্রসাদ সেন।

রামপ্রসাদ রচিত ভক্তিগীতিগুলি আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জানা যায় এই বাঙালি সাধক প্রত্যহ সন্ধ্যা আহ্নিক শেষে রসিয়ে সিঙ্গাড়া খেতেন।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র দোলপূর্ণিমার ভেট হিসেবে উমিচাঁদকে সিঙ্গাড়াই দিয়েছিলেন। উমিচাঁদ ছিলেন বাংলায় নবাবী আমলের একজন নামকরা ব্যবসায়ী।

সেইসাথে নবাব সিরাজদৌল্লার ( Siraj ud Daulah ) বিরুদ্ধে পলাশীর যুদ্ধের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী।

সিঙাড়া খেতে ভালোবাসতেন বিখ্যাত বাঙালি শ্যামাসঙ্গীত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ও পান্নালাল ভট্টাচার্য। বিখ্যাত গায়ক মান্না দে’র ( ডাকনাম প্রবোধচন্দ্র দে ) পছন্দের খাবারের তালিকাতে সিঙাড়ার স্থানও ছিল।

কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের নাম আমাদের সকলেরই শোনা। এখানে নবীন থেকে প্রবীণ সমস্ত সাহিত্যিক, কবিদের মশগুল আড্ডায় চা-শিঙাড়া একদম মাস্ট।

তাই একটা সময় বিশিষ্ট সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, শেখর বসু থেকে শুরু করে সৌরীন্দ্রমোহন মুখার্জী প্রমুখদের আড্ডা জমে যেত চা-সিঙাড়াতেই।

কারণ বাঙালির আড্ডা বলে কথা, সেখানে চা-সিঙাড়া থাকবে না তা হয় নাকি।

শুধু আড্ডায় নয়, পুজোর ভোগেও আধিপত্য জমিয়েছে সিঙাড়া। অবাক হচ্ছেন তো ?

হ্যাঁ, এমনই প্রথা দেখা যায় কলকাতার এক নামী ধনীবাড়িতে। তা হোলো, কলকাতার কলুটোলার বদনচন্দ্র রায়ের বাড়ির দুর্গাপুজো। এখানে মায়ের দশমীর ভোগে থাকে শিঙ্গাড়া।

আজও বাড়িটি অতীতের অনেক সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। তবে কলুটোলার সরু গলির ভেতরে বাবু বদনচন্দ্র রায়ের বাড়িটির স্থাপত্য কিন্তু অসাধারণ।

ঠাকুরবাড়িতেও সিঙাড়ার প্রচলন : –

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতেও প্রচলন ছিল সিঙাড়ার। খেতে ভালোবাসতেন সবাই। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( Rabindranath Tagore )। কবিগুরু প্রতিটি বাঙালির মননে। ভাবধারায়।

বিশ্বকবির শিরোপা তাঁর কাছে। বাঙালিরা কবিগুরুর রচিত কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ছোটোগল্প পড়ে ধন্য হয়েছেন।

তাঁর রচিত গানগুলি প্রত্যেকের হৃদয়ের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত। সকলের কাছে প্রাণের প্রিয় কবি তিনি।

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর ছোটো মেয়ে ছিলেন ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে ছিলেন তাঁর কাকা।

জানা যায় ইন্দিরা দেবী হরেক কিসিমের রান্নার কথা নিজের হাতে খাতায় লিখে রাখতেন। রান্নার সেই মূল্যবান খাতাখানি তিনি দিয়েছিলেন হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে পূর্ণিমা ঠাকুরকে।

সম্পর্কে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইজি। ইন্দিরা দেবীর হরেক কিসিমের রান্নার সেই খাতাটিকে পূর্ণিমা ঠাকুর রূপ দেন ‘ঠাকুরবাড়ির রান্না’ নামক বইটিতে।

বইটিতে সিঙাড়া তৈরির পদ্ধতি সবিস্তারে লেখা আছে।

সমোসা না সিঙাড়া :-

সমোসা ( Samosa ) না সিঙাড়া কোন নাম বেশি প্রচলিত, এ সম্পর্কে বলা বেশ কঠিন। ভারতের সর্বত্রই এই খাদ্যবস্তুর চল আছে। আসলে খাদ্য রসিকদের কমতি তো নেই।

ভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন নাম। বাঙালির আড্ডা আবার সিঙাড়া ছাড়া তেমন জমে না। তাই বাঙালিদের কাছে সিঙাড়া নামটিই বেশি প্রচলিত।

অবাঙালিরাও কিন্তু আড্ডামুখর। তাঁদের কাছে সিঙাড়া ধরা দিয়েছে সমোসা নামে। তবে এটুকু বলা যায়, মোটামুটি বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সমোসা নামটিই প্রায় সর্বত্র প্রচারিত।

আবার দুই তরফেই সিঙাড়া বা সমোসার পুরের প্রকারভেদ আছে। বাঙালি সিঙাড়ায় থাকে আলুর পুর।

অবাঙালি সমোসায় পনির, আলুর পুরের সাথে অধিক পরিমাণে মশলার আধিক্যই বেশি।

তবে যাই হোক বাঙালির প্রিয় ফুলকপি ও কড়াইশুঁটির তৈরি সিঙাড়া অন্যদের সমোসাকে টেক্কা দেবে। তা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে, মানে শীতকালে।

তখন বাঙালির সারা বছরের অপেক্ষাই বাঙালিকে আরও বেশি হ্যাংলা করে তোলে। আর এ হ্যাংলামো বাঙালিকে যেন মানায়।

সমোসা বা সিঙাড়া যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন যুগ যুগ ধরে সে সবার স্বাদ মেটাচ্ছে।

উপসংহার :-

বহু লেখকের গল্প, উপন্যাস ও বিবিধ লেখায় সিঙাড়ার প্রসঙ্গ ঘোরাফেরা করেছে। জলখাবারে, আড্ডায় রমরমা ভাব বহুকাল থেকেই। সংস্কৃতেও সিঙাড়ার উল্লেখ। সুদূর পারস্যের সনবশাখ ভারতে এসে অবশেষে পরিচিত হয়েছে সিঙাড়া নামে। পর্তুগিজদের রান্নাঘর থেকে ভারতীয়দের রান্নাঘরে আলুর প্রবেশ ঘটায় সিঙাড়ার পুরেও পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটি রসনাবিলাসীর রসনা তৃপ্ত করেছে সিঙাড়া। তাই এহেন খাদ্যবস্তুকে প্রথম ফাস্টফুড বলাই ভালো।

আরও পড়ুন : মহীশূরের উত্থান

আশা করি ‘সিঙাড়ার ইতিহাস’ সম্পর্কিত পোস্টটি পড়ে আপনাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগলো। যদি এবিষয়ে কোনো মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামত আমার অনুপ্রেরণার রসদ। ভালো থাকবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!