রোবসপিয়ার কে ছিলেন (Who was Robespierre)
নমস্কার বন্ধু কেমন আছো , আশা করি খুব ভালো আছো। এবারের আলোচনার বিষয় রোবসপিয়ার সম্পর্কে। যিনি ছিলেন ফ্রান্সের সন্ত্রাসের রাজত্বের নায়ক।
তাঁর সম্পর্কে বিশদে জানতে এই পোস্টটি পড়তে তোমাকে অনুরোধ করছি।
আগের পোস্ট জ্যাকোবিন দল নিয়ে করা হয়েছে। চাইলে এই পোস্টটিও তুমি পড়তে পারো। আশা করি তুমি পড়ে উপকৃত হবে।
রোবসপিয়ারের পরিচয় :
রোবসপিয়ারের পুরো নাম ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ার।
ফ্রান্সের এক আইনজীবির ঘরে তাঁর জন্ম হলেও পরে এক বিশপের কাছে তিনি মানুষ হয়েছিলেন।
শিক্ষা শেষ করে আইনজীবির জীবিকা বেছে নেন। ১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফ্রান্সের জাতীয় সভায় তিনি প্রতিনিধি নির্বাচিত হন ও গড়ে তোলেন জ্যাকোবিন দল।
রোবসপিয়ারের ব্যক্তিচরিত্র :
ব্যক্তি হিসেবে রোবসপিয়ার সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। চরিত্র ছিল তাঁর নিষ্কলঙ্ক।
নারীজাতির থেকে তিনি দূরে থাকতেন। জানা যায় যে তিনি নিজের ভগিনী শার্লোত কেও পর্যন্ত ঘৃণা করতেন।
নিজের মতকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন।
তাঁর মতে সমাজকে সততা ও ন্যায় নীতির মাধ্যমেই শাসন করা উচিত। আবার অন্যদিকে তিনি ছিলেন খুবই নিষ্ঠুর।
তাঁর নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায় যখন তিনি বহু মানুষকে গিলোটিনে হত্যা করেছিলেন।
নিজে সৎ হওয়ায় তিনি চাইতেন প্রত্যেকেই সৎ হতে বাধ্য। তাই সততা তাঁর চরিত্রের বড় একটি দিক।
আরও পড়ো : জ্যাকোবিন দল
দার্শনিকদের প্রভাব :
রোবসপিয়ার রুশো ও ভলতেয়ারের অনুরাগী ছিলেন।
এই দার্শনিকদের রচনাগুলি তিনি গভীর ভাবে পড়াশোনা করতেন। রোবসপিয়ারের চিন্তাধারায় রুশোর প্রভাব বেশী ছিল। তাঁকে বলা হত রুশোর মানসপুত্র।
সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যের জন্য দায়ী সামাজিক অসাম্য, রুশোর এই ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন রোবসপিয়ার।
রোবসপিয়ারের আদর্শ :
রুশোর আদর্শকেই রোবসপিয়ার মেনে চলতেন। সম্পত্তির অধিকারে তিনি বিশ্বাস করতেন।
রোবসপিয়ারের মতে, জনতা অত্যাচারিত হলেই জনতার উচিত বিদ্রোহ করা।
অর্থাৎ রোবসপিয়ার স্বৈরাচারের বিরোধী ছিলেন। তাঁর আদর্শ অনুযায়ী জনতাই হল সার্বভৌম শক্তি।
রাজনীতিতে তিনি ন্যায়নীতিকেই উপরে স্থান দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আপোষকে পাপ বলে মনে করতেন।
রোবসপিয়ারের সন্ত্রাস :
রোবসপিয়ার তাঁর সন্ত্রাসের জন্য ইতিহাসে খ্যাত। তাঁর সন্ত্রাস জ্যাকোবিন সন্ত্রাস নামেও পরিচিত।
সন্ত্রাস পরিচালনার জন্য বিপ্লবী প্রতিষ্ঠানগুলিকে রোবসপিয়ার কার্যত যন্ত্রে পরিণত করেছিলেন।
সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বৃদ্ধি করতে তিনি ব্যবহার করেছিলেন গিলোটিন যন্ত্রের। এই গিলোটিনে নিহত হয়েছিলেন মাদাম রোলাঁ, ড্যান্টনের মত ব্যক্তিত্ব।
১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দ – ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সন্ত্রাসে গিলোটিনের ব্যবহার করেছিলেন।
সন্ত্রাসের ভাল দিক :
সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর দিকের পাশাপাশি একটি ভাল দিকও ছিল। সন্ত্রাসের আমলেই মুদ্রাস্ফীতি রোধ হয়েছিল।
খাদ্যসঙ্কট লোপ পেয়েছিল।
ফ্রান্সে প্রতিবিপ্লবীদের বাজেয়াপ্ত করা জমিগুলি কৃষকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছিল।
রোবসপিয়ারের ধারণা ছিল সমাজে নীতিবোধ নষ্টের মূল কারণ খ্রিস্ট ধর্মের অবনমন। তাই তিনি পরমপুরুষের উপাসনা চালু করেন।
মূল্যায়ন :
ফরাসি বিপ্লবের উজ্বল দিকগুলি রোবসপিয়ারের নেতৃত্বেই পূর্ণতা পেয়েছিল।
রুশোর আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
রোবসপিয়ারের দ্বারাই ফ্রান্সে সাঁকুলেত শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিল। তাই বলা যায় যে, রোবসপিয়ার বিপ্লবের প্রকৃত সন্তান ছিলেন।
আরও পড়ো : শের শাহের শাসনব্যবস্থা
” আশা করি এই পোস্টটি পড়ে তোমার ভালো লেগেছে। যদি তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভালো থেকো বন্ধু , আর ইতিহাস পড়তে থেকো “।
খুব ভালো আর সুন্দর ভাবে সহজ সরল ভাষায় লেখা
পড়তে আন্দন লাগলো
ধন্যবাদ আপনাকে। আমার ওয়েবসাইটের জন্য এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি, সেইসাথে আমারও। চাইলে অন্যান্য লেখাগুলিও পড়তে পারেন। ফলো রাখবেন এই ওয়েবসাইটটিকে। ভালো থাকবেন।