শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান ( Shivaji and Maratha power )
মহারাষ্ট্র ভারতের পশ্চিম দিকের একটি রাজ্য। এই মহারাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে একসময় শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান ( Shivaji and Maratha power ) ঘটেছিল। মহারাষ্ট্র রাজ্যটি পাহাড়-পর্বতে ঘেরা।
সহ্যাদ্রি, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, বিন্ধ্য, সাতপুরা পর্বত বেষ্টিত। অন্যদিকে নর্মদা ও তাপ্তীর মতো বেগবতী নদী বেষ্টিত।
এইরকম গিরিদুর্গম রাজ্যটিতে মারাঠারা বাস করতো নিভৃতে একাকী। তেমন কোনো অর্থনৈতিক চমক ছিল না তাঁদের। ছিল না কোনো সমৃদ্ধ রাজধানী।
কিন্তু মারাঠা নামক জাতটির মধ্যে ছিল একতা, সাম্য।
রাষ্ট্রিয়ভাবে মারাঠাদের এক করলেন শিবাজি ( Shivaji )। শিবাজিকে মারাঠা জাতির স্রষ্টা বলা হয়।
শিবাজির নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির উত্থান ঘটে এবং মারাঠা জাতি শক্তিশালী হয়। একসময় বিজয়নগর ও বাহমনি নামে দুটি রাজ্য ছিল।
এই বাহমনি রাজ্যের মধ্যেই মহারাষ্ট্র অবস্থান করতো। কিন্তু এই বাহমনি রাজ্যের দখল নিয়েছিলেন বিজাপুর ও আহম্মদনগরের সুলতানরা।
এরপর মারাঠারা বিজাপুর, আহম্মদনগরের সুলতানদের অধীনে সামরিক সেবায় নিযুক্ত হয়।
মারাঠাদের মধ্যে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় স্বরাজ্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা। স্বভাবতই মারাঠা জাতি অভ্যুত্থান ঘটালো।
আর এই সমগ্র মারাঠা জাতিকে সংগঠিত করার চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগলেন শিবাজি। শিবাজির উত্থান ঘটে । এরপর কি ঘটলো তা জানতে এই পোস্টটি পুরোটা পড়তে হবে।
মারাঠাদের উত্থানের পিছনে প্রভাব ( Shivaji and maratha power )
১) ভৌগোলিক প্রভাব
মহারাষ্ট্রের ভৌগোলিক পরিবেশ মারাঠা শক্তির উত্থান ও মারাঠাদের চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়েছিল। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মহারাষ্ট্র পাহাড় পর্বতে ঘেরা।
এখানকার পশ্চিমঘাট পর্বতমালা খাড়া দেওয়াল যুক্ত ও কঠিন ব্যাসল্ট শিলার সমন্বয়ে গঠিত।
এই পর্বতগুলিতে মারাঠারা গিরিদুর্গ নির্মাণ করে নির্জনে বাস করতো। এই নির্জনতাই মারাঠাদের স্বাধীনতাপ্রিয় করে তোলে।
এইসমস্ত গিরিদুর্গ দখল করা শত্রুদের পক্ষে সহজসাধ্য ছিল না। ফলে মারাঠারাও সহজেই আত্মরক্ষা করতে পারতো।
সেইসাথে পর্বতের দুর্গে থাকার সুবাদে মারাঠারা গেরিলা যুদ্ধ ভালো রপ্ত করেছিল। পাহাড়-পর্বত ছাড়াও নর্মদা, তাপ্তীর মতো বেগবতী নদীগুলিও মহারাষ্ট্রকে পরিখা দিয়ে ঘিরে রেখেছিল।
মহারাষ্ট্রের জলবায়ু ছিল অত্যন্ত শুষ্ক প্রকৃতির। ফলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জমিগুলি ছিল অনুর্বর। ফসল ফলানো খুবই কষ্টকর হোতো।
এইরকম কঠিন জীবনযাপন মারাঠাদের পরিণত করেছিল কষ্টসহিষ্ণু, কর্মনিষ্ঠ, সাহসী, ঐক্যবদ্ধ ও সংগ্রামশীল এক দুর্ধর্ষ জাতিতে।
২) ধর্মীয় প্রভাব
১৬০০/১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রে ধর্মীয় আন্দোলন দেখা দেয়। ধর্ম সমাজে সাম্যবোধ তৈরী করলো।
বিভিন্ন সাধুগণ ও ধর্মীয় সংস্কারকরা মারাঠাদের মধ্যে জাতিভেদ দূর করে নতুন জীবন দান করলেন।
মারাঠা জাতির মধ্যে একতা জোগানোর জন্য এই ধর্ম সংস্কারকরা আজও মহারাষ্ট্রে ভক্তদের হৃদয় অধিকার করে আছেন।
একনাথ স্বামী, তুকারাম, শিবাজির গুরু রামদাস, বামন পন্ডিত, মোরো পন্ত প্রমূখ সন্ত কবিরা সরল ভাষায় রচনা করেন গান ও নীতিকথা।
এই গান ও নীতিকথাগুলি প্রতিটি মারাঠা ঘরে পৌঁছে যায়। এর ফলে মারাঠাদের মধ্যে সাম্যবাদী চেতনা বৃদ্ধি পায়।
সন্ত তুকারাম রচিত ‘আভঙ্গ‘, রামদাস রচিত ‘দাশবোধ‘, ‘আনন্দ বন ভুবন‘ এই ভজন গানগুলি শুনে মারাঠারা ঐক্যবদ্ধ হয়। মুঘলদের সাথে সংগ্রামে মারাঠাদের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল সন্তদের বিভিন্ন গান ও নীতিকথাগুলি।
মারাঠারা মন দিয়ে প্রতিদিন শ্রীধর কবির ‘পোথী‘ পাঠ শুনতো। মারাঠা জনগণের সবচেয়ে প্রিয় পদ্যগান ছিল ‘পোবাড়া‘ বা ব্যালাড।
এগুলি তাঁদের মনে প্রাচীন বীরগাথার জন্ম দিয়েছিল।
৩) সামরিক প্রভাব
প্রথম দিকে মারাঠা জাতি বিজাপুর ও আহম্মদনগরের সুলতানদের অধীনে সামরিক বিভাগে যোগ দিয়েছিলো। মারাঠাদের সামরিক বিভাগে প্রথম নিয়োগ করেছিলেন মালিক অম্বর।
যিনি ছিলেন আহম্মদনগরের প্রধান সেনাপতি। শুধু সামরিক নয় রাজস্ব বিভাগেও অনেক মারাঠা মন্ত্রী, দেওয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।
উদাহরণ হিসেবে মুরার রাও ও মদন পন্ডিতের নাম বলা যায়।
আরও পড়ুন : ফা – হিয়েন কে ছিলেন
সুতরাং দীর্ঘদিন সামরিক, রাজস্ব প্রভৃতি বিভাগে কাজ করার সুবাদে মারাঠাদের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এই অভিজ্ঞতাই মারাঠা জাতিকে স্বাধীনতা প্রিয় করে তুলতে সাহায্য করেছিল।
আর ঠিক এমন অবস্থায় শিবাজির আবির্ভাব ঘটে। তিনি মারাঠা জাতিকে সংগঠিত করে স্বরাজ্য প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন।
তাই দেখা যাচ্ছে যে, শিবাজি এবং মারাঠা জাতির অভ্যূদয়ের পিছনে এই প্রভাবগুলি খুবই সক্রিয় ছিল।
শিবাজীর উত্থান ( Shivaji and Maratha power )
১) জন্ম
মারাঠা জাতির ভোঁসলে বংশে শিবাজির জন্ম হয়। এই ভোঁসলে বংশের দুইজন ব্যক্তি হলেন মালোজী ভোঁসলে এবং বিঠোজী ভোঁসলে।
২) পিতা ও মাতার পরিচয়
মালোজী ও বিঠোজী দুই ভাই আহম্মদনগর রাজ্যের সেনাপতি যাদব রাও-র অধীনে সৈন্যের কাজ করতেন। মালোজীর জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল শাহজী ভোঁসলে।
শাহজী দেখতে অতি সুন্দর হওয়ায় যাদব রাও বাল্যকালেই তাঁর কন্যা জিজাবাঈ-এর সাথে শাহজীর বিবাহ ঠিক করে রাখেন।
কিন্তু যাদব রাও-এর পত্নী গিরিজা বাঈ এই বিবাহের প্রস্তাবনা মেনে নেননি। এর কারণ মালোজী ভোঁসলে ছিলেন এক অতি সাধারণ সৈন্য।
কিন্তু ভাগ্যের জোরে ধনরত্ন,খ্যাতি ও ক্ষমতার বলে মালোজী আহম্মদনগরের সেনাপতি নিযুক্ত হন।
যাদব রাও তাঁর কন্যা জিজাবাঈ-র সাথে শাহজীর বিবাহ দিলেন। পরবর্তীকালে শাহজী, ভোঁসলে বংশের সেনাদলের দায়িত্ত্ব পান।
১৬২৬ সালে আহম্মদনগর ও বিজাপুরের সুলতানরা মারা গেলে দাক্ষিণাত্যে গোলমাল দেখা দেয়। শাহজী এই অবস্থার পূর্ণ সুযোগ নেন।
মুঘলদের সাথে যুদ্ধে শাহজী কখনো আহম্মদনগর আবার কখনো বিজাপুরের হয়ে যুদ্ধে যোগ দেন।
শেষমেশ মুঘলদের সাথে যুদ্ধে হেরে শাহজী বিজাপুরের সরকারের অধীনে চাকরি নেন।
১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে পুনার শিবনের গিরিদুর্গে জিজাবাঈ-র গর্ভে শিবাজি-র জন্ম হয়। জিজাবাঈ ছিলেন শিবাজির মা এবং শাহজী ভোঁসলে ছিলেন শিবাজির বাবা।
এই দুর্গের পূজিত দেবী ছিলেন শিব-ভবানী। জিজাবাঈ এই দেবীর নাম অনুসারে শিবাজির নাম রেখেছিলেন।
জিজাবাঈ-র বয়স যখন ৪১ তখন শাহজী তাঁর দ্বিতীয় পত্নী তুকাবাঈ মোহিতে কে নিয়ে মহীশূর চলে যান।
আর শিবাজি ও জিজাবাঈ-এর জন্য রেখে যান কিছুটা জায়গীর।
এছাড়া শিবাজি, জিজাবাঈ ও জায়গীরের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পুনার বিশিষ্ট এক ব্রাহ্মণ দাদাজি কোন্ডদেবকে কার্যকর্তা নিযুক্ত করেন শাহজী।
শিবাজির রাজ্যজয়
i) শিক্ষালাভ
শৈশবেই পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে মা জিজাবাঈ ও দাদাজি কোন্ডদেবের স্নেহ ও শিক্ষায় শিবাজি বেড়ে উঠতে থাকেন। জিজাবাঈ ধর্মে একনিষ্ঠ হলেন।
আর সেইসাথে জায়গীরের কাজকর্ম দেখতে লাগলেন। সাথে সহযোগিতা করলেন দাদাজি কোন্ডদেব। পুঁথিগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলেন শিবাজি।
ধর্মপরায়ণ মায়ের কাছে বাল্য অবস্থা থেকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ পাঠ শুনে শিবাজির শিক্ষা লাভ হয়।
এইসমস্ত পাঠ শিবাজির ভেতরে বীরত্ব ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে। মায়ের ধর্মপরায়ণতা ও দাদাজি কোন্ডদেবের উপদেশ শিবাজির মনে দৃঢ়তা ও ধর্মপ্রাণতার জন্ম দেয়।
একজন স্বাধীন রাজা হওয়া তাঁর একমাত্র ইচ্ছা হয়ে দাঁড়ায়।
এইসময় শিবাজির সাথে মহারাষ্ট্রের পার্বত্য মাওয়ালি জাতির ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এই মাওয়ালি জাতিদের নিয়ে তিনি সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।
ii) রাজ্য বিস্তার ও দুর্গ অধিকার
১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে দাদাজি কোন্ডদেব মারা যান। শিবাজিও রাজ্য বিস্তারে মন দেন।
দাক্ষিণাত্যে বিজাপুরে সুলতানের দুর্বলতার সুযোগে মারাঠাদের অভ্যুদয়ের সুবর্ণ সুযোগ তৈরী হয়। অন্যদিকে মুঘল শক্তিও উত্তরভারতে ব্যস্ত ছিল।
১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাওয়ালি সেনাদের নিয়ে শিবাজি বিজাপুর আক্রমণ করে তোরণা দুর্গ অধিকার করেন।
তোরণা থেকে কিছুটা দূরে রায়গড় দুর্গ নির্মাণ করে শিবাজি রায়গড় দুর্গে রাজধানী স্থাপন করেন।
এরপর বড়মতি, ইন্দ্রপুর, পুরন্দর, কোঙ্কন প্রভৃতি জায়গার দুর্গগুলি শিবাজি দখল করেন।
বিজাপুর আক্রমণের কারণে সুলতান আদিল শাহ ক্ষুব্ধ হয়ে শিবাজির পিতা শাহজীকে বন্দি করেন।
বিজাপুর থেকে পিতাকে মুক্ত করে শিবাজি ছবছর তাঁর আক্রমন কার্যকলাপ বন্ধ রাখেন।
ইতিমধ্যে আদিল শাহের মৃত্যু ঘটলে তৎকালীন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব বিজাপুর আক্রমণ করেন। পাল্টা শিবাজিও মুঘলদের অধিকৃত স্থানগুলি আক্রমণ করে মুঘলদের বিব্রত করেন।
শিবাজীর এই চতুরতা ঔরঙ্গজেব ধরে ফেলেন এবং শিবাজির বিরুদ্ধে সৈন্য পাঠিয়ে তাঁকে পরাস্ত করেন।
এইসময় ঔরঙ্গজেব তাঁর পিতা শাহজাহানের অসুস্থতার কারণে দিল্লি ফিরে যান।
iii) আফজল খান হত্যা
অন্যদিকে বিজাপুর থেকে বিখ্যাত সেনাপতি আফজল খানকে শিবাজির শক্তি ধ্বংস করার জন্য পাঠানো হয়।
আফজল খান শিবাজির সাথে সাক্ষাতে আপস মীমাংসার ভান দেখিয়ে কৃষ্ণাজি ভাস্কর নামে এক দূতকে পাঠান।
কোনোভাবে কৃষ্ণাজি ভাস্কর আফজল খানের গোপন অভিসন্ধির কথা শিবাজিকে জানিয়ে দেন।
শিবাজি আফজল খানের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেও শিবাজীর পোশাকের ভেতর বর্ম ও হাতের আঙ্গুলে বাঘনখ অস্ত্র পড়ে গিয়েছিলেন।
সেনাপতি আফজল খান শিবাজির সাথে আলিঙ্গনের নাম করে শিবাজিকে ছুরি মেরে হত্যা করতে যান।
কিন্তু চতুর শিবাজি তাঁর সেই বাঘনখ অস্ত্র দিয়ে সেনাপতি আফজল খানকে হত্যা করেন। এই সূত্রে কোঙ্কন, কোলাপুর ও পানহালা দুর্গ এবং প্রচুর অর্থ শিবাজির অধিকারে আসে।
ঔরঙ্গজেব ও শিবাজি-র সংঘাত
দাক্ষিণাত্যে মুঘলদের অধিকৃত স্থানে শিবাজির আক্রমণ ও লুণ্ঠনের খবর ঔরঙ্গজেবের কাছে পৌঁছোয়।
ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের সুবাদার শায়েস্তা খানকে পাঠান শিবাজিকে দমন করতে।
শায়েস্তা খান রাজপুত রাজা যশোবন্ত সিংহ সহ প্রায় দশ হাজার সৈন্য নিয়ে শিবাজিকে আক্রমণ করেন। কিন্তু শিবাজি তাঁদের সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠেননি।
অবস্থা বেগতিক দেখে চতুর শিবাজি একদিন রাত্রে শায়েস্তা খানের তাবু আক্রমণ করে বেশ কিছু সৈন্যকে নিহত করেন। শায়েস্তা খানের হাতের একটি আঙ্গুল শিবাজি ছিন্ন করতে সমর্থ হন।
শায়েস্তা খানের এই পরাজয়ে ঔরঙ্গজেব নিরাশ হয়ে রাজপুত সেনাপতি জয়সিংহ-কে দায়িত্ত্ব দেন শিবাজিকে দমন করতে।
এর কারণ জয়সিংহ ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান, চতুর, সাহসী সেনাপতি।
জয়সিংহ কূটনীতি প্রয়োগ করে বেশকিছু মারাঠা সর্দারদের জায়গীরের লোভ দেখিয়ে শিবাজির পক্ষ ত্যাগ করান। জয়সিংহ পুরন্দর দুর্গ অবরোধ করেন।
পুরন্দর দুর্গ মুঘল কামানের আঘাতে ধরাশায়ী হলে শিবাজি আত্মসমর্পণ করেন।
মুঘলদের এই প্রতিরোধ শিবাজির পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে ১৬৬৫ সালে শিবাজি ও জয়সিংহের মধ্যে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
এটি ছিল মুঘল ও মারাঠাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী শিবাজি নিজে বারোটি দুর্গ রেখে তেইশটি দুর্গ মুঘলদের হাতে দেন।
শিবাজির পুত্র শম্ভূজী পাঁচ হাজার মনসবের অধিকারী হবে এই প্রতিশ্রুতি পান।
এছাড়া শিবাজি বিজাপুর রাজ্য থেকে চৌথ ও সরদেশমুখী কর আদায়ের অনুমতি লাভ করেন।
১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শিবাজি তাঁর পুত্রসহ আগ্রার দরবারে গেলে সেখানে অপমানিত হন। তিনি এর প্রতিবাদও করেন।
ঔরঙ্গজেব শিবাজির কৌশল বুঝতে পেরে তাঁকে নজরবন্দি করেন। কিন্তু শিবাজি পুত্রসহ পালিয়ে দাক্ষিণাত্যে চলে আসেন। পুনরায় মুঘলদের সাথে মারাঠাদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
মূলত শিবাজি ও মারাঠাদের সাথে মুঘলদের দ্বন্দ্বের কারণ ছিল দাক্ষিণাত্য অধিকারের লড়াই।
তিনি একে একে মুঘলদের থেকে সমস্ত দুর্গগুলি উদ্ধার করেন।
কিন্তু এতকিছুর পরেও শিবাজির পরিচয় ছিল জায়গীরদার মাত্র।
নিজেকে শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন হয় রাজা উপাধির। তাই ১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে রায়গড় দুর্গে শিবাজির রাজ্য অভিষেক হয়।
শিবাজি ‘ছত্রপতি‘ ও ‘গো ব্রাহ্মণ প্রতিপালক‘ উপাধি গ্রহণ করেন। শিবাজি পরিচিত হন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ রূপে।
শিবাজির মৃত্যু
এইভাবে রাজ্যবিস্তার করতে করতে একসময় ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে রায়গড় দুর্গেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন : মুঘল ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা
আশা করবো এই পোস্টটি পড়ে শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছো। যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে তোমার মতামত জানিও। আর অবশ্যই পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার কোরো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করে। ভালো থেকো বন্ধু…..