সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক (Indus Civilization and Vedic Civilization relationship)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভালো আছো।
এর আগে হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে দুটো ব্লগ লিখেছি। পারলে সেগুলি একবার পড়ে নিও। আশা করি তুমি উপকৃত হবে। যাই হোক ফিরে আসি আলোচনায়। এবারের আলোচনার বিষয় হল , হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার সাথে বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক।
হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতা যে, প্রাক আর্য সভ্যতা সেই বিষয়ে ঐতিহাসিকরা অনেকেই একমত। এই দুটো সভ্যতার মধ্যে সাংস্কৃতিক দূরত্ব এত বেশি যে কারণে সভ্যতা দুটি অভিন্ন হতে পারে না।
ঐতিহাসিক স্যার জন মার্শাল প্রথম দেখিয়েছিলেন যে , সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতা দুটোই পৃথক সভ্যতা।
সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক বা পার্থক্য বুঝতে হলে তোমায় উভয় সভ্যতার সময়কাল জানতে হবে। বৈদিক সভ্যতার কথা আসলেই ঋগ্বেদের কথাই সামনে আসে। তার কারণ ঋগ্বেদ প্রাচীনতম গ্রন্থ।
বেশিরভাগ পন্ডিতদের মতে ঋগ্বেদের রচনা হয়েছিল আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ নাগাদ। তাই বৈদিক সভ্যতার সময়কালকে ১৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ বা তার পরে বলা যেতে পারে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে প্রত্নবিদরা যে প্রমাণ গুলি পেয়েছেন তা নির্দেশ করছে, হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল আনুমানিক ২৩০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ১৭৫০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ -এর মধ্যে।
তাই বলা যায় যে, হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতা বৈদিক সভ্যতার আগের সভ্যতা।
তোমার ধারণা আরও পরিষ্কার হবে এই দুটি সভ্যতার পার্থক্য গুলি দেখলে। তাহলে চল দেখা যাক পার্থক্য গুলো।
(১) হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক। এই সভ্যতার মানুষ ছিল নগরবাসী। ইটের তৈরি বড় বড় বাড়ি , বৃহৎ স্নানাগার , সুন্দর জলনিকাশী ব্যবস্থা এইসব কিছুই একটি নগর সভ্যতার পরিচয় দেয়। কিন্তু অন্যদিকে বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা। চাষবাস বা কৃষি কার্যের ওপরেই এই সভ্যতার মানুষেরা নির্ভর করত।
(২) বৈদিক সভ্যতায় আর্যদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পশু ছিল ঘোড়া। আর্যরা ছিল যাযাবর জাতি। এই যাযাবর জীবনে ঘোড়া তাদের ভাল সঙ্গী হয়েছিল। তবে হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতায় ঘোড়া ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
(৩) হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে খুব একটা সচেতন ছিলেন না। অন্যদিকে বৈদিক আর্যরা যুদ্ধের ব্যাপারে ছিল পটু। আত্মরক্ষা , প্রতিরক্ষা বিষয়ে তাদের জ্ঞান ছিল গভীর।
(৪) সিন্ধু সভ্যতা ছিল মূলত তাম্র যুগের সভ্যতা। তামার তৈরি বিভিন্ন জিনিস সিন্ধু বাসীরা ব্যবহার করত। কারণ তারা লোহা ধাতুর সাথে পরিচিত ছিল না। কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় লোহার প্রচলন ছিল। ঋগ্বেদ থেকে এর বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
(৫) ধর্মের দিক থেকেও পার্থক্য রয়েছে , কিরকম তা জেনে নাও। সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা জীবজন্তু , গাছপালা ও সিন্ধু -কে মা হিসাবে আরাধনা করত। এছাড়া লিঙ্গ পূজাতেও তাদের আগ্রহ ছিল।
কিন্তু বৈদিক সভ্যতায় মাতৃ আরাধনার কোন প্রমাণ নেই। আর্যদের রচিত স্তোত্র , যজ্ঞের অনুষ্ঠান সবকিছুই পুরুষ দেবতাদের জন্যই ছিল। তাই বলা যেতে পারে সিন্ধু বাসীরা মাতৃ শক্তি ও বৈদিক আর্যরা পুরুষ শক্তির আরাধনা করত।
(৬) হরপ্পায় প্রাপ্ত অসংখ্য সীলমোহর হরপ্পা বাসীদের লেখার প্রতি আগ্রহকেই তুলে ধরে। কিন্তু আর্যদের মধ্যে লেখার চল ছিল না। কারণ আর্যদের বেদ শুনে শুনেই মনে রাখতে হত।
(৭) হরপ্পা সভ্যতা নগর কেন্দ্রিক সভ্যতা ছিল। তাই এখানকার বড় স্নানাগারটি মানুষের স্নান ব্যবস্থার ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করত। বৈদিক সভ্যতায় স্নান ব্যবস্থার ওপর এতটা গুরুত্ব ছিল না।
(৮) বৈদিক সভ্যতায় মৃতদেহকে দাহ করার রীতি ছিল। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতায় মৃতদেহকে কবর দেওয়া হত। বিভিন্ন প্রত্ন স্থল থেকে বহু কবর আবিষ্কৃত হয়েছে।
(৯) সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া মাটির পাত্র গুলি ছিল কালো ও লাল রংয়ের। অন্যদিকে বৈদিক সভ্যতায় মাটির পাত্রগুলির রং ছিল ধূসর।
এতকিছু পার্থক্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে , সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতাকে প্রাক আর্য সভ্যতা হিসাবেই চিহ্নিত করা ঠিক হবে। এছাড়াও এই দুটি সভ্যতার মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না।
লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।
তোমার লেখায় যে টুকু বুঝলাম। হরপ্পা সভ্যতার মানুষ জন নগরে বাস করতো , কিন্তু তাঁদের খাবার দাবার কথা থেকে আসতো বুঝতে পারলাম না?
পোস্টটি পড়বার জন্য ধন্যবাদ