ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাল (Important year of History)
ইতিহাস পড়তে গেলে বিভিন্ন সাল তারিখ আমাদের মনে রাখতে হয়। না হলে ইতিহাস পড়ার মজাটা ঠিক আসে না। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার সালগুলি আমাদের বিভিন্ন সময়ে দরকার পড়ে।
আর সেটা যদি হয় পরীক্ষার খাতায় , কোনো চাকরির ইন্টারভিউ অথবা কোনো কুইজ প্রতিযোগিতার সময়।
আজকাল স্কুল, চাকরির পরীক্ষায় ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ সাল নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসে।
সত্যি কথা বলতে কি, অনেকেরই এই সালগুলি ঠিক ভাবে মনে থাকে না।
এই পোস্টে ইতিহাসের কিছু স্মরণীয় সাল এবং সালগুলোর সাথে জড়িত ঘটনা গুলি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশা করি তোমার অনেক উপকারে আসবে।
ইতিহাসের সেই স্মরণীয় সালগুলো নীচে দেওয়া হোলো।
২৬১ খ্রিস্টপূর্ব ( 261 BC ) –
কলিঙ্গ যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। কলিঙ্গ যুদ্ধ হয়েছিল ২৬১ খ্রিস্টপূর্বে।মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেছিলেন। আর কলিঙ্গ যুদ্ধই অশোককে পরিণত করেছিল ধর্মাশোকে।
২৭৩ খ্রিস্টপূর্ব ( 273 BC ) –
মৌর্য সম্রাট অশোক ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বে সিংহাসনে বসেন।
৩২৬ খ্রিস্টপূর্ব (326 BC ) –
৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে গ্রিকবীর আলেকজান্ডার ও ভারতীয় রাজা পুরুর মধ্যে ঝিলামের যুদ্ধ বা হিদাস্পিসের যুদ্ধ হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ অব্দ ( 540 BCE ) –
জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ অব্দ নাগাদ বৈশালীতে জন্মগ্রহণ করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৮ অব্দ ( 468 BCE ) –
খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৮ অব্দ তে মহাবীরের মৃত্যু হয় রাজগৃহ বা রাজগীরের পাবাপুরীতে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৬ অব্দ ( 566 BCE ) –
খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৬ অব্দ তে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়। গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয় নেপালের কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দ ( 486 BCE ) –
গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দে কুশীনগরে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দ ( 58 BCE ) –
খ্রিস্টপূর্ব ৫৮ অব্দ বিক্রমাব্দ নামে পরিচিত।
আরো পড়ুন : ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব
৭৮ খ্রিস্টাব্দ ( 78 AD ) –
কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। সম্রাট কণিষ্ক শকাব্দ প্রচলন করেন।
১০৬ খ্রিস্টাব্দ ( 106 AD ) –
১০৬ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন বংশের সিংহাসনে বসেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।
৩৩৫ খ্রিস্টাব্দ ( 335 AD ) –
৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে (অন্য মতে ৩৪০ খ্রিস্টাব্দে ) গুপ্ত বংশের সিংহাসনে আরোহণ করেন সমুদ্রগুপ্ত।
৩৮০ খ্রিস্টাব্দ ( 380 AD ) –
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেন ৩৮০ খ্রিস্টাব্দে।
৪০১ খ্রিস্টাব্দ ( 401 AD ) –
ফা-হিয়েন ভারতে আসেন ৪০১ খ্রিস্টাব্দে। ফা-হিয়েন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ভারতে এসেছিলেন। ফা-হিয়েনের লেখা বইটির নাম ফো-কুয়ো-কি।
৪৫৮ খ্রিস্টাব্দ ( 458 AD ) –
দুর্ধর্ষ হূণরা ৪৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত আক্রমণ করেছিল। গুপ্তসম্রাট স্কন্দগুপ্ত হূণ আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন।
৬০৬ খ্রিস্টাব্দ ( 606 AD ) –
৬০৬ খ্রিস্টাব্দে থানেশ্বরের রাজা হর্ষবর্ধন হর্ষাব্দ চালু করেন। হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের রাজা ছিলেন। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেছিলেন , তাই এটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হর্ষাব্দ চালু করেন।
৬৩০ খ্রিস্টাব্দ ( 630 AD ) –
হিউয়েন সাঙ ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন। হিউয়েন সাঙ চীন দেশের অধিবাসী ছিলেন। হিউয়েন সাঙের লেখা বইটির নাম সি ইউ কি।
৭৮৮ খ্রিস্টাব্দ ( 788 AD ) –
৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে শঙ্করাচার্যের জন্ম হয়। শঙ্করাচার্য কেরালার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৭১২ খ্রিস্টাব্দ ( 712 AD ) –
আরবদের সিন্ধু বিজয় হয় ৭১২ সালে। সিন্ধুর রাজা ছিলেন দাহির। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু জয় করেন সিন্ধুর রাজা দাহিরকে পরাজিত করে।
১০০০-১০২৭ খ্রিস্টাব্দ ( 1000-1027 AD ) –
১০০০-১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গজনীর সুলতান মামুদ মোট ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন। সুলতান মাহমুদের পিতার নাম সবুক্তগীন। সবুক্তগীন গজনি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১১৯১ খ্রিস্টাব্দ ( 1191 AD ) –
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ ( Battle of Tarain ) ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল। তরাইনের প্রথম যুদ্ধ মহম্মদ ঘোরী ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে হয়েছিল। তরাইনের প্রথম যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দ ( 1192 AD ) –
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ মহম্মদ ঘোরী ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে সংঘটিত হয়। তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন মহম্মদ ঘোরী। আর তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত হন পৃথ্বীরাজ চৌহান।
১২০৬ খ্রিস্টাব্দ ( 1206 AD ) –
দাস বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে। দাস বংশ প্রতিষ্ঠা করেন কুতুবউদ্দিন আইবক। কুতুবউদ্দিন আইবক লাখবক্স নামে পরিচিত ছিলেন। কুতুবউদ্দিন আইবক কুতুব মিনার নির্মাণ করেছিলেন। কুতুব মিনার দিল্লীতে অবস্থিত।
১২৬৬ খ্রিস্টাব্দ ( 1266 AD ) –
১২৬৬ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন বলবন দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। গিয়াসউদ্দিন বলবন চল্লিশ চক্র ভেঙে দিয়েছিলেন। চল্লিশ চক্র প্রবর্তন করেছিলেন ইলতুৎমিস। গিয়াসউদ্দিন বলবন পাইবস ও সিজদা প্রথা প্রচলন বা চালু করেছিলেন।
১২৯৬ খ্রিস্টাব্দ ( 1296 AD ) –
১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খিলজি দিল্লির সিংহাসনে বসেন। আলাউদ্দিন খিলজি-র সেনাপতি ছিলেন মালিক কাফুর। আলাউদ্দিন খিলজি ‘ সিকান্দার-ই-সানি ‘ উপাধি ধারণ করেছিলেন। অথবা বলা যায় যে, আলাউদ্দিন খিলজি ‘ সিকান্দার-ই-সানি ‘ নামে পরিচিত ছিলেন।
১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দ ( 1398 AD ) –
১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লং ভারত আক্রমণ করেন । তৈমুর লং ছিলেন সমরখন্দের শাসক। তৈমুর লং-এর পিতার নাম আমীর তারাগাই।
১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ ( 1451 AD ) –
লোদী বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ। লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বহলুল লোদী। লোদী বংশের শেষ শাসক বা সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদী।
১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ ( 1565 AD ) –
১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধ হয়েছিল। তালিকোটার যুদ্ধ দাক্ষিণাত্যের মুসলমান শাসক এবং বিজয়নগর রাজ্যের মধ্যে হয়েছিল।
১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দ ( 1469 AD ) –
১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে গুরু নানক-এর জন্ম হয়। গুরু নানক-এর জন্মস্থান হোলো লাহোরের তালওয়ান্দি। ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল দিনটিকে গুরু নানক জয়ন্তী হিসাবে পালন করা হয়।
আরো পড়ুন : হজরত মুহাম্মদ কে ছিলেন
” আশা করি এই পোস্টটি পড়ে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সালগুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছো। যদি এবিষয়ে তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি Comment করে আমাকে জানাতে পারো। আর অবশ্যই পোস্টটি অন্যদের সাথে Share কোরো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। ”