voting ink ভোটের কালি

Voting ink: জেনে নিন ভোটে ব্যবহৃত ভোটের কালির ইতিহাস

ভোটের কালির ( voting ink ) ইতিহাসটা কি জানেন ? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আসুন জেনে নিই। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ।

এদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবের নাম ভোট ব্যবস্থা। নুন্যতম ১৮ বছর বয়স হলেই মেলে ভোটদানের অধিকার।

ভোট দেওয়া আমাদের প্রত্যেকের অধিকার। কয়েকমাস আগেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮তম লোকসভা নির্বাচন।

আমরা প্রত্যেকে এই ভোট মহাযজ্ঞে সামিল হয়েছিলাম।

ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের পছন্দের রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আগে বাঁ হাতের তর্জনীতে দেওয়া হয় কালি।

ভোটদানের পর তর্জনী আঙ্গুল সমেত সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু ভোটার পোস্টও করেন। কিন্তু এমন কালি যে সহজে তা মুছে যায়না।

কালির গ্ল্যামার অন্তত সপ্তাহভর আঙ্গুলে জ্বলজ্বল করে। স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন হয়েছিল সেই ১৯৫১-১৯৫২ সালে।

ঠিক দশ বছর পর ১৯৬২ সাল থেকেই চালু হয় ভোটে আঙ্গুলে কালির ব্যবহার।

ব্যালটে পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে ছাপ দিয়ে ভোটদানের রীতি শুরু হয়। এরমধ্যে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল।

বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

ব্যালটের পরিবর্তে দেশের সর্বত্র ইভিএম চালু হয়েছে। EVM- র পুরো নাম ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন। বর্তমানে এই ভোট যন্ত্রের মাধ্যমেই নিজেদের মূল্যবান ভোট দেন দেশের আমজনতা। 

voting ink ভোটের কালি
Voting ink : ভোটের কালি

বর্তমানে জালিয়াতি সর্বত্র। জালিয়াতি এড়াতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।

ঠিক তেমনি ভোটের ক্ষেত্রেও জালিয়াতি রুখতে ভারতের নির্বাচন কমিশন ( ECI ) ‘ইনডেলিবল ইঙ্ক‘ ( Indelible ink ) চালু করেছে।

অর্থাৎ অমোচনীয় কালি, যা সহজে হাতের তর্জনী থেকে মোছা যায় না। এখন প্রশ্ন ভোটের কালি ভারতে তৈরি করে কারা ? কর্ণাটকের মাইসোর নামে একটি জায়গা আছে।

এখানকার মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভারনিশ লিমিটেড ( MPVL ) বছরের পর বছর ধরে এই কালি তৈরি করে আসছে।

বাজার তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেললেও এই কালি কোথাও পাওয়া যাবে না। একমাত্র এই কালি কেনবার অধিকার আছে নির্বাচন কমিশনের।

মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভারনিশ লিমিটেডের সংক্ষিপ্ত নাম হল MPVL। এই কালি নির্মাতা সংস্থার ইতিহাস দীর্ঘ। আগেই বলেছি এই সংস্থার অবস্থান হল মাইশরে।

প্রায় ১৬ একর জায়গা জুড়ে কালির কারখানাটি অবস্থিত। একসময় মহীশুরের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান। ইনি ইতিহাসে পরিচিত মহীশুর শার্দূল নামে।

রাজাদের শিল্পে উৎসাহ থাকায় প্রথমে তাঁরা মোম তৈরির কারখানার উদ্বোধন করেছিলেন। ভারত স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে।

স্বাধীনতার ঠিক দশ বছর আগে প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছিল মাইসোর ল্যাক ফ্যাক্টরি। মোম তৈরির সেই ট্র্যাডিশন কিন্তু আজও বজায় আছে।

লক্ষ্য করে দেখবেন ভোটের ব্যালট বাক্স সিল করার সময় এই মোম গালা হিসেবে আজও ব্যবহার হয়।

আরও জানলে অবাক হবেন আজও প্রতিরাতে ফ্যাক্টরি বন্ধের সময় তালাতে এই মোমকেই সিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানে সেই রাজা ও তাঁর রাজ্য নেই, তাই কোম্পানিটি কর্ণাটক সরকার দ্বারা পুরোপুরি অধিগৃহীত হয়েছে।

এখন এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। বর্তমানে কালির পাশাপাশি প্রাইমার, ডিসতেম্পার, সিনথেটিক এনামেল ইত্যাদিও কিন্তু এখানে তৈরি হচ্ছে।

এটি একটি ভীষণ গোপনীয় ব্যাপার। নির্বাচনী কালির ফর্মুলার উদ্ভাবক ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি।

শুধু এটুকু জানা যায় যে এই কালিতে সিলভার নাইট্রেট নামক একধরণের জিনিস থাকে।

একবার ব্রিটেনের এক সংস্থা এমপিভিএল-র উচ্চপদস্থ এক কর্তার ইন্টারভিউ নিয়েছিল। তাঁরা জানতে চেয়েছিল কালি তৈরির ফর্মুলার ব্যাপারে।

কিন্তু সেই কর্তা জানিয়ে দেন এই ফর্মুলা তারও জানা নেই। একমাত্র সংস্থার সিনিয়র রসায়নবিদ এই ফর্মুলার বিষয়ে জানেন।

যখন তাঁর অবসরের সময় উপস্থিত হয় তখন সংস্থার অন্য দুই রসায়নবিদকে জানিয়ে দেন। তবে তা লিখিত আকারে নয়, গোটা প্রক্রিয়াটি চলে মুখে মুখে।

তবে এই রাসায়নিকটি ক্ষতিকর নয়। গণতন্ত্রের কালি আঙ্গুলে লাগালে তা চট করে ওঠে না।

এখন প্রশ্ন কেন সহজে ভোটের কালি মোছা যায় না ? এর কারণ কালিতে থাকা রাসায়নিক আমাদের আঙ্গুলের চামড়ার সাথে বিক্রিয়া করে পুরোপুরি সেঁটে বসে।

অন্তত ৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। অনেক ঘষাঘষি করেও উঠতে চায় না। তবে কালির বর্ণ বেগুনী হলেও সূর্যের আলট্রা ভায়লেট রশ্মির সংস্পর্শে এসে তা কালচে রঙ ধারণ করে।

একদম সম্প্রতি দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোট। এ ছিল গণতন্ত্রের এক বিরাট উৎসব।

দেশের কোটি কোটি ভোটারের তর্জনীতে কালি লাগানোর জন্য প্রয়োজন পড়েছে প্রায় ২৬.৫৫ লাখ ভায়াল বা শিশি।

তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মতো। ভায়াল পিছু দাম রাখা হয়েছিল ১৭৪ টাকা।

গতবারের তুলনায় এইবার মাত্র ১৪ টাকা দাম বেড়েছে। এক ভায়াল কালি দিয়ে ৭০০ ভোটারের আঙ্গুলে কালি দেওয়া যায়।

তবে জানা যাচ্ছে আগামী দিনে কোম্পানি কালির কৌটোর পরিবর্তে মার্কার পেন ব্যবহার করার কথা চিন্তাভাবনা করছে।

নির্বাচন তো শুধু ভারতে হয় না, ভারতের বাইরেও এই ব্যবস্থা চালু আছে। সেখানেও প্রয়োজন পড়ে নির্বাচনী কালির।

এককথায় বলা যায় ভারত এই কালির সাপ্লায়ার।

থাইল্যান্ড থেকে নাইজেরিয়া বিশ্বের প্রায় ৩০ টিরও বেশি দেশে ভারত এই কালি রপ্তানি করে। এর ফলে MPVL এর ব্যবসাও বাড়ে।

আবার একথাও সত্য, যে কালি সরকার নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে, তা আবার মানুষের প্রাণও নিতে সক্ষম।

এই সত্যতার প্রমাণ আছে। একবার পেরুর সশস্ত্র গেরিলা সংগঠন ‘Shining path’ সেদেশে ভোট বয়কট করার ডাক দেয়।

সেইসাথে হুমকি দিয়েছিল যদি কেউ ভোট দেয় এবং হাতের আঙ্গুলে যদি কালির ছাপ থাকে তাহলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।

আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সময়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছিল।

সেখানে তালিবানরা হুমকি দেয় ভোটদানকারী ব্যক্তির আঙ্গুলটি কেটে নেওয়া হবে। এই কালি দেশে বিদেশে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

1) ভোটের কালি কোথায় তৈরি হয় ?

কর্ণাটকের মাইসোর নামে একটি জায়গা আছে। এখানকার মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভারনিশ লিমিটেড বছরের পর বছর ধরে এই কালি তৈরি করে আসছে।

2 ) ভোটের কালিতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় ?

ভোটের কালিতে থাকে সিলভার নাইট্রেট ( Silver Nitrate ) নামে একধরণের রাসায়নিক উপাদান, যার রাসায়নিক সংকেত AgNO3

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!