ষোড়শ মহাজনপদ । The Sixteen Mahajanapadas in bengali

ষোড়শ মহাজনপদ (The Sixteen Mahajanapadas)

নমস্কার বন্ধু কেমন আছো, আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। এবারের আলোচনার বিষয় হল ষোড়শ মহাজনপদ ‘

ইতিহাসে ষোড়শ মহাজনপদের নাম আশা করি শুনেছ। যদি বিশদে জানতে চাও তাহলে এই পোস্টটি অবশ্যই পড়তে পারো।

এর আগের পোস্টটি করা হয়েছে মৌর্য সম্রাট অশোকের সম্পর্কে।

চাইলে এই পোস্টটিও তুমি পড়ে দেখতে পারো। আশা করি তোমার ভালো লাগবে। 

ষোড়শ মহাজনপদ কি ? :

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরুর অধ্যায় বলা যায়।

জৈন ‘ ভগবতী সূত্র ‘ ও বৌদ্ধ ‘ অঙ্গুত্তর নিকায় ‘ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতে কোন কেন্দ্রীয় রাজশক্তি ছিল না।

বরং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট বড় মিলিয়ে ষোলটি মহাজনপদ বা রাজ্য ছিল। এই ষোলটি রাজ্যকেই ষোড়শ মহাজনপদ বলা হয়।

এই রাজ্যগুলির মধ্যে কোন সদ্ভাব ছিল না। সবসময়ই তারা বিবাদে জড়িয়ে থাকত।

ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে চোদ্দটি ছিল রাজতান্ত্রিক রাজ্য ও দুটি ছিল গণরাজ্য বা প্রজাতান্ত্রিক।

ষোড়শ মহাজনপদ নাম :

ষোড়শ মহাজনপদ কি, তা আগেই আলোচনা করলাম। এবারে এই ষোড়শ মহাজনপদের নামগুলি তোমাকে জানাবো। এই ষোলটি রাজ্য হল —

১) কাশী (বারাণসী), ২) কোশল (অযোধ্যা), ৩) অঙ্গ (পূর্ব বিহার), ৪) মগধ ( দক্ষিণ বিহার), ৫) বৃজি (উত্তর বিহার), ৬) মল্ল ( গোরক্ষপুর ), ৭) বৎস (এলাহাবাদ), ৮) চেদি (বুন্দেলখন্ড), ৯) কুরু (দিল্লী), ১০) পাঞ্চাল (রোহিলখন্ড), ১১) মৎস্য (জয়পুর), ১২) শূরসেন (মথুরা), ১৩) অশ্মক (গোদাবরী উপত্যকা), ১৪) অবন্তী (মালব), ১৫) গান্ধার (পেশোয়ার), ১৬) কম্বোজ (পশ্চিম কাশ্মীর)। 

এই রাজ্যগুলির মধ্যে কোশল, অবন্তী, বৎস ও মগধ সবথেকে শক্তিশালী ছিল। মগধ সবাইকে পরাজিত করে তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। 

ষোড়শ মহাজনপদ ও রাজধানী :

কাশী

কাশী ছিল সেইসময় বেশ শক্তিশালী একটি রাজ্য। বরুণা আর অসি এই নদীদুটির দ্বারা রাজ্যটি ঘেরা ছিল।

কাশীর রাজধানী ছিল আজকের বারাণসী। বরুণা ও অসি এই দুটি নদীর নাম থেকেই সম্ভবত বারাণসী কথাটি এসেছে।

যাই হোক এই রাজ্যটি ছিল সম্পদে পরিপূর্ণ।

কাশীর শাসকরা সমস্ত রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হতেন। ত্রিপিটকের একটি খন্ড বিনয় পিটকে কাশীকে মহান ও সমৃদ্ধশালী বলা হয়েছে। 

কোশল

কোশল রাজ্যটি হল কাশীর প্রতিবেশী রাজ্য এবং বর্তমান অযোধ্যা।

সরযূ নদীর তীরে রাজ্যটি অবস্থিত ছিল।

একসময় কাশী রাজ্যটি কোশলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়ায় কোশলের শক্তি ও গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছিল।

এছাড়াও কপিলাবস্তুর শাক্যবংশ ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক রাজ্যের ওপর কোশলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

কোশলের রাজা ছিলেন প্রসেনজিৎ। তিনি বুদ্ধদেবের সমসাময়িক ছিলেন। 

আরও পড়ো : মৌর্য সম্রাট অশোক

অঙ্গ

অঙ্গের অবস্থান ছিল বর্তমান বিহারের পূর্ব অংশে। মহাভারতেও অঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।

অঙ্গ রাজ্যটির উত্তরে প্রবাহিত হত গঙ্গা নদী। চম্পা ছিল অঙ্গের রাজধানী।

বিভিন্ন পুরাণ থেকে জানা যায় যে, চম্পার পূর্ব নাম ছিল মালিনী।

সম্পদশালী ও বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে চম্পা খ্যাত ছিল।

কিন্তু মগধে হর্ষঙ্ক বংশের উৎপত্তি ঘটায় অঙ্গ ও চম্পা বিলুপ্ত হয়ে যায়। অঙ্গ পরে মগধের অধিকারে চলে আসে।  

মগধ

বিহারের পাটনা ও গয়া জেলা নিয়ে গঠিত হয়েছিল মগধ।

গঙ্গা, শোন, চম্পা নদী দ্বারা মগধ বেষ্টিত ছিল।

অথর্ববেদে মগধের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথমে মগধের রাজধানী ছিল গিরিব্রজ বা রাজগৃহ

পরে পাটলিপুত্রই মগধের রাজধানী হয়েছিল। 

বৃজি

উত্তর বিহারের মজঃফরপুরের কাছে ছিল প্রাচীন বৃজির অবস্থান।

বৃজির রাজধানীর নাম ছিল বৈশালী

ষোলটি মহাজনপদের মধ্যে বৃজি হল একটি গণতান্ত্রিক রাজ্য। কিন্তু মগধের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বৃজি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারেনি। 

মল্ল

উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার কুশীনারায় ছিল প্রাচীন মল্ল-র অবস্থান।

প্রথমে রাজতান্ত্রিক থাকলেও গৌতম বুদ্ধের সময়ে মল্ল প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। বুদ্ধের মৃত্যুর পর মল্ল মগধের অধিকারে চলে যায়। 

চেদি

বুন্দেলখণ্ডের কাছে চেদি অবস্থিত ছিল।

চেদিরা ছিল ভারতের প্রাচীন উপজাতি সম্প্রদায়।

চেদির রাজধানীর নাম ছিল সুক্তিমতী। মহাভারতে সুক্তিমতীর পরিচয় পাওয়া যায়। 

বৎস

বর্তমান এলাহাবাদেই ছিল বৎস-র অবস্থান। রাজধানীর নাম কৌশাম্বী

যমুনার তীরে অবস্থিত ছিল রাজ্যটি। বৎস অর্থনৈতিক ভাবে বেশ স্বচ্ছল ছিল।

এই সমৃদ্ধির কারণ ছিল এই রাজ্যের কার্পাস শিল্প।

কুরু

কুরুর অবস্থান ছিল বর্তমান ভারতের রাজধানী দিল্লীতে। ইন্দ্রপ্রস্থ এর রাজধানী ছিল। 

পাঞ্চাল

কুরুর প্রতিবেশী রাজ্য ছিল এই পাঞ্চাল। রোহিলখন্ড ও উত্তরপ্রদেশের গঙ্গা-যমুনা দোয়াবের এলাকায় ছিল পাঞ্চালের অবস্থান।

উত্তর ও দক্ষিণে পাঞ্চাল বিভক্ত ছিল।

উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র এবং দক্ষিণ পাঞ্চালের কাম্বিল্য। 

মৎস্য

রাজস্থানের জয়পুরের কাছে ছিল এই রাজ্যটির অবস্থান।

বিরাট নগর বা বৈরাট ছিল মৎস্য-র রাজধানী।

প্রথমে চেদিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরে মগধের অধিকারে চলে যায়। 

শূরসেন

ভারতের উত্তরপ্রদেশের মথুরায় এই রাজ্যটি অবস্থিত ছিল।

মথুরাই ছিল এর রাজধানী। গ্রীকদের বর্ণনায় শূরসেন ‘সৌরসেনয়’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

মথুরা ভগবান কৃষ্ণ উপাসনার প্রধান কেন্দ্র ছিল। 

অশ্মক

অশ্মক ছিল একমাত্র দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য। গোদাবরীর তীরে রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল পোতলা বা পোতলী। 

অবন্তী

মধ্যপ্রদেশের পশ্চিম দিকে অবন্তী অবস্থিত ছিল। অবন্তীর রাজধানীর নাম উজ্জয়িনী

মাহিষ্মতী নামে এর আরেকটি রাজধানীও ছিল। মালব আর অবন্তী অভিন্ন বলেই পন্ডিতেরা মনে করেন।

গান্ধার 

পাকিস্তানের পেশোয়ারে ছিল গান্ধারের অবস্থান। গান্ধারের রাজধানী ছিল তক্ষশিলা

গান্ধারের রাজা হিসেবে পুককুসতির নাম জানা যায়। অবন্তীর রাজা প্রদ্যোত-র বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। 

কম্বোজ

গান্ধারের প্রতিবেশী রাজ্য ছিল কম্বোজ। পাকিস্তানের হাজারা জেলার রাজোরিতে ছিল প্রাচীন কম্বোজের অবস্থান। রাজপুর ছিল কম্বোজের রাজধানী। 

মূল্যায়ন :

মহাজনপদ গুলি বেশিরভাগই ছিল বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে।

শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতে ছিল অশ্মক। গঙ্গা-যমুনা উপত্যকায় ছিল মহাজনপদগুলির অবস্থান।

তাই বলা যেতে পারে যে, মধ্যগাঙ্গেয় উপত্যকা খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। 

আরও পড়ো : হরপ্পার নগর পরিকল্পনা

” আশা করি এই পোস্টটি পড়ে তোমার ভালো লেগেছে। যদি তোমার কোন মতামত থাকে তাহলে তুমি কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভালো থেকো বন্ধু , আর ইতিহাস পড়তে থেকো “

2 thoughts on “ষোড়শ মহাজনপদ । The Sixteen Mahajanapadas in bengali”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!