প্রস্তর যুগ (Stone Age)
নমস্কার বন্ধু কেমন আছো, আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। আজ আলোচনা করবো প্রস্তর যুগ সম্পর্কে। ছোটোবেলায় ইতিহাস বইতে প্রস্তর যুগ সম্বন্ধে আশা করি পড়েছো নিশ্চয়। যদি আরও বিশদে জানতে চাও তাহলে এই পোস্টটি তোমায় অবশ্যই পড়তে হবে।
প্রস্তর কথাটার মানে হল পাথর। অর্থাৎ এই যুগ ছিল পাথরের যুগ। এই যুগে পাথরের তৈরি বিভিন্ন অস্ত্র , যন্ত্রপাতি ব্যবহার হত। তখন তো আজকের দিনের মতো লোহার তৈরি অস্ত্র , যন্ত্রপাতি পাওয়া যেত না। তাই তখনকার মানুষেরা পাথর দিয়ে তাদের অস্ত্র গুলি বানাতো। একবার ভাবো বন্ধু কতটা পরিশ্রম হত তাদের।
তাহলে আর দেরি না করে চলো ফিরে দেখি সেই পাথরের যুগটাকে।
প্রথমেই জেনে রাখো , ভারতবর্ষে প্রস্তর যুগ কে সাধারণভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
কি কি সেগুলি ? জেনে নাও —–
১) পুরাতন প্রস্তর যুগ অথবা প্যালিওলিথিক।
২) মধ্য প্রস্তর যুগ অথবা মেসোলিথিক।
৩) নব্যপ্রস্তর যুগ অথবা নিওলিথিক।
উপরে উল্লেখ করা এই প্রতিটা প্রস্তর যুগ সম্পর্কে জানবো। আমরা প্রায় সবাই ইতিহাস পড়তে খুব ভালোবাসি। আমার মনে হয় বন্ধু তুমিও ইতিহাস পড়তে নিশ্চই খুব ভালোবাসো। আর যদি তা হয় খুব প্রাচীন দিনের ইতিহাস। ইতিহাস পিপাসু মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রাচীন কালে মানুষ কিভাবে জীবনধারণ করত ?
তাদের ব্যবহার করা জিনিস গুলি কি কি ছিল ?
সেগুলির ধরণই বা কেমন ছিল ?
কেমন ছিল তাদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা ?
এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবো প্রস্তর যুগ সম্পর্কিত এই আলোচনায়।
পুরাতন প্রস্তর যুগ বা প্যালিওলিথিক :
প্রথমেই প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল আমাদের জানা দরকার। কিন্তু এক্ষেত্ৰে প্রাচীন প্রস্তর যুগ এর সময়কাল নির্ণয় করা কঠিন।
তবু অনুমান করে বলা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০,০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০,০০০অব্দের মাঝের এই সময়কালই প্রাচীন প্রস্তর যুগ।
বর্তমান পাকিস্তানের সোয়ান উপত্যকা, দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের নিদর্শনের দেখা মিলেছে।
এই যুগের হাতিয়ার গুলি তৈরি হয়েছে প্রধানত পাথর থেকে। আমরা অনেকেই হয়তো কোয়ার্টজ, ব্যাসাল্ট এই সমস্ত পাথরের নাম শুনেছি।
এই হাতিয়ার গুলি তৈরি হয়েছিল এইসমস্ত পাথর থেকেই। পাথরের তৈরি হাতিয়ার বেশি পাওয়া গেলেও হাড়ের তৈরি জিনিসও কিছু মিলেছে।
প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ার :
প্রাচীন প্রস্তর যুগে পাওয়া হাতিয়ার গুলি ছিল যেমন – হাত কুঠার , ছেদক , কোনো কিছু ফুটো করবার হাতিয়ার , চাছার বা কোনো কিছু ছোলার হাতিয়ার ইত্যাদি।
হাতকুঠার গুলি তৈরি হত কোয়ার্টজ পাথর দিয়ে। আসল পাথরখন্ড গুলোকে চটিয়ে হাতকুঠার গুলো তৈরি হত। পরবর্তীকালে কর্ণাটক , চেন্নাইতে এইরকম বহু হাত কুঠার পাওয়া গেছে।
এই ধরণের হাতিয়ার গুলি আকুইলিয়ান বা আসিউলিয়ান হাতিয়ার নামে পরিচিত।
মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা গুহার নাম আমরা অনেকেই হয়তো শুনেছি। এই গুহাটি বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে পর্যটক স্থান হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে বসে তৈরি হাতিয়ার গুলিও ছিল হাত কুঠার ও ছেদক।
আরও কিছুকাল পর হাতিয়ার গুলির গঠন পাল্টে যেতে থাকে। আগের তুলনায় আরও ছোট ও হালকা হয়ে যায়।
হাতিয়ার গুলির মধ্যে ব্লেডের ব্যবহার দেখা দিতে শুরু করে। আগের হাতিয়ার গুলির থেকে আরও বেশি ধারালো করতেই ব্লেডের এই ব্যবহার। কোয়ার্টজ পাথরের বদলে এগেট ,জ্যাস্পার পাথরগুলি ব্যবহার হওয়া শুরু হয়।
জীবনধারা :
এই যুগের মানুষের বসবাস ছিল হয় পাহাড়ের গুহায় নয়তো বা নদীর কাছাকাছি কোনো জায়গায়। অর্থাৎ কোনো স্থায়ী বসতি তাদের ছিল না। যাযাবরের জীবন ছিল তাদের।
যেহেতু তারা চাষবাস জানতো না তাই বনের ফলমূল খেয়েই তাদের বেঁচে থাকতে হতো।
নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই হাতিয়ার গুলি তারা ব্যবহার করতো। সামাজিক রীতি-নীতি আইন কানুন এসবের কিছুই ছিল না সেইসময়।
তবু মানুষ বাস করতো একজোট হয়ে। অর্থনৈতিক জীবন ছিল খুবই সরল সাদামাটা। অর্থনীতির তিনটি প্রধান উৎস – কৃষি ,বাণিজ্য , শিল্প তাদের পক্ষে এই চিন্তা ধারা ছিল এককথায় দুঃসহ।
ধীরে ধীরে তারা আগুন জ্বালতে শেখে। প্রচন্ড ঠান্ডায় শরীর কে বাঁচাবার জন্য পশুর চামড়া এবং গাছের ছাল দিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শেখে।
তবে তারা শিকারে প্রচন্ড দক্ষ ছিল। প্রাচীন প্রস্তর যুগে নেগ্রিটো শ্রেণীর মানুষ সংখ্যায় বেশি ছিল।
মধ্যপ্রস্তর যুগ বা মেসোলিথিক :
পুরপ্রস্তর যুগের পর দ্বিতীয় পর্যায় টি হল মধ্যপ্রস্তর যুগ। ইংরাজি ভাষায় যা মেসোলিথিক নামে পরিচিত। আবার মাইক্রোলিথিক বা ক্ষুদ্রপ্রস্তর যুগ বলেও একে ডাকা হয়।
তার কারণ এই যুগের হাতিয়ার গুলি ছিল আকারে ছোট। বেশির ভাগ হাতিয়ারের দৈর্ঘ্য ছিল ১ থেকে তিন সেন্টিমিটার। কিছু হাতিয়ার ছিল ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা।
অনুমান করে বলা যায় যে , খ্রীষ্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ ও খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের এই মাঝের সময়টাই মধ্যপ্রস্তর যুগ। এই যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে গুজরাটের লাঙ্গনাজ ,দক্ষিণ ভারতের তিনেভেলী ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে।
মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বর্তমান বিহার রাজ্যের পৈসারা তে। এছাড়া পাটনা , ভাগলপুর , মুঙ্গের , সিংভূম এই সমস্ত জেলা থেকেও এই যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর রেলস্টেশন এর কাছে দামোদর নদীর কাছে অবস্থিত বীরভানপুরে মধ্যপ্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ওড়িশা রাজ্যের ঢেঙ্কানালেও এই যুগের চিহ্ন মিলেছে।
হাতিয়ার :
মধ্যপ্রস্তর যুগের হাতিয়ারগুলো তৈরি হত কোয়ার্টজ , চ্যালসেদনি এবং চার্ট পাথর দিয়ে।
এই যুগের হাতিয়ার গুলি হল -বাটালি ,চাচঁনি , ব্লেড , তুরপুন , ত্রিকোণী বা তিনকোণা ছোটো পাথরের হাতিয়ার।
কিছু তীর-ধনুক পাওয়া গেছে। যা থেকে মনে হয় এগুলি শিকারের কাজে ব্যবহার হত।
জীবনধারা :
এই সময়কালের মানুষ নিজের পেটের তাগিদে গরু , ছাগল , ভেড়া , হরিণ , শুয়োর প্রভৃতি প্রাণীর মাংস খেত। রাজস্থানের বাগোরে ৪০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার চওড়া গোলাকার জায়গা পাওয়া গেছে।
মনে করা হয় যে , এই গোলাকার জায়গা বা বেদী তে এই প্রাণী গুলির মাংস কাটা হত।
মধ্যপ্রস্তর যুগের কিছু কবর এর সন্ধান পাওয়া গেছে। সংখ্যায় প্রায় ১৫ টি। কবর গুলি অনেকটা ডিমের আকারের। এক্ষেত্রে মৃতদেহগুলি কবরে শোয়ানোর আগে কালো বা ধূসর রঙের মাটি কবরে ছড়িয়ে দেওয়া হত।
মৃতের সঙ্গে থাকতো হাড়ের গয়না। এছাড়াও থাকতো পোড়া জন্তুর হাড় , হাড় দিয়ে তৈরি তীর।
কোনো কবরে দেখা গেছে নারীর কঙ্কাল পুরুষের বাঁদিকে শোয়ানো।
এক্ষেত্রে পুরুষের ডানহাত তলপেটের উপর রাখা। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে তলপেটের উপর রাখা আছে বাঁহাত।
এইসবকিছুই কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস কে ইঙ্গিত করে।
নব্যপ্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক :
এই যুগ বিভাগের তৃতীয় বা শেষ পর্যায়টি হল নব্যপ্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক। নব্য কেন বলা হয়েছে ? তার কারণ সময় যত এগিয়েছে , তার সাথে সাথে মানুষের জ্ঞান , চিন্তা ধারা , বেঁচে থাকার জন্য নতুন পরিকল্পনা সবকিছুই নতুন ভাবে বিকশিত হয়েছিল।
তাই এর নাম হয়েছে নব্য। অর্থাৎ নতুন।
খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০০ বা তারও কিছুটা আগে থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্যপ্রস্তর যুগ বলা হয়ে থাকে। নতুন প্রস্তর যুগের সবচেয়ে ভালো নিদর্শন পাওয়া গেছে বেলুচিস্তান ও সিন্ধু অঞ্চলে। এছাড়াও বিহার , ওড়িশা , আসাম , কাশ্মীর এবং দক্ষিণ ভারতেও এই যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
বালুচিস্তানের বোলান নদীর ধারে গড়ে উঠেছিল মেহেরগড় সভ্যতা। আমরা অনেকেই হয়তো এই সভ্যতার নাম শুনেছি। কমপক্ষে ৫০০ একর পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল এই সভ্যতা। এই সভ্যতা টি নব্যপ্রস্তর যুগের সভ্যতা।
দেখা গেছে যে এই সভ্যতায় বাস করা মানুষের বাড়িগুলি কাদামাটির তৈরি ইটের ছিল। রোদে শুকনো করে এই ইট গুলিকে তৈরি করা হত। এই বাড়িগুলি ছোট ছোট কামরায় বিভক্ত ছিল। ঘরগুলোর ভেতরে আগুন রাখার জায়গা ছিল। ঘর গরম রাখার জন্য আগুনের ব্যবহার হত।
হাতিয়ার :
নব্যপ্রস্তর যুগের মসৃণ পাথরের কিছু জিনিস পরবর্তীকালে পাওয়া গেছে। চাষবাসের কাজে ব্যবহার হওয়া কাস্তের পাত মিলেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে চাষবাসের কাজে ব্যবহার হওয়া এটাই প্রাচীন হাতিয়ার। এছাড়াও আরও কিছু হাতিয়ার ছিল যেমন- হামানদিস্তা , জাঁতা।
জীবনধারা :
মধ্যপ্রস্তর যুগের মতো এই যুগেতেও মৃতদেহকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হত। মনে করা হয় যে ,মৃত ব্যাক্তিকে লাল রং মাখিয়ে কবর দেওয়া হত।
মৃতের শরীরগুলি কবরের ভেতর কুঁকড়ে শোয়ানো থাকতো। মৃতের সাথে দেওয়া হত ঝিনুকের লকেট। দেওয়া হত হাড়ের তৈরি আংটি , পাথরের পুঁতি , বালা ও পাথরের বাটি।
এমনকি পাথরের কুঠার পর্যন্ত কবর গুলিতে দেখা গেছে।
লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানিও। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।
2nd line of Neolithic Age one false words here, check it now , And improve yours knowledge. This will be made a student’s big problem.
ভুলের জন্য আমি দুঃখিত। ধন্যবাদ আপনাকে, ভুলটি চিহ্নিত করবার জন্য। ভালো থাকবেন।
Nice work
Thank you