ঋক-বৈদিক অর্থনীতি (Rig Vedic Economy)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভালো আছো।
গত ব্লগে ঋক-বৈদিক যুগের সমাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। এবারে তোমাকে ঋক-বৈদিক অর্থনীতি (Rig Vedic Economy) সম্পর্কে জানাবো। যদি আগের লেখাটা না পড়ে থাকো তাহলে সেটা পড়বার জন্য তোমাকে অনুরোধ করছি। আশা রাখি তুমি অবশ্যই লেখাটি পড়বে।
প্রথমেই তোমাকে জানিয়ে রাখি বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা। গ্রামই ছিল আর্যদের জীবনের মূল ভিত্তি।
আর এই অর্থনেতিক জীবনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। ঋগ্বেদের বিভিন্ন সূক্তে নগরের কথার কোন উল্লেখ নেই।
বরং সেখানে নগর বা ‘পুর’ ধ্বংসের কথা বলা আছে। তাই এই যুগে নগর অর্থনীতির বদলে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি মানুষের প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছিল।
আশা করি শুরুটা তুমি বুঝতে পেরেছ। যাই হোক, বৈদিক যুগের অর্থনীতির বিভিন্ন দিকের আলোচনা নীচে দেওয়া হল —-
কৃষি (Agriculture) :
ঋক-বৈদিক যুগের আর্যদের অর্থনীতি নির্ভর করত কৃষির উপর। প্রতিটি পরিবারে চাষের জন্যে কৃষিজমি ছিল। কর্ষণ করা জমিকে ‘ক্ষেত্র’ বা ‘উর্বরা’ বলা হত। অ-কর্ষণ জমিকে বলা হত ‘অকৃষিবল’।
জমি কর্ষণ করা হত লাঙ্গল দ্বারা। এছাড়াও দাত্র বা কাস্তে, খনিত্র (খনন করার যন্ত্র) চাষের কাজে ব্যবহার হত। ঋগ্বেদে কৃষককে বলা হয়েছে ‘কৃষ্টি’।
কৃষির জন্যে জলসেচ ব্যবস্থা উপলব্ধ ছিল। জমিতে সার প্রয়োগের কথা ঋগ্বেদে বলা হয়েছে। ধান ও যব ছিল প্রধান ফসল।
আরও পড়ুন : ঋক-বৈদিক সমাজ
পশুপালন (Animal Husbandry) :
ঋক-বৈদিক যুগে অর্থনীতিতে পশুপালনের বিশেষ ভূমিকা ছিল। আর্যরা ছিল মূলত পশুপালক। গাভী, বলদ, ষাঁড় আর্যদের মূল্যবান পশু ছিল। গাভীর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ছিল বেশ অটুট। ঋগ্বেদে গরুকে বলা হয়েছে ‘অঘ্ন্যা’।
অর্থাৎ যাকে হত্যা করা যায় না। ‘গবিষ্টি’ শব্দটি দিয়ে গরু দখলের যুদ্ধের কথা ঋগ্বেদে আছে। বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে গরু ব্যবহার হত।
গরু ছাড়াও ঘোড়া, বলদ, ষাঁড়কেও মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেইসময় একজন ব্যক্তির অর্থের পরিমাপ করা হত তার কাছে থাকা গরুর সংখ্যা দিয়ে।
মালিকানা নিশ্চিত করা হত গরুর কানে ছাপ দিয়ে। তাই অর্থনীতিতে গরুর ভূমিকা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। ভেড়ার লোম থেকে প্রাপ্ত পশমের চাহিদা ছিল ব্যাপক। ঘোড়াকে যুদ্ধের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হত।
শিল্প (Crafts) :
ঋক-বৈদিক যুগে শিল্প ছিল উন্নতমানের। বস্ত্রশিল্প, ধাতুশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদি প্রসার লাভ করেছিল। ব্রোঞ্জের তৈরি হাতিয়ার ও অস্ত্র হরপ্পার থেকেও উন্নত ছিল।
ধাতুর তৈরি বিভিন্ন জিনিস গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হত। লাঙ্গল, রথ, গৃহ নির্মাণের জন্যে কাঠের বহুল ব্যবহার ছিল। চর্মশিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যাগ, ধনুকের গুণ তৈরির ফিতা, চাবুক ইত্যাদি।
এছাড়াও পোড়ামাটির বহু বাসন তৈরি করা হত। মাটির বাসন তৈরি করতেন কুম্ভকাররা।
কুটির শিল্প আর্যদের অর্থনীতির আর এক দিক। যেমন- ঘাসের তৈরি মাদুর, বস্ত্র বোনা প্রভৃতি। তবে লোহার ব্যবহার কিন্তু ছিল না।
ব্যবসা-বাণিজ্য (Business and Trade) :
ঋক-বৈদিক অর্থনীতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের একটা ভূমিকা ছিল। আর্যদের আয়ের অতিরিক্ত উৎস ব্যবসা বাণিজ্য থেকে আসত। বাণিজ্য চলত বিনিময় প্রথার মাধ্যমে। বাণিজ্যে স্থলপথই ব্যবহার হত।
জলপথ ব্যবহার হত কিনা তা বিশেষ জানা যায় না। কারণ ঋগ্বেদে সমুদ্র বাণিজ্যের উল্লেখ অনুপস্থিত।
স্থলপথে বাণিজ্যে ব্যবহৃত যানবাহন ছিল রথ ও বলদে টানা গাড়ি। গরু ছিল বিনিময়ের মাধ্যম। অবশেষে এল ‘নিস্ক’ নামে সোনার মুদ্রা।
উপসংহার (Conclusion) :
ঋক-বৈদিক যুগের অর্থনীতি ছিল গ্রামীণ অর্থনীতি। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরবর্তী বৈদিক যুগে গিয়ে পরিবর্তিত হয়। আরও উন্নত রূপ নেয়। বৈদিক সভ্যতা এক উন্নত সভ্যতা হয়ে ওঠে। ভারতীয় সভ্যতা বলতে এই বৈদিক সভ্যতাকেই বোঝায়।
আশা করি বন্ধু তুমি পুরো বিষয়টি পড়ে নিশ্চই বুঝতে পেরেছ।
লেখাটি পুরো পড়ার জন্যে তোমায় ধন্যবাদ জানাই।
আরও পড়ো : সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার সম্পর্ক
” লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগল তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো। “