ঋক-বৈদিক আর্যদের ধর্মীয় জীবন (Religious life of Rig-Vedic Aryan’s)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। এর আগে আর্যদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনযাত্রা নিয়ে পোস্ট করেছি এই ওয়েবসাইটে। যদি পড়ে না থাকো তাহলে অবশ্যই পড়ে নিও।
এবারের বিষয় হল ঋক-বৈদিক আর্যদের ধর্মীয় জীবনযাত্রা কেমন ছিল সেসম্পর্কে। তাহলে শুরু করা যাক—-
পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মধ্যে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম হলো ঋগ্বেদ। এতে ১০২৮ টি স্তোত্র রয়েছে।
ঋগ্বেদ থেকে আর্যদের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা সম্ভব।
তাঁদের ধর্মবিশ্বাস ছিল অত্যন্ত গাঢ়।
আমরা জানি আর্যরা বাইরে থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। তাই তাঁদের ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল এই ভারতবর্ষেই।
প্রকৃতির উপাসনা :
আর্যদের ধর্মবিশ্বাসের মূলে ছিল প্রকৃতির উপাসনা। তাঁরা প্রকৃতিকে পূজা করত।
তাঁদের ধারণা ছিল প্রকৃতিতে কোন অলৌকিক প্রাণের অস্তিত্ব আছে।
বজ্র-বিদ্যুৎ, ঝড়, সমুদ্র, চাঁদ, সূর্য, আকাশ প্রভৃতিকে দৈব শক্তি বলে তাঁরা বিশ্বাস করত।
পুরুষ দেবতার প্রাধান্য :
তুমি নিশ্চই জানো বন্ধু হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃদেবতার আরাধনা হত।
কিন্তু এযুগে মাতৃদেবতার আরাধনা অনেকটা ম্লান হয়ে পড়ে।
ঋগ্বেদে পৃথিবী, অদিতি, উষা, সরস্বতী প্রভৃতি মাতৃদেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবুও এঁদের স্থান ছিল গৌণ।
তাই বলা যেতে পারে মাতৃদেবতার বদলে পুরুষ দেবতার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
আরও পড়ো : https://iitihas.com/social-reformer-ram-mohan-roy-in-bengali/
আরও পড়ো : https://iitihas.com/rig-vedic-society-in-bengali/
বিভিন্ন দেবদেবী :
ঋগ্বেদে বিভিন্ন দেবদেবীর বিবরণ পাওয়া যায়।
এই দেবদেবীদের পূজা আর্যদের জীবনের এক অন্যতম অঙ্গ ছিল।
দৌ বা দৌস – আর্যদের স্বর্গীয় দেবতাদের মধ্যে দৌ বা দৌস প্রাচীনতম। এছাড়াও ছিল পৃথিবী। এককথায় এঁরা ছিলেন আর্যদের দেব-দেবী বা পিতা-মাতা। গ্রীক দেবতা ‘জীয়াসের ‘ সাথে এর তুলনা করা হয়।
ইন্দ্র – ঋক-বৈদিক আর্যদের মহান ও শক্তিমান দেবতা ছিলেন ইন্দ্র। ঋগ্বেদে ২৫০ টি স্তোত্র ইন্দ্রকে নিবেদন করা হয়েছে। তিনি ছিলেন বজ্র ও যুদ্ধের দেবতা। ইন্দ্রকে পুরন্দর হিসেবেও জানা যায়। কারণ তিনি পুর বা দুর্গ ধ্বংস করেছিলেন।
অগ্নি – আগুনের দেবতা ছিলেন অগ্নি। দেবতা মানুষের মধ্যে যোগসূত্র ছিলেন অগ্নি। ল্যাটিন শব্দ ‘ইগনিয়াস ’ এর সাথে অগ্নির নামের একটি মিল পাওয়া যায়। ইগনিয়াস-র অর্থ হল আগুন। যজ্ঞে আগুনে আহুতি দিতেন পুরোহিতেরা। তাই অগ্নির সাথে মানুষের একটা নিবিড় যোগ রয়েছে।
বরুণ – বরুণ ছিলেন জাগতিক ঘটনার নিয়ন্ত্রক। তাঁর কাজ মানুষের পাপের শাস্তি দেওয়া। গ্রীক দেবতা ইউরেনাস -র সাথে বরুণকে তুলনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদে যথেষ্ট মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বরুণদেব। আর্যদের ধারণা ছিল যে, পৃথিবীতে ঋতুচক্রের আবর্তন নির্ভর করত বরুণ দেবের উপর।
এঁরা ছাড়াও অন্য দেবতারা ছিলেন যেমন—
সোম – উত্তেজক পানীয় সোমরসের দেবতা ছিলেন সোম।
মরুৎ – বজ্রের দেবতা।
পর্জন্য – ইনি বৃষ্টির ও মেঘের দেবতা ছিলেন।
সূর্য – আলোকের দেবতা।
যম – মৃত্যুর দেবতা হিসেবে মানা হত।
ঋক-বৈদিক দেবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সাবিত্রী, উষা, সরস্বতী প্রমুখরা।
সাবিত্রী, উষা এঁরা ছিলেন সৌরমণ্ডলের দেবী।
উষা – প্রত্যুষের দেবী হলেন উষা। যিনি আলোর দ্বারা অন্ধকারকে দূর করেন। উপহার দেন একটি নতুন সকাল। আর্যরা মনে করত ঊষার প্রভাবেই আকাশে পাখির দল উড়ে বেড়ায়। প্রাণীরা তাঁদের জীবিকার সন্ধান করতে পারে।
সরস্বতী – ঋগ্বেদে সরস্বতীকে নদীর দেবী হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও পরে ইনি শিক্ষার দেবী রূপেই স্বীকৃতি পেয়েছেন।
যজ্ঞানুষ্ঠান :
ঋক-বৈদিক আর্যদের যজ্ঞ একটি প্রধান অঙ্গ ছিল।
যজ্ঞ করা হত দেবতাদের সন্তুষ্ট করবার জন্য। এছাড়াও আশীর্বাদ লাভেরও চেষ্টা করা হত।
আর্যদের বিশ্বাস ছিল মৃত্যুর পর মানুষের সবকিছু শেষ হয়ে যায় না।
মৃত্যুর দেবতা যমের কাছে তাঁকে পাঠানো হয়।
তাই বেঁচে থাকা অবস্থায় দেবতাদের সান্নিধ্যে থাকার চেষ্টাই আর্যদের কাছে প্রধান লক্ষ্য ছিল।
এই অমরত্ব লাভের জন্যই যজ্ঞের আয়োজন করা হত।
পরিবার ছাড়াও সমগ্র গ্রামের সবাই মিলে যজ্ঞের অনুষ্ঠান করত।
যজ্ঞের আগুনে আহুতি হিসেবে দেওয়া হত ঘি।
যজ্ঞের কাজ শুরু করতেন পুরোহিতরা। আর্যদের বিশ্বাস ছিল পুরোহিতদের যজ্ঞে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন।প্রজাদের আশীর্বাদ করেন।
তাই মনে করা হয় যজ্ঞে পুরোহিতদের আধিপত্য ছিল। এমনকি রাজাও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেন।
তাই ঐতিহাসিক ডঃ রোমিলা থাপার বলেছেন, “যজ্ঞের মধ্য দিয়ে মানুষ সামাজিক বিধিনিষেধ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেত ”।
“পোস্টটি পড়ে যদি তোমার ভালো লেগে থাকে তাহলে তুমি কমেন্টে তোমার মতামত জানিও। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো “।