চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভাল আছো। এবারের এই পোস্টে আলোচনার বিষয় হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। আশা করি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে নিশ্চই তুমি কমবেশী পড়েছ । যদি বিশদে জানতে চাও তাহলে এই পোস্টটি তুমি পড়তে পারো।
তাহলে চলো মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। বন্ধু প্রথমেই জেনে নেব চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আসলে কী ?
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement) কী ? :
১৭৭২ খ্রীষ্টাব্দে বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস। এর কিছু বছর পর লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলায় গভর্নর জেনারেল (১৭৮৬) পদে যোগ দেন। প্রায় তিন বছর ধরে তিনি বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান।
ইংল্যান্ডের জমিদার বংশের সন্তান ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। তাই জমিদারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
দেশীয় জমিদারদের সাথে তিনি ১০ বছরের জন্য একটি বন্দোবস্ত করেন। প্রথমে এটি দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত ছিল।
এই ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ দিতে গিয়ে কোম্পানীর রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী জন শোরের সাথে কর্নওয়ালিসের বিতর্ক শুরু হয়।
অভিজ্ঞ শোরের মত ছিল যে, দশ বছরের বন্দোবস্তকে ধীরে ধীরে স্থায়ী বন্দোবস্তের রূপ দেওয়া উচিত।
কিন্তু কর্নওয়ালিস শোরের এই মত মানতে রাজী ছিলেন না। তাঁর দাবী ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে দেশীয় জমিদাররা কৃষক স্বার্থের দিকেই নজর দেবেন।
এদিকে ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষও কর্নওয়ালিসকে এবিষয়ে সাহায্য করে।
অবশেষে কর্নওয়ালিস দশ বছর মেয়াদী বন্দোবস্তকেই ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সালটি ছিল ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দের ২২ শে মার্চ।
আরও পড়ো : রেগুলেটিং অ্যাক্ট ও পিটের ভারত আইন
প্রথম কোথায় চালু হয় ? :
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথম চালু হয় বাংলা ও বিহারে। পরে ধীরে ধীরে উড়িষ্যা, বারাণসী ও মাদ্রাজের উত্তর অংশে চালু করা হয়।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা জমির মালিকে পরিণত হন। আর অন্যদিকে কৃষকরা হয়ে যায় ভাড়াটে চাষী।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মূল কথা :
ক) জমির ইজারাদাররা সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব জমা দিলে চিরকাল তাঁরা জমিদারী ভোগ দখল করতে পারবে।
খ) যদি এই রাজস্ব দিতে না পারে তাহলে জমিদারী বাজেয়াপ্ত হবে।
গ) কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও রাজস্ব মাফ করা হবে না। রাজস্বের পরিমাণও বাড়ানো যাবে না।
উদ্দেশ্য :
এই ব্যবস্থা চালু করার পিছনে লর্ড কর্নওয়ালিসের কিছু উদ্দেশ্য ছিল। জানব সেগুলি —-
১) আগে বছর বছর বন্দোবস্ত ব্যবস্থা চালু ছিল। ভূমি-রাজস্ব থেকে কতটা আয় হবে তা নিশ্চিত ছিল না। কর্নওয়ালিস স্থায়ীভাবে তা চালু করে রাজস্ব আয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন।
২) ভারতে কোম্পানির স্থায়ী বন্ধু কেউ ছিল না। এই বন্দোবস্তের ফলে এদেশের জমিদারদের কোম্পানি বন্ধু হিসেবে পেতে চেয়েছিল।
৩) বাংলার কৃষকদের মধ্যে কোম্পানিকে নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল। কর্নওয়ালিস জমিদারদের দিয়ে কৃষকদের ক্ষোভ মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন।
৪) কর্নওয়ালিসের মূল উদ্দেশ্য ছিল এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল :
১) রাজস্ব আদায় ও তার পরিমাণ নির্দিষ্ট হয়।
২) রাজস্ব আয় নির্দিষ্ট হবার ফলে সরকারের বাজেট পেশ করা সহজ হয়।
৩) খাজনার হার বেঁধে দেওয়ার ফলে কৃষকদের উপর উৎপীড়নের সম্ভাবনা ছিল না।
৪) জমিদাররা জমির মালিকানা লাভ করায় জমির উন্নতির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
৫) গ্রামগুলিতে কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সাথে গ্রামগুলিও উন্নত হতে থাকে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল :
১) জমির মালিকানা জমিদাররা পাওয়ায় প্রজাদের দুর্ভোগ চূড়ান্ত হয়েছিল।
২) জমিদার তাঁর রাজস্ব সূর্যাস্তের আগে কোম্পানিকে না দিতে পারলে ‘সূর্যাস্ত আইন’ (Sunset Law) অনুযায়ী তাঁর জমি নিলাম করা হত। এর ফলে বহু জমিদার পথের ভিখারীতে পরিণত হয়।
৩) জমির গুণ বিচার না করেই তার রাজস্ব ধার্য করা হয়েছিল। ফলে রাজস্বের হার ছিল বেশী।
৪) কৃষিতে গুরুত্ব বেশী দেওয়ায় গ্রামগুলিতে শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়।
৫) রাজস্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট হওয়ায় সরকার উদ্বৃত্ত মেটাতে করের বোঝা বাড়াতে থাকে।
৬) অতিরিক্ত রাজস্বের চাপে কৃষকরা মহাজনদের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়। পরিণামে তাঁদের খাদ্যের অভাব প্রকট হয়।
পরিশেষে :
সব মিলিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকদের জন্যে মোটেও হিতকর ছিল না। তাঁদের দুঃখ দুর্দশা বরং বেড়েছিল। এই দুর্দশা মেটানোর জন্য সরকার আইন চালু করলেও কৃষকদের দুঃখের অবসান হয়নি। জমিদারী ব্যবস্থাও মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
আরও পড়ো : ইতিহাসের জি. কে.
“পোস্টটি পড়ে যদি তোমার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্টে তুমি নিশ্চই জানিও। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো “।
অনেক অনেক ভাল লাগছে
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়বার জন্য, চাইলে অন্য পোস্টগুলিও আপনি পড়তে পারেন। ভালো থাকবেন…
Thank you
পড়বার জন্য ধন্যবাদ।