কোহিনূর হীরে ( Kohinoor Diamond ) -র জন্ম বৃত্তান্ত, ঘিরে থাকা রহস্য এবং দীর্ঘ সফর সূচি একে পৃথিবী বিখ্যাত করেছে।
কোহ-ই-নূর হীরের ইতিহাস জানতে কমবেশি প্রত্যেকেই আগ্রহী।
তার ওপর আবার ভারতেই আবিষ্কার হওয়া। ধরুন আপনি একটি হীরের খনি থেকে একখণ্ড হীরে পেয়েছেন।
এখন হীরেটির আসল মালিক আপনিই। আপনি হীরেটিকে একটি সিন্দুকে রেখেছেন। একদিন আকস্মিক ভাবে হীরেটি সিন্দুক থেকে চুরি গেল।
এখন আপনার পাওয়া হীরেটি চলে গেছে অন্য কারোর কাছে। হয়তো আবার, হাতবদল হয়ে বিভিন্ন জনের কাছে আপনার সাধের হীরেটি ঘুরছে।
আসলে এটা একটা উদাহরণ দিলাম। পৃথিবী বিখ্যাত যে হীরেটির কথা এখানে বলা হয়েছে তার ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে।
জন্ম তার ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গুন্তুর জেলার একটি হীরের খনিতে। সময় যত গড়িয়েছে সে বিভিন্ন শাসকদের হাত ঘুরে পৌঁছেছে টাওয়ার অফ লন্ডনে।
এটাই এখন তার স্থায়ী ঠিকানা। ভারতের ‘কাকতিয় রাজবংশের’ খাজানা থেকে হীরেটি ব্রিটিশ রানীর মুকুটে।
জুটেছে ‘অভিশপ্ত’ কথার তকমা। কিন্তু এই দীর্ঘ সফর কি সত্যিই সহজ ছিল ? কিভাবে হাতবদল হয়েছিল এর ?
দীর্ঘ সফরের পিছনে লুকিয়ে আছে রোমাঞ্চকর অজানা ইতিহাস। সেই অজানা ইতিহাস আর সেইসাথে কেন এটিকে অভিশপ্ত বলা হয় তার কথাই জানাবো।
কোহিনূর হীরের ইতিহাস
আবিষ্কার –
ইতিহাসে একে কুখ্যাত হীরে হিসেবেই জানা যায়। এর উৎস কোথায় বা এটি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে অনেক মত রয়েছে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মচারী ছিলেন থিও মেটকাফ। তিনি তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছিলেন এই হীরেটি শ্রীকৃষ্ণের জীবদ্দশায় পাওয়া গিয়েছিল।
কিন্তু ঐতিহাসিকরা একথা মনে করেন না।
তাঁরা যেটা জানাচ্ছেন তা হল কোহিনুর আবিষ্কৃত হয়েছিল গোলকুণ্ডার কোল্লুর হীরে খনিতেই। আসলে গোলকুণ্ডার ডায়মন্ড কৃষ্ণা নদীর তীরেই পাওয়া যায়।
জায়গাটি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলেই অবস্থিত। সেইসময় এই স্থানটিতেই বিশ্বে একমাত্র হীরে পাওয়া যেত।
কিন্তু কে বা কারা এই হীরেটি পেয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তবে ধরে নেওয়া হয় ১১০০-১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই হীরেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল।
তথ্য বলছে সেই সময় ভারতে কাকতিয় রাজবংশের ( Kakatiya dynasty ) রাজত্ব ছিল।
কোহিনুরের প্রথম উল্লেখ –
যখন প্রথম খনি থেকে উঠে আসে তখন এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সামন্তিক মণি‘। মনে করা হয় সেটা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে।
তখন ওজন প্রায় ৭৯৩ ক্যারেট ছিল। প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথিতেও নাকি উল্লেখ আছে।
কিন্তু ঐতিহাসিকরা একথা মানেন না। তাঁরা জানান ১১০০-১৩০০ খ্রিস্টাব্দে কাকতিয় বংশের রাজত্বকালের মধ্যে হীরেটি পাওয়া যায়।
তখনও এর কোনো নাম ছিল না। আবার মালবার রাজ পরিবারের কাছে হীরেটি থাকার সময়ও এর উল্লেখ মেলে।
কিন্তু নাম থাকা না থাকার বিষয়টি পুরোটাই রহস্যে মোড়া। ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আত্মজীবনী ‘বাবরনামা‘-তে প্রথম হীরেটির নাম পাওয়া যায়।
মুঘল সম্রাট হিসেবে বাবর ( Babur ) প্রথম ভারতে আসেন।
এই গ্রন্থে বলা আছে হীরেটির মূল্য এত বেশি যে, সারা দুনিয়ার প্রতিদিনের খরচের অর্ধেক ভার বহনে এটি সক্ষম।
এছাড়া বাবরের পর ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানও হীরের ব্যাপারে জানিয়েছেন।
মুঘলদের কাছে কোহ-ই-নূর –
মুঘলরা ভারতের বুকে প্রায় দুশো বছর রাজত্ব করে। আর হীরের খণ্ডটিও পরের পর হাত বদল হয়ে ঘুরতে থাকে একেকজন মুঘল শাসকের কাছে।
শাহজাহানের ( Shah Jahan ) আমলে বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন তৈরি হয়েছিল। ময়ূর সিংহাসনের নির্মাণ করেন পারস্যের শিল্পী বেবাদল খান।
জানা যায় কমপক্ষে ৭ বছর সময় লেগেছিল সিংহাসনটি বানাতে।
তাজমহল তৈরিতে যে অর্থ শাহজাহান খরচ করেছিলেন তার চাইতেও চার গুন খরচ হয় এই সিংহাসন নির্মাণে।
হীরক খণ্ডটিকে ময়ূর সিংহাসনের ময়ূরের চোখেই বসানো হয়। যাতে সবার দৃষ্টি যেন ওখানেই যায়।
সিংহাসনকে রত্নখচিত করতে ব্যবহার হয়েছিল লাল রঙের টিমুর রুবি। জানলে অবাক হবেন মুঘলদের কাছে এই হীরেটি অতটা দামী ছিল না।
আসলে রঙবেরঙের চকচকে পাথরই তাঁদের খুব প্রিয় ছিল। তাঁদের স্থাপত্যেও রঙিন পাথরের ব্যবহার দেখা যায়।
দিল্লী সেইসময় সারা বিশ্বের মধ্যে ধনী স্থান অধিকার করেছে। তাবড় তাবড় দেশগুলি দিল্লীর ধনসম্পদের কাছে মাথা নুইয়ে দেয়।
শাহজাহান শেষ বয়সে পুত্র ঔরঙ্গজেবের হাতে বন্দী হয়ে কয়েদখানায় মারা যান। একথা আমরা আমরা সবাই জানি।
দিল্লীর পরের সম্রাট হন ঔরঙ্গজেব। এরপর বংশপরম্পরায় হীরেটি মোগল সম্রাটদের কাছেই ছিল।
নাদির শাহের কাছে কোহ-হি-নূর –
১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর মসনদে বসেছিলেন মুহাম্মদ শাহ। মোগল সাম্রাজ্যের তখন শেষকাল চলছে।
মহম্মদ শাহ রঙিন চরিত্রের মানুষ ছিলেন। শিল্প, সংস্কৃতি, আমোদ-প্রমোদে মত্ত থাকতেন। তাই তাঁর নামের সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ‘রঙ্গিলা’ শব্দটি।
মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হতে থাকে। দিল্লীর বাড়ন্ত ধনসম্পদ দেখে লোভ সামলে রাখতে পারলেন না পারস্যের সুলতান নাদির শাহ ( Nadir Shah )।
তাই আর দেরী না করে ১৭৩৯ সালে নাদির শাহ ভারতের দিল্লী আক্রমণ করলেন।
নাদির শাহ ময়ূর সিংহাসন সমেত কোহিনুর মণি সহ মূল্যবান খাজানা লুঠ করে নিয়ে গেলেন পারস্যে।
শোনা যায় লুঠের মাল এত বেশি ছিল যে শয়ে শয়ে হাতি, ঘোড়া, উট লেগেছিল বয়ে নিয়ে যেতে।
ভাবছেন তো কি করে তিনি পেলেন হীরেটি ? বলা হয় আগেকার দিনে যুদ্ধে হেরে যাওয়া সম্রাট ও জয়ী সম্রাটের মধ্যে পাগড়ি এক্সচেঞ্জ হত।
মহম্মদ শাহের পাগড়ির মধ্যে লুকানো ছিল হীরে। অসাবধানের ফলে তা মাটিতে পড়ে যায়।
মাটিতে পড়ে হীরের থেকে ঠিকরে বেরোনো আলোর ঝলকানি নাদির শাহের চোখে লাগে। তখন তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দই বেরিয়েছিল ‘কোহ-ই-নূর‘ ( koh-i-noor )।
এর মানে পর্বতের আলোর রোশনি। সেই থেকেই এই নামকরণ হল।
আরও পড়ুনঃ চিতোরের রাজপুত রানী পদ্মিনী
কোহিনুর নামকরণ –
এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, নাদির শাহই কি হীরেটির নামকরণ করেছিলেন ?
তাহলে বলি, ওনার অর্থদপ্তরের এক সচিব ‘তারিখ-ই-আলম-আরা-য়ি- নাদিরি‘ নামে একখানি বই লেখেন।
এই বইটিতে লিখিত রেকর্ড অনুযায়ী কোহিনুর নামটি রয়েছে। এবং এও বলা হয়েছে হীরেটি ময়ূর সিংহাসনের সাথে আটকানো ছিল।
যখন নাদির শাহের হাতে হীরেটি আসে তিনি এটিকে নিজের কব্জিতে ধারণ করতেন।
আর তার সাথে লাল রঙের টিমুর রুবিকেও হাতের শোভা বাড়ানোর জন্য পড়েছিলেন।
সুতরাং সহজেই বোঝা যায় যে, নাদির শাহই প্রথম কোহিনুরের নামকরণ করেন। এরপর আগামী সত্তর বছর হীরেটি আফগানিস্তানের সম্পদ হয়ে থাকে।
আহম্মদ শাহ আবদালি ও কোহিনুর –
আহম্মদ শাহ আবদালির কথা মনে আছে ? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন ১৭৬১ সালে মারাঠাদের সাথে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ-র নায়ক তিনি।
সম্রাট নাদির শাহের সেনাদলের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন।
সুযোগ বুঝে নাদির শাহকে মেরে ফেলে নতুন আফগান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন তিনি।
ব্যস, এরপর আহম্মদ শাহ আবদালি থেকে হন আহম্মদ শাহ দুরানি। সেইসাথে কোহিনুরেরও মালিক হলেন আহম্মদ শাহ দুরানি।
পরবর্তীকালে তাঁর ছেলে তিমুর শাহ সাম্রাজ্যের হাল ধরলেও নাতিরা ছিল অযোগ্য।
মহারাজা রঞ্জিত সিং ও কোহিনুর –
আহম্মদ শাহ দুরানি-র পর তাঁর নাতিরা সাম্রাজ্যে টিকিয়ে রাখতে ততটা পারদর্শী ছিল না। তাঁর নাতিরা নিজেদের মধ্যে বিবাদেই মত্ত থাকতো।
শোনা যায়, এক নাতি জামান শাহের চোখ গলন্ত সীসা ঢেলে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অন্য নাতি সুজা শাহ দুরানি হীরেটি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সাম্রাজ্যচ্যুত হন।
পালিয়ে চলে আসেন লাহোরে। লাহোরের শাসনকর্তা তখন মহারাজা রঞ্জিত সিং।
জামান শাহ আফগান সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দাবিয়ে রাখার জন্য আগেভাগেই তাঁকে লাহোরের গভর্নর করেছিলেন।
এদিকে আফগানদের বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে তিনি পাঞ্জাবের মহারাজা হয়ে যান। সুজা শাহ কে ঠাই দিলেন লাহোরে।
কিন্তু এর জন্য কিছুতো একটা পুরস্কার চাই। পুরস্কার হিসেবে পেলেন হীরে। জানিয়ে রাখি রঞ্জিত সিং পরিচিত ছিলেন শের-ই-পাঞ্জাব নামে।
তিনি এই হীরে পড়তেন নিজের ডান বাহুতে।
ইংরেজদের দখলে কোহিনুর –
১৮৩৯ সালে রঞ্জিত সিং-এর মৃত্যু ঘটে। ইংরেজরা ভারতে জাঁকিয়ে বসেছে।
তার আগে ব্রিটিশরা জানতে পেরেছিল রঞ্জিত সিং হীরেটিকে কোনো হিন্দু মন্দিরে দান করে দেবেন। উঠেপড়ে লাগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
রীতিমত ছক কষে ফেললো কিভাবে নিজেদের কব্জায় তাঁরা আনবে।
পাঞ্জাবের মহারাজার মৃত্যুর পর রইলেন পত্নী মহারানী জিন্দন কৌর এবং ৫ বছরের নাবালক পুত্র দলীপ সিং।
১৮৪৯ সালে ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে শিখদের চূড়ান্ত পরাজয় হয়। পাঞ্জাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইংরেজদের হুকুমত।
দলীপ সিং-র বয়স তখন দশ বছর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চালাকি করে তাঁর সাথে ‘লাহোরের চুক্তি‘ সারে। সন্ধিতে লেখা হয় কোহিনুর ব্রিটিশদের অর্পণ করতে হবে।
এরপর মহারানী জিন্দন কৌর-কে পাঠিয়ে দেওয়া হল জেলে।
এদিকে পনেরো বছর বয়সী দলীপ সিং-কে তল্পি তল্পা সমেত জাহাজে করে ইংরেজরা পাঠিয়ে দেয় ইংল্যান্ডে।
সেখানে তাঁকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল।
জীবনের শেষসময় ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল তাঁর। ফিরতে চেয়েছিলেন ভারতে, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ফিরতে দেয়নি।
হীরে তাঁর নতুন মালিককে খুঁজে নিল। মহারানী ভিক্টোরিয়ার হাতে স্থান হল হীরেটির। পরে অবশ্য সেটি স্থান পায় রানীর মুকুটে।
আরও পড়ুনঃ মীরাবাঈ কে ছিলেন জানুন তাঁর জীবনকাহিনী
কোহ-ই-নূর কি অভিশপ্ত হীরা –
এবারে আসি অন্য কথায়। বলা হয়ে থাকে এই হীরেটি যার কাছে থাকবে সে দুনিয়ার সবকিছুর মালিক হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যও নাকি বইতে হবে।
তাহলে কি সত্যিই এটি অভিশপ্ত হীরে ? যদিও একটি হিন্দু গ্রন্থে প্রথম একথা বলা হয়েছিল।
যেমন ধরুন, নাদির শাহ হীরেটি পাওয়ার পর আচমকাই নিজের সেনাপতির হাতে প্রাণ খোয়ালেন। তাঁর সাথে খারাপ ঘটলো ১৭৪৭ সালে।
আহম্মদ শাহ দুরানি আফগান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনিও হীরের কালাজাদুর কবলে পড়লেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই দুরানি সাম্রাজ্যে বিবাদ শুরু হয়। এরপর রঞ্জিত সিং তিনিও অভিশাপ মাথায় করে নিলেন।
মৃত্যুর পর তাঁর শিখ সাম্রাজ্য ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয় ইংরেজরা। পত্নীর ভাগ্যে জোটে জেলযাত্রা। আর পুত্রকে ইংরেজরা পাঠিয়ে দেয় ইংল্যান্ডে।
দেখা গেছে কোনো পুরুষই হীরেটি নিজের কাছে বেশিদিন রাখতে পারেননি।
আর এটাকেই নাকি বলা হয় কোহিনুরের অভিশাপ। আসলে অভিশাপের কথাটা কুসংস্কার ছাড়া কিছু না।
এই কাহিনীতে জড়িয়ে আছে শুধুই লোভ। আর সেই লোভ অভিশাপের গুজবে ঢাকা পড়েছে।
কোহ-ই-নূর কি রানিদের জন্যই বরাদ্দ –
এই কাহিনীতে যোগ হয়েছে আরও একটি নতুন পালকের। তা হল একমাত্র ঈশ্বর এবং কোনো মহিলার পক্ষেই হীরেটি ধারণ করা সম্ভব।
মনে হয় ব্রিটিশরাও হীরের কাহিনী শুনে মনে মনে ভয় পেতে শুরু করেছিল।
ভাবছিল তাঁদেরও না অভিশাপ লেগে যায়।
ঠিক হল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্রাউন পুরুষের বদলে নারীর অধিকারে থাকবে। সেইথেকে কুখ্যাত হীরে ইংল্যান্ডের রানীদের কাছেই থেকেছে।
রানী আলেজান্দ্রা থেকে মেরী হয়ে এলিজাবেথ এমনকি বর্তমান ইংল্যান্ড কুইন ক্যামিল্লা-র ক্রাউনেই শোভা পাচ্ছে কোহ-ই-নূর।
এইভাবে প্রায় ১৭৩ বছরেরও ওপরে হীরেটি ব্রিটিশদের কাছেই গচ্ছিত হয়ে আছে।
কোহ-ই-নূর হীরের মূল্য –
কোহ-ই-নূরের সঠিক মূল্য কত তা বলা মুশকিল। তবে অনুমান করা হয় এর দাম কয়েক হাজার কোটি টাকাতো হবেই।
বর্ণে সাদা, উজ্জ্বল নিখুঁত ভাবে কাটা হীরেটি আজ পর্যন্ত কোথাও বিক্রি হয়নি।
কোহ-ই-নূর বর্তমানে আছে ইংল্যান্ডের টাওয়ার অফ লন্ডনের জুয়েল হাউসে।
১৮৫১ সালে একবার লন্ডনের হাইড পার্কের গ্যালারিতে প্রদর্শনী চলছিল। দর্শকরা হীরেটিকে দেখে সামান্য কাঁচের টুকরো ভেবেছিলেন।
কিন্তু তাঁরা জানতেন না এর জন্য কত রক্তই না ঝরেছে। খবরটি ১৮৫১ সালের টাইমস খবরের কাগজেও ছাপা হয়।
রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্ট সিন্ধান্ত নিলেন হীরেটির পুনরায় কাটাই ও পালিশের। তাঁর মনে হয়েছিল পালিশের ফলে হীরের ঔজল্য আরও বাড়বে।
আর হীরের আলোর রশ্মি দর্শকদের অবাক করে মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলবে।
বলে রাখি হীরের ওজন কিন্তু ক্যারেটে মাপা হয়। 1 ক্যারেট সমান 0.20 গ্রাম।
পালিশের আগে হীরের ওজন ছিল ১৮৬ ক্যারেট ( Carat )। পালিশের পর কোহ-ই-নূরের ওজন কমে গিয়ে হল ১০৫.৬ ক্যারেট।
বর্তমানে এটাই এর ওজন।
মূল্যায়ন –
বহু হাতবদল হয়ে অবশেষে এখন হীরেটি ইংল্যান্ডের জুয়েল হাউসে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় রয়েছে। অতীতে কতই না রক্ত ঝরেছে এটি পাওয়ার জন্য। এমনকি হীরেটির নামের পাশে বসেছে কুখ্যাত শব্দ। তবুও কিন্তু এতটুকু উজ্জ্বলতা তার নষ্ট হয়নি। মুঘলদের পরে নাদির শাহ, দুরানি, রঞ্জিত সিং এবং শেষে ইংল্যান্ডের রানীর মুকুটে স্থান পেয়েছে কোহ-ই-নূর। দেশ বিদেশের মানুষ ভিড় জমায় হীরেটিকে দেখবার জন্য। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান একাধিকবার হীরেটির ওপর নিজেদের অধিকারের দাবী জানিয়েছে। নৃতত্ববিদ রিচার্ড কারিন বলেছেন, কোহ-ই-নূরকে নিয়ে আর চর্চা না করাই ভাল। যেখানে আছে বরং সেখানেই থাকুক। কারণ এই হীরেটির অতীত ইতিহাস বড়ই কালো। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে।
আরও পড়ুনঃ দীন-ই-ইলাহি কি
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের অসংখ্য ধন্যবাদ মূল্যবান সময় দিয়ে ‘কোহিনূর হীরের ইতিহাস’ পোস্টটি পড়ার জন্য। একটি অনুরোধ যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই Comment এবং Share করে দেবেন। আরও জানতে iitihas.com ওয়েবসাইটটিকে ফলো করুন। অনেক ধন্যবাদ।
FAQ
১)কোহিনুর মণি কে চুরি করেন ?
নাদির শাহ ময়ূর সিংহাসন সমেত কোহিনুর মণি সহ মূল্যবান খাজানা লুঠ করে নিয়ে গেলেন পারস্যে।
২) কোহিনুর হীরের দাম কত ?
কোহিনুর হীরের সঠিক মূল্য কত তা বলা মুশকিল। তবে অনুমান করা হয় এর দাম কয়েক হাজার কোটি টাকাতো হবেই।
৩) কোহিনুর শব্দের অর্থ কি ?
মাটিতে পড়ে হীরের থেকে ঠিকরে বেরোনো আলোর ঝলকানি নাদির শাহের চোখে লাগে। তখন তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দই বেরিয়েছিল ‘কোহ-ই-নূর‘ ( koh-i-noor )। এর মানে পর্বতের আলোর রোশনি। সেই থেকেই এই নামকরণ হল।
৪) কোহিনুর হীরা বর্তমানে কোথায় আছে ?
কোহ-ই-নূর বর্তমানে আছে ইংল্যান্ডের টাওয়ার অফ লন্ডনের জুয়েল হাউসে।
৫) কোহিনুর অভিশপ্ত কেন ?
দেখা গেছে কোনো পুরুষই হীরেটি নিজের কাছে বেশিদিন রাখতে পারেননি। আর এটাকেই নাকি বলা হয় কোহিনুরের অভিশাপ।