ঐতিহাসিক আব্দুল হামিদ লাহোরি (Historian Abdul Hamid Lahori)
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। আগের পোস্টে ঐতিহাসিক আবুল ফজল ও বদায়ুনিকে নিয়ে আলোচনা করেছি। যদি এখনও না পড়ে থাক, তাহলে এই ওয়েবসাইটে পড়ে নিও।
এবারের আলোচনা বিখ্যাত ঐতিহাসিক আব্দুল হামিদ লাহোরিকে নিয়ে। আশা করি ইতিহাসে এঁনার নাম নিশ্চই শুনেছ। তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য এই পোস্টটি পড়তে তোমাকে অনুরোধ করছি।
জীবন বৃত্তান্ত :
আব্দুল হামিদ লাহোরি সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কিছু জানা যায় না। তবু তিনি ছিলেন ভাল লেখক ও একজন ঐতিহাসিক।
লাহোরি পাটনায় অবসর জীবন কাটিয়েছিলেন ।
লাহোরি ছিলেন সেযুগের একজন সুপন্ডিত। আবুল ফজলের মতোই খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন লাহোরি।
এর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যাও চর্চা করতেন তিনি।
সম্রাট শাহজাহানের জীবনের প্রথম কুড়ি বছরের শাসনকালের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন লাহোরি।
লাহোরি নাম কেন ? :
বন্ধু আব্দুল হামিদ লাহোরির নাম লাহোরি কেন হয়েছে জানো ?
কারণ তিনি পাকিস্তান-এর লাহোরের বাসিন্দা ছিলেন। পরে তিনি ভারতে আসেন। এবং পাটনায় তিনি অবসর জীবন কাটিয়েছিলেন।
আরও পড়ো : https://iitihas.com/abdul-qadir-badayuni-in-bengali/
আরও পড়ো : https://iitihas.com/mughal-emperor-humayun-in-bengali/
লাহোরির রচনায় শাহজাহান :
আব্দুল হামিদ লাহোরি তাঁর রচনায় শাহজাহানের প্রশংসা করেছেন।
তিনি শাহজাহানকে স্নেহশীল পিতা, দায়িত্ববান স্বামী ও প্রজা কল্যাণকারী সম্রাট হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান কাশ্মীর থেকে ফেরার সময় জানতে পারেন রাজৌর, গুজরাটের কিছু হিন্দু ,মুসলিম মেয়েদের বিবাহ করে তাঁদের ধর্মে দীক্ষিত করেছে।
শাহজাহান এই বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
সেইসাথে এইসব ব্যক্তিদের দোষী হিসেবে জরিমানা করেন। এমনকি প্রাণদণ্ডেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এই ঘটনাটির বিবরণ লাহোরি তাঁর রচনায় লিপিবদ্ধ করেছেন।
এগুলি ছাড়াও লাহোরির রচনাতে শাহজাহানের রাজত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্থান পেয়েছিল।
লাহোরি উল্লেখ করেছেন সম্রাটের রাজত্বের প্রথম দশকে রাজস্ব হিসেবে আয় ছিল প্রায় ৩,০৯,৪৫,৩২,৪৭২ টাকা।
লাহোরি রচিত গ্রন্থ :
ঐতিহাসিক আব্দুল হামিদ লাহোরির লেখা ‘পাদশাহনামা ’ / ‘বাদশাহনামা ’ একটি উচ্চমানের গ্রন্থ।
গ্রন্থটি ফার্সী ভাষায় রচিত। গ্রন্থটির দুটি খন্ড।
এই দুটি খন্ডেই লাহোরি সম্রাট শাহজাহানের জীবন ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন।
সেইসাথে শাহজাহানের প্রথম ২০ বছরের রাজত্বকালের বিবরণ দিয়েছেন।
শাহজাহানের রাজত্বকাল জানবার জন্যে এই গ্রন্থটি একটি মূল্যবান দলিল।
তিনি শাহজাহানের দরবারি ঐতিহাসিক হলেও তাঁর গ্রন্থে সততা বজায় রেখেছেন।
কারণ জাহাঙ্গীরের সময় খুররম (পরে ইনি সম্রাট শাহজাহান )-র বিদ্রোহের কথাও তিনি তাঁর বইতে তুলে ধরেছেন।
এমনকি এই প্রসঙ্গে নূরজাহানেরও সমালোচনা করেছেন।
তবে আব্দুল হামিদ লাহোরির বৃদ্ধ বয়সে তাঁরই ছাত্র মহম্মদ ওয়ারিস পাদশাহনামা সমাপ্ত করেছিলেন।
স্থাপত্য-ভাস্কর্য সম্পর্কে লাহোরির তথ্য :
লাহোরি শাহজাহানের আমলের স্থাপত্য-ভাস্কর্য শিল্প সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।
ভারতের আগ্রার দেওয়ান-ই-খাস ও দেওয়ান-ই-আম এর বিবরণ তাঁর গ্রন্থে তিনি দিয়েছেন।
সম্রাট শাহজাহান যে পুরাতন স্থাপত্য ধ্বংস করে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করেন তার তথ্যও লাহোরির রচনায় পাওয়া যায়।
এমনকি এই প্রাসাদগুলিতে ব্যবহার হওয়া রঙ , পাথর ইত্যাদি সম্পর্কে লাহোরির কৌতূহল ছিল।
তার জন্য প্রাসাদের কারিগরদের কাছ থেকে তিনি বহু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।
এইসব তথ্যের কারণেই তাঁর রচিত বাদশাহনামা ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।
পরিশেষে :
আব্দুল হামিদ লাহোরির তথ্য ছিল নিখুঁত। সহজ সরল ভাষায় পাঠকদের সামনে তিনি তা তুলে ধরেছিলেন। তাই লাহোরির এই বৈশিষ্ট্যকে অতিক্রম করা সেইসময়কার প্রায় কোন ঐতিহাসিকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা গিয়েছিলেন।
“পোস্টটি পড়ে যদি তোমার ভালো লেগে থাকে তাহলে তুমি কমেন্টে তোমার মতামত জানিও। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো “|