আকবরের রাজপুত নীতি (Akbar’s Rajput Policy)
নমস্কার বন্ধু কেমন আছো, আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। এই পোস্টে আলোচ্য বিষয় হলো আকবরের রাজপুত নীতি।
সম্রাট আকবর সম্পর্কে ইতিহাসে নিশ্চই পড়েছ।
এইবার এই পোস্টটি থেকে জেনে নাও আকবরের রাজপুত নীতি সম্পর্কে।
আশা রাখি এই পোস্টটি পড়ে তুমি উপকৃত হবে। আগের পোস্ট করা হয়েছে সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে, চাইলে এটিও তুমি পড়তে পারো।
রাজপুত নীতির পটভূমি :
রাজপুতরা দিল্লীর সম্রাটদের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাব দেখাতেন। কিন্তু সম্রাট আকবরের উদার ব্যবহার দিল্লীর সম্রাটদের প্রতি রাজপুতদের চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়েছিল।
আকবর তাঁর রাজপুত নীতির জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
কুড়ি বছর বয়সে আকবর রাজস্থানের আজমীরে খাজা মইনউদ্দিন চিস্তির সমাধি দর্শন করতে যান। এখানে অম্বরের রাজা বিহারিমল আকবরের বশ্যতা মেনে নেন।
এমনকি নিজের মেয়ে যোধাবাঈ-এর সাথে আকবরের বিবাহও দেন।
বিহারিমলের সাথে সাথে মানসিংহ, ভগবানদাস প্রমুখ রাজপুত রাজারাও আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন।
এই পটভূমি থেকেই রাজপুতদের সাথে আকবরের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারিত হয়েছিল।
রাজপুত নীতি গ্রহণের কারণ :
আকবর ছিলেন একজন সুদক্ষ রাষ্ট্রনীতিবিদ।
তিনি তাঁর দূরদৃষ্টির দ্বারা বুঝেছিলেন সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য রাজপুতদের সাথে মৈত্রী স্থাপন করা একান্ত জরুরী।
আবদুল বাকি নহওয়ন্দভি তাঁর গ্রন্থ মাসির-ই-রহিমি গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, আকবর তাঁর বিদ্রোহী স্বজাতির প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারেননি।
তাই তিনি রাজপুতদের বন্ধু হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ো : শের শাহের শাসনব্যবস্থা
রাজপুতদের সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোভাব সম্রাট আকবরকে আকৃষ্ট করেছিল। এছাড়াও রাজপুতদের সেনাবাহিনী ছিল বেশ চমকপ্রদ।
সম্রাটকে যেকোনো সময়ে তাঁরা ২৫-৩০,০০০ সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকতো। ইত্যাদি কারণে আকবর রাজপুতদের তাঁর দরবারে স্থান দেন।
রাজপুতদের সাথে শত্রূতার পথে না হেঁটে বরং তাঁদের প্রতি মিত্রতার হাত বাড়িয়ে দেন।
আকবরের রাজপুত নীতির পদক্ষেপগুলি ছিল –
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন :
আকবরের রাজপুত নীতির প্রথম ধাপ ছিল রাজপুতদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে অম্বরের রাজা ভারমল বা বিহারিমল তাঁর কন্যাকে আকবরকে সম্প্রদান করেছিলেন।
আকবরের পুত্র সেলিমের ( জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত ) সাথে ভগবানদাসের কন্যার বিবাহের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের সূচনা ঘটেছিল।
অম্বরের বৈবাহিক নীতিতে উৎসাহিত হয়ে বিকানীর, জয়সলমীর, মাড়োয়ার প্রভৃতি রাজপুত পরিচালিত রাজ্যগুলিও মুঘলদের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল।
সম্রাট আকবর রাজপুত রমনীদের মুঘল হারেমে মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের নিজস্ব ধর্মও বজায় রেখেছিলেন।
এইভাবে বিবাহের মাধ্যমে তিনি রাজপুত তথা হিন্দুদের নিজের বন্ধু ও আত্মীয় করে তোলেন।
রাজপুতদের উচ্চপদে নিয়োগ :
সম্রাট আকবর রাজপুতদের বহু উচ্চ রাজপদে নিয়োগ করেছিলেন। মনসবদারী ব্যবস্থার পত্তন করেছিলেন আকবর স্বয়ং।
এই মনসব প্রথমে মুসলমান রাজকর্মচারীরাই ভোগ করতো।
কিন্তু আকবর রাজপুতদেরও এই মনসব প্রদান করে বহু যুদ্ধে তাঁদের নিয়োগ করেছিলেন।
রাজা বিহারিমল, রাজা ভগবানদাস, রাজা মানসিংহ, রাজা টোডরমল প্রমুখ রাজপুত রাজাদের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক প্রভৃতির উচ্চপদে আকবর নিযুক্ত করেন।
এমনকি অনেক রাজপুত সর্দাররাও আকবরের এই নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।
রাজপুতদের উচ্চপদে নিযুক্ত করে মুঘলদের রাজনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে আকবর সমর্থ হন।
রাজপুতদের স্বার্থে প্রথার রদ :
রাজপুতরা জাতিতে ছিল হিন্দু। তাই রাজপুতদের স্বার্থে তুর্কীদের সময় থেকে ভারতে প্রচলিত কিছু প্রথার রদ ঘটান সম্রাট আকবর।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘জিজিয়া কর‘ প্রথা রদ। জিজিয়া ছিল একপ্রকারের ধর্মকর।
মুসলমান রাজকর্মচারীদের বহু বিরোধিতা সত্ত্বেও আকবর ১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু তীর্থযাত্রী কর ‘ ও ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে ‘জিজিয়া কর ‘ তুলে দেন।
এর ফলে তিনি রাজপুত তথা আপামর হিন্দুদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা লাভ করেন। রাজপুতদের বেশ কিছু সুযোগও আকবর দান করেছিলেন।
এগুলি ছিল – যুদ্ধে বন্দি রাজপুতদের ক্রীতদাস করা নিষিদ্ধ করা, দেওয়ান-ই-আমে রাজপুতদের অস্ত্রসহ ঢোকার অনুমতি দেওয়া, রাজপুত ঘোড়াগুলিকে ‘দাগ’ চিহ্নে চিহ্নিত না করা ইত্যাদি।
স্বজাতির বদলে রাজপুত নির্ভরশীলতা :
আকবর সিংহাসনে বসার পর থেকেই তাঁর স্বজাতির বিরোধিতার সম্মুখীন হন।
আবদুল মালি, শা মনসুর, বিশ্বস্ত বৈরাম খানের মতো ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাও আকবরের প্রতি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
আকবরের ধাত্রীমাতা মাহম আনগা ও তাঁর পুত্র আধম খান ষড়যন্ত্র করে আকবরকে হত্যাও করতে গিয়েছিলেন। এমনকি মির্জাগোষ্ঠীর বিদ্রোহ গুলিও আকবর দমন করেছেন।
এইসমস্ত কিছুর ফলে আকবরের জীবন ও সিংহাসন দুইই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
তাই স্বজাতির উপর বিশ্বাস রাখতে না পেরে রাজপুতদের শৌর্যের-সাহসের উপর তিনি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
যেহেতু রাজপুত জাতি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের প্রধান তাই এক্ষেত্রে আকবর তাঁদের সাথে উদার ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
রাজপুতনীতির ফলাফল :
১) সম্রাট আকবরের রাজপুতনীতি গ্রহণের ফলে হিন্দু -মুসলমান ঐক্য গড়ে উঠেছিল।
২) রাজপুতদের প্রতি আকবরের উদার আচরণের ফলে সমগ্র হিন্দুজাতির কাছে আকবর জাতীয় নরপতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।
৩) রাজপুত যোদ্ধারা ও সৈন্যবাহিনী মুঘল সৈন্যদের সাথে মিলিত হওয়ার ফলে মুঘল সেনার শক্তি বৃদ্ধি হয়। যা মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল।
৪) মুঘল প্রশাসনিক, সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উচ্চপদগুলিতে রাজপুতদের স্থান দেওয়ার ফলে এগুলির যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছিল। রাজপুতরা এই উচ্চপদগুলিতে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
৫) আকবর তথা মুঘলদের সাথে রাজপুতদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠায় রাজপুতরাও তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে সমর্থ হয়েছিল।
আরও পড়ো : মুঘল সম্রাট হুমায়ুন
“ আশা করি এই পোস্টটি পড়ে তোমার ভালো লেগেছে। যদি তোমার কোনো মতামত থাকে তাহলে তুমি কমেন্ট করে আমাকে জানাতে পারো। তোমার মূল্যবান মতামত আমাকে লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভালো থেকো বন্ধু , আর ইতিহাস পড়তে থেকো। “
খুব ভালো হয়েছে লেখাটা । আকবরের রাজপূত নীতি সম্পর্কে অনেকটাই জানা গেলো ।
ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটি পড়বার জন্য। ভালো থাকবেন।
এই লেখা টা কতো নাম্বার থাকতে পারে? খুব ভালো লেখা। সোজা,সহজ ও সরল।
ধন্যবাদ, পড়ে ভালো লেগেছে এটাই অনেক। ভালো থাকবেন।