দীন-ই-ইলাহী কি (What is Din-i-Ilahi)
নমস্কার বন্ধু কেমন আছো, আশা করি নিশ্চই ভালো আছো। এই পোস্টে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত ধর্ম দীন-ই-ইলাহী নিয়ে।
আশা করি দীন-ই-ইলাহী সম্পর্কে ইতিহাস বইতে নিশ্চই পড়েছো।
যদি না পড়ে থাকো তাহলে এই পোস্টটি থেকে বিস্তারিত জেনে নাও।
আগের পোস্টে আকবরের রাজপুতনীতি নিয়ে আলোচনা করেছি। চাইলে তুমি এটিও পড়তে পারো।
পটভূমি :
আকবর ছিলেন একজন সুন্নী মুসলমান। গোঁড়া সুন্নীদের মতো তিনিও ইসলামের আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন।
কিন্তু তিনি তাঁর ধর্মীয় জীবনের চরম পরিণতি ঘটালেন দীন-ই-ইলাহী নামে এক নতুন ধর্মমত প্রবর্তন করে। আকবর কেন এই দীন-ই-ইলাহীর প্রবর্তন করেছিলেন তার জন্য পটভূমি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
আকবর যে একজন ধর্মপ্রেমী মানুষ ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিশোর বয়স থেকেই সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তাকে জানার তাঁর মধ্যে প্রবল কৌতূহল ছিল।
আবুল ফজল লিখেছেন, ‘ সৃষ্টির রহস্য এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা শোনার সময় আকবরের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ত ‘। সুফিবাদের প্রতিও তাঁর গভীর আস্থা ছিল।
কিশোর বয়স থেকেই আকবর এক বিশ্বজনীন ধর্মের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আর এই ব্যাপারে আকবরকে প্রথম উৎসাহিত করেছিলেন আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারক।
১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ মহাজারনামা ‘ নামে এক নির্দেশ জারি করে ইসলাম ধর্মের ওপর কর্তৃত্ব অধিকার গ্রহণ করেন।
কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে ফতেপুর সিক্রিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইবাদতখানায় (ধর্মীয় আলোচনার স্থান ) আলোচনার মধ্য দিয়ে সকল ধর্মের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন।
রচনা করলেন দীন-ই-ইলাহী নামে এক ধর্মমতের।
আরও পড়ো : আকবরের রাজপুত নীতি
দীন-ই-ইলাহীর অর্থ :
আকবর প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহীর অর্থ হলো ‘ ঈশ্বরের আদেশ ‘। দীন-ই-ইলাহী মূলনীতি হলো সুলহ-ই-কুল বা পরধর্মসহিষ্ণুতা।
দীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন :
আকবর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ধর্মজীবনের তৃতীয় তথা শেষ পর্যায়ে একটি নূতন ধর্ম প্রবর্তন করেন।
ইবাদতখানায় সকল ধর্মের পন্ডিতগণ তাঁদের নিজেদের ধর্মের ব্যাখ্যা আকবরকে শোনাতেন।
ধর্মের এই ব্যাখ্যা থেকে আকবর উপলব্ধি করেন যে ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।
তাই সকল ধর্মের মূলকথা একেশ্বরবাদের ভিত্তিতে এক নবীন ধর্ম দীন-ই-ইলাহী (১৫৮২ খ্রি:) সূচনা করলেন। এই ধর্মের মূলকথা ছিল পরধর্মসহিষ্ণুতা বা অপর ধর্মকে সহ্য করা।
মানব কল্যাণের স্বার্থে সকল ধর্মের সারমর্ম হিসেবে তিনি এই ধর্মমতের সূচনা ঘটান।
দীন-ই-ইলাহী আদর্শ :
দীন-ই-ইলাহী ধর্মমতের কোনো পৃথক উপাসনাগৃহ ছিল না। ছিল না কোনো পৃথক ধর্মগ্রন্থ।
এই মতাদর্শে কোনো বিশেষ ঈশ্বরের কথা না বলে সমস্ত ধর্মের তত্ত্বগুলিকে গ্রহণ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক ভন নোর এই ধর্মমতকে ‘ সর্বেশ্বরবাদ ‘ বলে অভিহিত করেছেন। দীন-ই-ইলাহী মতবাদ বিশ্বাসকারীরা ‘ ইলাহিয়া ‘ নামে পরিচিত হতেন।
সম্রাটের অনুমতি নিয়ে যে কেউই এই ধর্মমতের অনুগামী হতে পারতো।
ধর্মমত গ্রহণকারীদের কাছে সম্রাট চারটি আনুগত্য চাইতেন , সেগুলি হলো –সম্পত্তি, গোঁড়ামি, অহংকার ও সংকীর্ণতা বিসর্জনের প্রতিশ্রুতি।
দীন-ই-ইলাহী বিশ্বাসীদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো ছিল – গো মাংস ভোজন না করা, দান ধর্ম পালন করা, নিরামিষ ভোজন করা ইত্যাদি।
ইলাহিয়াগণ মস্তকে সম্রাটের প্রতিকৃতি ধারণ করতেন।
একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে ‘আল্লাহ আকবর‘ (ঈশ্বর মঙ্গলময় ) এবং প্রত্যুত্তরে ‘জাল্লা জালাল্লাহু‘ (তাঁর মহিমা বিকশিত হোক ) বলে সম্ভাষণ জানাতেন।
পরিণতি :
আকবর যে বিশ্বজনীন ধর্মপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।
দীন-ই-ইলাহী সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি।
দেখা গিয়েছিল মাত্র ১৮ জন এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়েছিলেন। এর মধ্যে একমাত্র হিন্দু রাজা হিসেবে ছিলেন বীরবল।
মধ্যযুগীয় সংকীর্ণ চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে মানুষের পক্ষে এই ধর্মমত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
শেষপর্যন্ত আকবরের মৃত্যুর পর দীন-ই-ইলাহী সম্প্রদায় লুপ্ত হয়ে যায়।
আরও পড়ো : মুঘল সম্রাট হুমায়ুন
মূল্যায়ন :
আকবরের প্রবর্তিত এই ধর্মনীতিকে বদায়ুনি, স্মিথ প্রমুখরা সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, মধ্যযুগের সংকীর্ণ পরিবেশের মধ্যেও এই ধর্মমত হিন্দু -মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের বিরোধ হ্রাস করেছিল। যার ফলে আকবর জাতীয় সম্রাটের উপমা লাভ করেন। এস.আর.শর্মার মতে, ” Din-i-Ilahi was the crowning expression of the emperor’s national idealism “.
Pingback: ইতিহাসের আলোকে বাংলা সন প্রবর্তন - অন্যবাংলা
পোস্টটি পড়ে দেখুন, ধন্যবাদ।
Pingback: বাংলা সন প্রবর্তন কিভাবে হলো - itech bangla
এবিষয়ে নিশ্চয় পরে জানাবো।