মহীশূর রাজ্যের উত্থান ( Rise of the Mysore kingdom )
মহীশূর রাজ্যের উত্থান দাক্ষিণাত্য তথা ভারতের ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। হায়দ্রাবাদ রাজতন্ত্রের পরই দাক্ষিণাত্যে জন্ম হয় মহীশূর রাজ্যের।
১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর পানিপথের যুদ্ধে জয়ী হয়ে ভারতে মুঘল শাসনের সূত্রপাত করেন।
এরপর ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ছয়জন মুঘল সম্রাট ভারত শাসন করেন। এরমধ্যে সর্বশেষ ছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব।
এই সকল মুঘল সম্রাটরা সারা ভারত জুড়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও মুঘলদের প্রতি সাধারণ মানুষের আনুগত্য খুব বেশি প্রকট ছিল না।
ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সারা ভারতে মুঘল কেন্দ্রীয় শাসনে ফাটল ধরতে শুরু করে। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিচ্ছিন্নতাবাদ।
সারাভারতে অরাজকতা তৈরী হয়। এইসময় কিছু আঞ্চলিক রাজ্য ভারতে মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকে।
এই আঞ্চলিক রাজ্যগুলি দিল্লীর কর্তৃত্ব মানতে অস্বীকার করে। এরা নিজেদের স্বাধীনতা গ্রহণে খুব বেশি উৎসাহী হয়।
এইসময় মুঘল রাজশক্তিও শক্তিহীন হওয়ায় আঞ্চলিক রাজ্যগুলির উদ্ভবকে মেনে নেয়।
কোনো প্রতিবাদ দেখানোর জায়গাতেই মুঘল রাজশক্তি ছিল না। দিল্লির প্রভাবমুক্ত হয়ে একে একে বাংলা, হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, অযোধ্যা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
এখন আমরা দেখবো এই রাজ্যগুলির মধ্যে মহীশূর রাজ্যটির প্রতিষ্ঠা কিভাবে হয়েছিল।
মহীশূরের প্রারম্ভিক অবস্থা ( Rise of Mysore )
১) ওয়াদিয়ার রাজবংশ
মহম্মদ-বিন-তুঘলকের রাজত্বের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। বিদ্রোহের আঁচ দাক্ষিণাত্যেও এসে লাগে।
এরফলে ভারতের দক্ষিণে দুটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমটি হোলো বাহমনি এবং দ্বিতীয়টি বিজয়নগর।
হরিহর ও বুক্ক নামে দুই ভাই বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দুইভাই ছিলেন মূলত সঙ্গম বংশের প্রতিনিধি।
এছাড়াও শালুভ, তুলুভ, অরবিডু বংশগুলিও বিজয়নগরে রাজ কায়েম করেছিল। একসময় এই বিজয়নগর রাজ্যের পতন হয়।
এবং এর অধীনে থাকা মহীশূর, তাঞ্জোর, বিদনুর প্রভৃতি প্রদেশগুলি নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে।
পরবর্তীকালে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মহীশূরকে শাসন করতো ওয়াদিয়ার ( Wadiyar dynasty ) নামক একটি হিন্দু রাজবংশ। ওয়াদিয়ার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যদুরায়া ওয়াদিয়ার।
কিন্তু ১৭৫০ এর পর থেকেই মহীশূর রাজ্যের সামগ্রিক চিত্র বদলাতে থাকে। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
২) দেবরাজ ও নঞ্জরাজ
মহীশূর ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি করদ রাজ্য। তৎকালীন ওয়াদিয়ার রাজবংশের হিন্দুরাজা চিক্কাকৃষ্ণরাজ ছিলেন মহীশূরের নামমাত্র শাসক।
চিক্কাকৃষ্ণরাজের দুর্বল ব্যক্তিত্ব ও অদক্ষতার সুযোগে দুই ভাই মিলে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেন। এই দুই ভাই হলেন চিক্কাকৃষ্ণরাজ-র দুই মন্ত্রী দেবরাজ ও নঞ্জরাজ।
এঁরা দুজনেই প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্খী হওয়ায় চিক্কাকৃষ্ণরাজকে হাতের পুতুলে পরিণত করে মহীশূরের সব ক্ষমতা দখল করে নেন।
দেবরাজ ছিলেন মহীশূর রাজ্যের ‘দলওয়াই’ বা প্রধান সেনাপতি।
আরও পড়ুন : শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান
অন্যদিকে নঞ্জরাজ ছিলেন ‘সর্বাধিকারী’ বা রাজস্ব দপ্তরের প্রধান। ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।
দেবরাজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় সেনাপতির দায়িত্ব পালনে অপারগ হন। তাঁর কনিষ্ঠ ভাই নঞ্জরাজ, দাদার হয়ে সামরিক অভিযানগুলি পরিচালনা করতে থাকেন।
আর বৃদ্ধ দেবরাজ অর্থদপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
৩) হায়দার আলীর আত্মপ্রকাশ
হায়দার আলী যিনি কিনা স্বাধীন মহীশূর রাজ্যের প্রধান রূপকার ছিলেন।
জীবনের প্রথমদিকে মহীশূর রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তি নঞ্জরাজের সামরিক বাহিনীতে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে কাজ করতেন।
একজন সাধারণ সৈনিক যাঁর বিদ্যাচর্চা বলতে তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু ছিল উদ্যম, সাহস এবং দৃঢ় মন।
সালটি ১৭৪৯। মহীশূরের দেবানাল্লি নামে একটি স্থানে বন্দুক চালানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
তরুণ সৈনিক হায়দার আলী সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম নঞ্জরাজের সুনজরে এলেন।
নঞ্জরাজ হায়দারের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পঞ্চাশটি ঘোড়া ও দুশো জনকে পরিচালনার ভার হায়দারের ওপর অর্পণ করেন। এরপর থেকে হায়দারের জীবনে একটানা উন্নতি ঘটতে থাকে।
১৭৫০-১৭৬০ সালের মধ্যে হায়দার আলি ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে যান।
ত্রিচিনাপল্লী অভিযান
নঞ্জরাজ ইতিমধ্যে ত্রিচিনাপল্লী দখলের আকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এরজন্য তিনি দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ফরাসিরা ছিল ইংরেজদের শত্রূ।
১৭৫২ সালে ত্রিচিনাপল্লী দখলের জন্য মহীশূর ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে ফরাসিদের বিরুদ্ধে ত্রিচিনাপল্লীতে যুদ্ধ করে।
কিন্তু একসময় নঞ্জরাজ দেখলেন যে ত্রিচিনাপল্লীর অধিকার ইংরেজরা তাঁর হাতে দিতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে নঞ্জরাজ হাত মেলালেন ফরাসি সেনাপতি ডুপ্লের সাথে।
নঞ্জরাজ এখানে ব্যস্ত থাকায় হায়দ্রাবাদের নিজাম-উল-মুলক মহীশূর আক্রমণ করে। এবং ৫৬ লক্ষ টাকা দাবি করে।
এমনিতেই ত্রিচিনাপল্লী অভিযানে মহীশূরের খরচ হয়েছিল প্রায় তিন-চার কোটি টাকা। সবমিলিয়ে মহীশূরের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়েছিল।
হায়দার আলীর ক্ষমতা দখল
১) নঞ্জরাজের বিতাড়ন
ত্রিচিনাপল্লী অভিযানের সময় হায়দার সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন। সেইসময় মহীশূরের অধীন দিন্দিগুলের ফৌজদার নিযুক্ত ছিলেন তিনি।
এই অভিযানের সময় লুঠের সম্পদ পেয়ে হায়দার নিজেকে সমৃদ্ধশালী করেছিল।
রবার্ট ক্লাইভ, লরেন্স প্রমুখ দক্ষ ইংরেজ সেনাপতিদের যুদ্ধের কায়দা দেখে হায়দার উন্নত রণকৌশল রপ্ত করেছিলেন। পরে এই কৌশলই তাঁর কাজে এসেছিল।
দেবরাজ ও নঞ্জরাজের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে হায়দার সেই সুযোগে নিজের ক্ষমতা প্রতিপত্তি বাড়ান। কারণ হায়দার ছিলেন প্রথম থেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
এবার তাঁর পদক্ষেপ হয় নঞ্জরাজকে বিতাড়িত করা। একাজে সাহায্য করেন মহীশূর রাজ্যের নামমাত্র দেওয়ান খান্ডে রাও।
সমস্ত সৈন্যরাই নঞ্জরাজকে পরিত্যাগ করে হায়দারের পক্ষে চলে যায়। বাধ্য হয়ে নঞ্জরাজ মহীশূর শাসনের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
হায়দার আলি মহীশূরের শাসকে পরিণত হলেন।
আরও পড়ুন : সমাজসংস্কারক রামমোহন রায়
২) খান্ডে রাওর ষড়যন্ত্র
হায়দার আলি নিজেকে মহীশূরের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার পর খান্ডে রাও তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পূর্বেই মহীশূর রাজ্যে মারাঠা আক্রমণ বহুবার হয়েছে।
খান্ডে রাও মারাঠা সর্দার বিশাজি কৃষ্ণের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। মারাঠা শক্তি হঠাৎই হায়দার আলির ওপর আক্রমণ চালায়।
আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে হায়দার আলি ব্যাঙ্গালোরে পালিয়ে যান। কিন্তু এইসময় মারাঠাদের সাথে উত্তর ভারতে আহম্মদ শাহ আবদালীর যুদ্ধ প্রায় নিশ্চিত ছিল।
তাই মারাঠা শক্তি দাক্ষিণাত্য ত্যাগ করে। হায়দার আলি আবার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ পান।
খান্ডে রাওকে তিনি একটি খাঁচার মধ্যে বন্দি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। নিজের সাহসকে হাতিয়ার করে মহীশূর রাজ্যে হায়দার আলি প্রকৃত শাসকে পরিণত হন।
ওয়াদিয়ার রাজা চিক্কাকৃষ্ণরাজ কিন্তু তখনও নামমাত্র শাসকই রইলেন।
৩) পলিগার বিদ্রোহ
হায়দার আলির ক্ষমতা দখলের সময় মহীশূর ছিল অশান্ত-দুর্বল রাজ্য। হোসকোট, দোড়বল্লাপুর, সেরা ইত্যাদি অঞ্চল হায়দার আলির সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
এইসময় পলিগার বা জমিদাররা হায়দারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বিচ্ছিন্নতাবাদী পলিগারদের থেকে বিদনুর, সুন্ডা, সেরা, কানাড়া অঞ্চল মুক্ত করে হায়দার আলি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনেন।
পলিগারদের দমন করে রাজ্যের মধ্যে তিনি সংহতি জোরদার করেন।
মহীশূর ও মারাঠা শক্তি
পেশোয়া বালাজি বাজিরাও থেকে পেশোয়া মাধব রাও, বারে বারে মারাঠাদের দ্বারা মহীশূর আক্রমণ হয়েছে। এমনকি হায়দার আলীর সময়ও মারাঠা শক্তি আক্রমণ শাণিয়েছে।
কার্যত মারাঠা আক্রমণে জেরবার হতে হয়েছে হায়দার আলিকে।
১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মারাঠাশক্তি ও আহম্মদ শাহ আবদালীর মধ্যে। এই যুদ্ধে মারাঠাদের ভীষণ বিপর্যয় ঘটে।
পেশোয়া মাধব রাও মারাঠা বাহিনীকে আবার সংগঠিত করেন। ১৭৬২ থেকে ১৭৭১ সাল পর্যন্ত বারে বারে মারাঠা-মহীশূর যুদ্ধ হয়েছে।
হায়দার আলি একটিও যুদ্ধ জিততে পারেননি। স্বাধীন মহীশূর রাজ্য টিকিয়ে রাখা হায়দারের পক্ষে সত্যিই কঠিন ছিল।
কিন্তু বোধ হয় ভাগ্যদেবী হায়দারের প্রতি প্রসন্ন ছিলেন।
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে মাত্র আঠাশ বছর বয়সে মাধব রাও-র মৃত্যু হলে ফের মারাঠাদের মধ্যে অনৈক্য ও ঝামেলা মাথাচাড়া দেয়।
এই সুযোগে হায়দার আলি হাতছাড়া হওয়া স্থানগুলি দখল করেন। কৃষ্ণা নদীর তীর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।
কার্যত হায়দার আলির নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্য অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতে অন্যতম শক্তি হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছিল।
হায়দার আলির কৃতিত্ব বা অবদান
হায়দার আলির নেতৃত্বে মহীশূর রাজ্যের উত্থান অল্পকালের মধ্যেই সাধিত হয়েছিল। মহীশূর ভারতের একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে। তবে মহীশূরের এই উত্থানের পিছনে হায়দার আলির কৃতিত্ব, অবদান অনেখানি।
১) একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে জীবন শুরু করে মহীশূর রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা হায়দারের কৃতিত্বের পরিচায়ক।
২) মহীশূরের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের দক্ষতা, সাহস ও প্রতিভা কে কাজে লাগিয়েছিলেন হায়দার আলি। উদ্যম, দৃঢ়মনস্ক ব্যক্তিত্ব, প্রখর বুদ্ধি হায়দারকে ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়ে ছিল।
৩) বিদ্রোহী পলিগারদের দক্ষতার সাথে দমন করে হায়দার আলি রাজ্যের ভেতরে সংহতি বৃদ্ধি করেছিলেন।
৪) নবাব হায়দার আলি যখন স্বাধীন মহীশূরের নবাব হয়েছিলেন ইংরেজ শক্তি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার আরম্ভ করেছিল। ইংরেজদের নজর ছিল মহীশূরের দিকে। কিন্তু হায়দার আলির সামরিক প্রতিভার ফলে মহীশূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হতে পারেনি।
৫) স্বাধীন মহীশূর রাজ্যে একটি সুদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কারিগর ছিলেন হায়দার আলিই।
৬) ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে হায়দার আলি তাঁর যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এরফলে ভারতে ইংরেজশক্তি মহীশূরের কাছে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিল।
হায়দার আলির মৃত্যু
১৭৮২ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর হায়দার আলীর মৃত্যু ঘটে। এরপর হায়দার আলির সুযোগ্য পুত্র টিপু সুলতান মহীশূর রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন।
টিপু সুলতান সুযোগ্য পুত্রের পরিচয় দিয়ে পিতা হায়দার আলির পথই অনুসরণ করেছিলেন। টিপু সুলতানকে বলা হোতো মহীশূর শার্দুল বা শের-ই-মহীশূর বা মহীশূরের বাঘ।
টিপু সুলতানের রাজধানী ছিল তৎকালীন শ্রীরঙ্গপত্তম।
বিদেশী ইংরেজদের ভারতের বুকে আধিপত্যের বিরুদ্ধে টিপু শৌর্য-বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন তাই তাকে মহীশূর শার্দুল নামে ডাকা হোতো।
তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা বিচক্ষণ শাসক। ইংরেজদের সাথে টিপু সুলতানের সম্পর্ক প্রথম থেকেই তিক্ত ছিল।
সহজে হার না মেনে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন টিপু সুলতান। যদিও শেষরক্ষা তিনি করতে পারেননি।
মূল্যায়ণ
মুঘল কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার সুযোগে দাক্ষিণাত্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল মহীশূর রাজ্য।
রাজা চিক্কাকৃষ্ণরাজ-র মতো অদক্ষ ও ব্যক্তিত্বহীন শাসকের জন্য মহীশূরে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা প্রকট হয়েছিল।
সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন রাজ্যের ক্ষমতালোভী দুই মন্ত্রী।
পরবর্তীকালে হায়দার আলির -র মতো মহীশূর রাজ্যের এক সাধারণ সৈনিকের হাত ধরে মহীশূর রাজ্যের ভোলবদল হয়।
সাহস, উদ্যম, বিচক্ষণতার সাথে হায়দার আলি মহীশূরকে ভারতের একটি শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করেন। হায়দার আলির নেতৃত্বে মহীশূরের এইরূপ উত্থান ভারতে ইংরেজ শক্তির মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে হায়দার আলি মহীশূরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছিলেন।
যা পরবর্তীকালে হায়দার আলির সুযোগ্য পুত্র টিপু সুলতানের সময় পর্যন্ত বহাল থাকে। তাই মহীশূরের উত্থানের ইতিহাস আজও ইতিহাসের পাতায় অমলিন।
আরও পড়ুন : তারকেশ্বরের ইতিহাস
আশা করি মহীশূরের উত্থান সম্পর্কে এই পোস্টটি পড়ে অনেক তথ্য তোমরা জানতে পেরেছো। যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে তোমাদের মতামত জানিও। পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার কোরো। তোমাদের মূল্যবান মতামত আমাকে ভীষণ অনুপ্রেরণা যোগায়। ভালো থেকো বন্ধুরা।