রেগুলেটিং অ্যাক্ট (Regulating Act) ১৭৭৩ এবং পিটের ভারত আইন (Pitt’s India Act) ১৭৮৪
কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভাল আছো।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট ও পিটের ভারত আইনের নাম তুমি কি শুনেছ ? অথবা এগুলি সম্পর্কে কি তুমি কিছু জানো ? যদি জেনে না থাকো তাহলে এই ব্লগটা থেকে জেনে নাও। তাহলে চল শুরু করা যাক।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটি বণিক গোষ্ঠী। তাই এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ তার বাণিজ্যিক স্বার্থের সঙ্গেই জড়িত ছিল। কোম্পানির তিনটি ঘাঁটি ছিল।
১) কলকাতা
২) বোম্বাই
৩)মাদ্রাজ
এই ঘাঁটি গুলি থেকেই তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালিত হত।
এই ঘাঁটিগুলি তিনটি পরিষদ (Council) দ্বারা চলত। এই কাউন্সিল গুলো লন্ডনে অবস্থিত কোম্পানির Court of Directors-র সাথে পরামর্শ করে কাজকর্ম চালাত। যারা সফল ব্যবসায়ী, তাঁরাই একমাত্র কাউন্সিলের সদস্য হতেন। এই সদস্যদের একজন হতেন কাউন্সিলের সভাপতি।
আর সভাপতিই হতেন ওই ঘাঁটিগুলির গভর্নর।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা সামান্য হারে বেতন পেতেন। কিন্তু তাঁরা ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যে অংশ নিয়ে নিজেদের আয় বাড়িয়ে নিতেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে বাণিজ্যের সময় কোম্পানির কর্মচারীরা কোন সুবিধা করতে পারত না।
পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর থেকেই বাংলাদেশে কোম্পানির সম্পদ প্রচুর হারে বেড়েছিল। সম্পদে ফুলে ফেঁপে ইংরেজ বণিকদল ইংল্যান্ডে তাদের প্রতিপত্তি দেখাতে শুরু করে।
কিন্তু এই বিষয়টিকে ইংল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা ভাল চোখে দেখেননি। কারণ বণিকেরা অসৎ উপায় অবলম্বন করে এই সম্পদ উপার্জন করেছিলেন। এর ফলে কোম্পানির ভিতরে দুর্নীতি বাসা বাঁধতে শুরু করে।
কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের সময় ঘাটতি দেখা দেয়। আর কোম্পানি এক মারাত্মক আর্থিক সংকটের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস করা হয়।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট (Regulating Act) ১৭৭৩ :- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ব্রিটিশরাজের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম পদক্ষেপ ছিল এই আইন। ভারত ও ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এই আইন পাশ করে।
এই আইনের দুটি ধাপ ছিল – একটি ইংল্যান্ডে কোম্পানির কেন্দ্রীয় সংগঠন সম্পর্কে, আর অন্যটি ভারতে শাসন সম্পর্কে। এই দ্বিতীয়টি ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই আইন অনুসারে –
১) বাংলাদেশের কলকাতায় গভর্নর জেনারেল নামক একটি পদ তৈরি করা হয়। জেনে রাখ বন্ধু এই আইন অনুযায়ী বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস।
২) গভর্নরের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত করা হয়। প্রথম চারজন সদস্য ছিলেন ক্লেভারিং, মনসন, বারওয়েল ও ফিলিপ ফ্রান্সিস।
৩) গভর্নর জেনারেল কলকাতা থেকে বসেই বোম্বাই ও মাদ্রাজের ঘাঁটিগুলির উপর কর্তৃত্ব খাটানোর অধিকার লাভ করেন।
৪) এই আইন অনুযায়ী একটি বোর্ড অফ কন্ট্রোল গঠিত হয়। ভারতে সামরিক ও অসামরিক শাসন কার্য পরিচালনার বিষয়গুলি দেখাশোনা করার জন্য বোর্ড পূর্ণ অধিকার পায়।
৫) যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির উপর গভর্নর জেনারেল ও তার কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ জন্মায়।
৬) কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস ব্রিটিশ সরকারের কাছে কোম্পানির শাসন ও অর্থনীতি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পেশ করতে বাধ্য ছিল।
৭) ১৭৭৪ সালে কলকাতায় ১ জন প্রধান বিচারপতি এবং ৩ জন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে একটি সুপ্রীম কোর্ট (Supreme Court) স্থাপন করা হয়। এর প্রথম ও প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন স্যার ইলিজা ইম্পে।
পিটের ভারত আইন (Pitt’s India Act) ১৭৮৪ :- রেগুলেটিং অ্যাক্ট পুরোপুরি ত্রূটিমুক্ত ছিল না। এই আইনের ফলে কোম্পানির উপর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা যায়নি। এমনকি কাউন্সিলের উপর গভর্নর জেনারেলের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এইসব ত্রূটি দূর করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৭৮৪ সালে একটি আইন পাশ করা হয়। সেইসময় ইংল্যান্ডের নতুন তরুণ প্রধানমন্ত্রী হন উইলিয়াম পিট (William Pitt) | তিনি এই আইন জারি করেন। তাই এই আইন পিটের ভারত আইন নামে ইতিহাসে পরিচিত।
১৭৮৫ সালের ১ লা জানুয়ারি ভারতবর্ষে এই আইন কার্যকর করা হয়।
এই আইন অনুসারে –
১) একটি বোর্ড অফ কন্ট্রোল (Board of Control) গঠিত হয়। বোর্ডে সদস্য সংখ্যা ছিল ৬ জন। একজন ভারত সচিব , একজন অর্থসচিব ও চারজন প্রিভি কাউন্সিলার।
২) এই আইন দ্বারা সর্বপ্রথম কোম্পানির প্রশাসনিক ক্ষমতার উপর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়।
৩) বোর্ড অফ কন্ট্রোল ইচ্ছেমতো কোম্পানির কাগজপত্র দেখার ও ভারতের সামরিক, প্রশাসনিক এবং রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার পায়।
৪) এই আইনে গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা হয়।
৫) ভারতে কর্মরত কোম্পানির যে কোনো প্রশাসনিক কর্তাই গভর্নর জেনারেলের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকত।
লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।
পড়ে আমার দারুণ লেগেছে।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট এবং পিটের ভারত শাসন আইন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেলাম।
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই নোটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 5 বা 10 নম্বরের জন্য ।
ধন্যবাদ 🙏
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে , পুরো লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়বার জন্য। চাইলে অন্য লেখাগুলিও পড়ে দেখবেন। ভালো থাকবেন।
খুব ভালো লাগলো। অনেক উপকার হলো। বিস্তারিত ভাবে লেখা ছিলো। আরো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর লেখা চাই 🙏🏻
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার উপকারে লেখাটি এসেছে, এটাই আমার ওয়েবসাইটের জন্য এবং আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। আপনার কথা অবশ্যই রাখার চেষ্টা করব। ইতিহাসের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নিশ্চই লেখা আসবে এই ওয়েবসাইটে। তার জন্য এই ওয়েবসাইটটি ফলো রাখবেন। ভালো থাকবেন।