examination history পরীক্ষার ইতিহাস

পরীক্ষার উদ্ভাবক কে জানতে পরীক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে জানুন

পরীক্ষার ইতিহাস ( examination history ) সম্পর্কে জানলে এক্সামের ভয় কেটে গেলেও যেতে পারে। কেন যে এটি চালু হয়েছিল, আর কেইবা করেছিল তা জানতে অনেকেরই কৌতূহল হয়।

ছোট্ট মিলি পড়তে বসে রোজ সাতপাঁচ ভাবে। পরীক্ষা নামক দানব তাঁকে একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মিলির মতো এরকম অনেকেই ভাবে।

আসলে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে এক্সাম মানে একটা ভয়। পাশ না ফেল ? পাশ করলে তো মহাআনন্দ।

আর যদি হয় ফেল তাহলে জুটবে বাবা মায়ের বকুনি নয়তো মার। উফ কি টেনশন মাইরি।

সত্যিই কি ভয়ানক ব্যাপার তাই না। আসলে ব্যাপারটা ভয়ানক টয়ানক কিছুই না। বেশ আনন্দ সহকারেই এই ব্যবস্থার শুরু হয়েছিল।

কাজে কৃতিত্ব দেখাতে পারলে পুরস্কার হিসেবে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হত। পরীক্ষা আবার পুরস্কার ? তা হয় নাকি ? ইতিহাস তাই বলছে।

তবে সেসময় পরীক্ষা নেওয়া হত চাকরির উপযুক্ত লোকজন বেছে নেওয়ার জন্য। আর এখন রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে এটি।

ক্লাস পরীক্ষা, সাপ্তাহিক পরীক্ষা, মাসিক পরীক্ষা, ষাণ্মাসিক পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষা, প্রস্তুতি পরীক্ষা কত শত নাম তার।

examination history পরীক্ষার ইতিহাস
পরীক্ষাহলে পরীক্ষার্থীরাঃ examination history

ইতিহাস তো জানবো, আগে জেনে নিই পরীক্ষা কি বা পরীক্ষা বলতে কি বুঝায় ?

কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে একজন ব্যক্তির বা কোনো বস্তুর যোগ্যতা, দোষগুণ ইত্যাদির বিচারের জন্য প্রয়োজন হয় একটি পদ্ধতির।

এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিকেই বলা হয় পরীক্ষা। আর পরীক্ষা যিনি করেন তিনি হলেন পরীক্ষক বা গবেষক।

স্যার আইজ্যাক নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কর্তা ছিলেন।

আপেল গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখে ভাবলেন কেন আপেলটি শুন্যে উঠে না গিয়ে মাটিতে পড়ল।

এসম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে যে পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়েছিল সেটাই হল পরীক্ষা।

একেবারে শুরুর কথা বলা যাক। বিশ্বের প্রথম পরীক্ষা শুরু বা উৎপত্তি হয়েছিল আমাদের প্রতিবেশী দেশ চীনে।

সেখানে সেইসময় সুই রাজবংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। সময়কাল মোটামুটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দ।

রাজারা ঠিক করলেন রাজ্যের শাসন পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকজন নিয়োগ করা প্রয়োজন। এরফলে শাসনকার্য ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে।

শুরু হল উপযুক্ত ও যোগ্য লোক বাছাইয়ের তোড়জোড়। কিন্তু এই ব্যবস্থাকে কিছুতো একটা নাম দিতে হবে।

নাম দেওয়া হল ‘ইম্পিরিয়াল একজামিনেশন‘। আরে এটা তো ইংরেজি নাম।

আসলে চীনা ভাষায় যে নামটি দেওয়া হয়েছিল এটা তার ইংরেজি অনুবাদ।

একজামিনেশন না হয় হবে। কিন্তু তার একটা বিষয় থাকা দরকার। আজকের মতো ইংরেজি, ইতিহাস, অঙ্ক, ভূগোল এইসব তখন বিষয় ছিল না।

পরীক্ষার বিষয় ঠিক করা হল ‘কনফুসিয়ানিসম‘। পরীক্ষার্থীরা এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বইপত্র পড়ে পরীক্ষা দিয়েছিল।

দেখতে দেখতে সুই রাজবংশের রাজত্ব শেষ হয়। কিন্তু তাঁদের তৈরি এই ব্যবস্থা রয়ে গেল। আর আজ এর ভয় আমাদের উঠতে বসতে গিলে খাচ্ছে।

চীনে ব্যাপারটি ততদিনে সবার মধ্যে সড়গড় হয়ে গেছে। চীনের সুই রাজাদের রাজত্ব শেষ হয়ে টাং রাজবংশের রাজত্ব শুরু হয়েছে।

চীনের দেখাদেখি জাপানেও পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হল।

জাপানের হাইয়ান যুগের একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন সুগাওয়ারা মিচিজেন।

তিনি বলেছিলেন, ইম্পিরিয়াল একজামিনেশন পাশ করার অভিজ্ঞতা ছিল ভীষণ আনন্দের।

তবে চীনে ও জাপানে নিয়ম ছিল যে, যে কেউ নিজের ইচ্ছামতো এই ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন হত সুপারিশের।

সুপারিশ করতেন তাঁদের পৃষ্ঠপোষকরা। জানলে অবাক হবেন, কোনো কাজে কৃতিত্ব দেখাতে পারলে পুরস্কারস্বরুপ কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার ছাড়পত্র পেত।

অর্থাৎ আনন্দের সাথে গোটা বিষয়টি উদযাপিত হত। জাপানের পর চালু হয় কোরিয়ায়।

এখানে নিয়ম কিছুটা শিথিল করে সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর লোকজনদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

এবার ইওরোপের কথায় আসি। এখানে চোখ রাখলে দেখা যাবে যে, ইতালির বোলোনিয়ায় মৌখিক পরীক্ষা চালু ছিল।

১৭০২ খ্রিস্টাব্দে লিখিত পরীক্ষা চালু হয়েছিল লন্ডনের কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে।

ইওরোপের মধ্যে ফ্রান্স সবসময় সেরা ছিল। ফ্রান্স বিদ্যাঅর্জনের কেন্দ্র হিসেবে প্রথম থেকেই খ্যাতির শীর্ষে।

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিপ্লব হওয়ার একবছর পর ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন দপ্তরে কর্মী নিয়োগ শুরু হয়।

এই নিয়োগের জন্য শুরু হয় লিখিত আকারে পরীক্ষার। ফাদার অব ইকনমিক্স ( Father of economics ) বা ফাদার অব ক্যাপিটালিজম বলা হয় অ্যাডাম স্মিথকে ( Adam Smith )।

এককথায় আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক তিনি। পুঁজিবাদের তত্ব, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, চাহিদা ও যোগান, শ্রমের বণ্টন এই বিষয়গুলিতে তাঁর অবদান রয়েছে।

তৎকালীন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মুলক এক্সজাম নেওয়ার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন স্মিথ।

চীনে মিশনারি হিসেবে থাকতেন ইংল্যান্ডের ওয়াল্টার হেনরি মেডহারস্ত ( Walter Henry Medhurst )। এখানে থাকার সুবাদে এক্সজামিনেশন ব্যাপারটা সম্পর্কে সবটা জেনেছিলেন।

জানা যায় ব্রিটেনে সিভিল সার্ভিস কলেজ তৈরির সময় চীনের অনুকরণে পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

চীন, জাপান, ইওরোপ অনেক হল এবার ভারতের দিকে নজর ঘোরানো যাক। বৈদিক যুগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা চালু ছিল।

তবে তার জন্য লিখিত কোনো টেস্ট নেওয়া হত না।

মহাভারতে দেখা যায় কৌরব ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু ছিলেন গুরু দ্রোণাচার্য।

তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের অস্ত্রশিক্ষা যাচাই করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি মহাভারতে মৌখিক পরীক্ষা বা বিতর্কসভার কথাও জানা যায়।

তবে আজকের মতো খাতা পেন নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো ছিল না।

প্রায় ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফারুকশিয়রের থেকে দস্তক পাওয়ার পর ভারতে ইংরেজদের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতে তাঁদের পসার জমতে শুরু করে। এব্যাপারে এক কবি লিখেছিলেন, ‘বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রুপে‘।

বণিক রুপে এসে ইংরেজরা এদেশে রাজা হয়ে বসলো।

যাইহোক ভারতে শাসক হয়ে জাঁকিয়ে বসার পর তাঁরা উপলব্ধি করল যে কাজের জন্য ভারতীয় কর্মচারী নিয়োগ করা প্রয়োজন।

এর আগে ব্রিটিশ অফিসারেরাই উচ্চপদে নিয়োজিত ছিলেন। তাই ভারতীয়দের জন্য ১৮৬১ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এক্সজামিনেশন চালু হল।

ঘোষণা করা হল যারা এই এক্সজামিনেশন পাশ করবে তাঁদেরকে ইংল্যান্ডের সিভিল সার্ভিস কলেজে ট্রেনিং-র জন্য পাঠানো হবে।

জানেনকি এই এক্সাম পাশ করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাঁর বন্ধু মনমোহন ঘোষও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিলে তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

এই ভদ্রলোক পরবর্তিকালে একজন বিখ্যাত ব্যারিস্টার হয়েছিলেন।

এছাড়াও তিনি ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন চিরস্মরণীয় কিংবদন্তী নেতা ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু।

আমাদের সকলের প্রিয় নেতাজী। তিনিও কিন্তু ১৯২১ সালে কৃতিত্বের সাথে আই. সি. এস পাশ করেছিলেন।

চতুর্থ স্থান দখল করেন তিনি। কিন্তু এইসব সত্বেও ব্রিটিশদের দেওয়া চাকরি তিনি করেননি।

বর্তমানে আমাদের দেশে, রাজ্যে বিভিন্ন ধরণের এক্সজামিনেশন চালু আছে।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কম্পিটিটিভ এক্সজামও ( Competitive Examination ) হয়ে থাকে।

কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জনপ্রিয়তার কারণে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে রেশারেশিও অত্যন্ত বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের বাড়তে থাকা জনসংখ্যার কারনেই এমনটা হচ্ছে।

ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মী নিয়োগের এক্সজাম বর্তমানে অফলাইন ও অনলাইন দুভাবেই নেওয়া হয়ে থাকে।

খাতা কলম বাদে ডিজিটাল মাধ্যমেও যোগ্যতা যাচাই হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের উন্নতিকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।

ভারতে পিএসসি, এসএসসি, ইউপিএসসি-র দ্বারা সরকারের উচ্চপদ্গুলিতে যোগ্য কর্মী নিয়োগ বর্তমানে চালু আছে।

এবং এখানে নিয়োগের সময় স্বচ্ছতা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

আধুনিক পরীক্ষার আবিষ্কর্তা বা উদ্ভাবক কে ?

যদি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া হয় তাহলে হেনরি এ ফিশেল-র নাম উঠে আসে। নাম শোনামাত্র এনার ওপর রাগ হচ্ছে ?

ভাবছেন তো কেনই বা এই ভদ্রলোক পরীক্ষার আবিষ্কার করতে গেলেন। আবিষ্কার না করলে আজ এর ভয়ে সিটিয়ে থাকতে হত না।

জানেন হেনরি ফিশেল ( Henry A. Fischel ) কে ছিলেন ? ১৯১৩ সালে ফিশেল জার্মানির বন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

জার্মানিতে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রফেসর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

আর এখানেই পাঠদানকালে তাঁর মাথায় এই পদ্ধতি সম্পর্কে আইডিয়া আসে।

তিনি ভাবলেন, কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছনোর আগে সেসম্পর্কে যাচাই করা প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার ‘পরীক্ষার’

অনেক ভেবেচিন্তে মাথা থেকে এই প্রক্রিয়ার জন্ম দেওয়ায় ফিশেলই হলেন আধুনিক পরীক্ষা ব্যবস্থার প্রথম আবিষ্কর্তা।

এককথায় তাঁকে পরীক্ষা পদ্ধতির জনক বলা যায়।

ছাত্রসমাজের কাছে পরিচিত তিনি খলনায়ক রুপে। ২০০৮ সালে ২০শে মার্চ হেনরি ফিশেল মারা যান।

বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপ্তি অনেকদুর ছড়িয়ে পড়েছে। গজিয়ে উঠেছে অনেক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়।

ভারতের বহু শিক্ষার্থী আজকাল বিদেশে গিয়েও লেখাপড়া শিখছে।

বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে তাঁরা পাড়ি দিয়েছে আমেরিকা, জার্মানি, কানাডা সহ ইত্যাদি দেশে।

উল্টোদিক থেকে বিদেশীরাও ভারতের অজানা দিক নিয়ে গবেষণা করতে এদেশে আসছে।

কিন্তু সবাই শেষপর্যন্ত দিনের শেষে ওই পরীক্ষা নামক বস্তুটির সাথেই মিলিত হচ্ছে।

প্রথমে চাকরির উপযুক্ত লোক বাছাইয়ের জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এটি সর্বক্ষেত্রে আনাগোনা করছে। আসলে পরীক্ষা ব্যবস্থাটা কেবলমাত্র মূল্যায়নের পদ্ধতি।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত সঠিক জ্ঞান সংগ্রহ করে তা রোজকার জীবনে কাজে লাগানো।

অহেতুক ভয়, টেনশন না করা।

মনে রাখতে হবে ক্লাসরুমে বসে খাতায় কলমে পরীক্ষার জন্য আমরা যেমন তৈরি থাকবো।

ঠিক তেমনি প্রতিদিনের জীবনের কঠিন পরীক্ষাকে মোকাবিলার ক্ষেত্রেও আমাদের তৈরি থাকতে হবে।

1) পরীক্ষা বলতে কি বুঝায় ?

কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে একজন ব্যক্তির বা কোনো বস্তুর যোগ্যতা, দোষগুণ ইত্যাদির বিচারের জন্য প্রয়োজন হয় একটি পদ্ধতির। এই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিকেই বলা হয় পরীক্ষা। আর পরীক্ষা যিনি করেন তিনি হলেন পরীক্ষক বা গবেষক।

2) পরীক্ষার আবিষ্কর্তা কে ?

আধুনিক পরীক্ষার আবিষ্কারক বা উদ্ভাবক কে ? যদি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া হয় তাহলে হেনরি এ ফিশেল-র নাম উঠে আসে। অনেক ভেবেচিন্তে মাথা থেকে এই প্রক্রিয়ার জন্ম দেওয়ায় ফিশেলই হলেন আধুনিক পরীক্ষা ব্যবস্থার প্রথম আবিষ্কর্তা। এককথায় তাঁকে পরীক্ষা পদ্ধতির জনক বলা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!