ইতিহাসে আবুল ফজল । Abul Fazl in History in bengali

আবুল ফজল (Abul Fazl) ১৫৫০-১৬০২

কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভাল আছো। 

তুমি কি জানো আবুল ফজল কে ছিলেন ? যদি না জেনে থাক তাহলে জেনে নাও এই ব্লগটি থেকে। 

পরিচিতি :-

আবুল ফজল-এর পুরো নাম, শেখ আবুল ফজল ইবন মুবারক। আবুল ফজল ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই জানুয়ারি আগ্রাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শেখ মুবারক নাগরী। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত পারসিক সুফি পণ্ডিত। আবুল ফজল ছিলেন শেখ মুবারক নাগরীর দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তান শেখ ফৈজী ছিলেন আবুল ফজলের বড় ভাই। ফৈজী সম্রাট আকবরের রাজসভার একজন নামকরা কবি ছিলেন। 

ব্যক্তিত্ব :- 

ধর্মের ব্যাপারে তিনি খুবই উদার ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শান্তিনীতিতে। সম্রাট আকবরের ভাল বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি মুঘল রাজতন্ত্রের উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ছিলেন আবুল ফজল। সম্রাট আকবরের নির্দেশ মতই তিনি আকবরের রাজত্বের ইতিহাস লিখেছিলেন। 

আবুল ফজল তার বইতে আকবরকে ‘Superman’ হিসাবে স্থান দিয়েছেন। 

‘The Mughal Empire’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, আবুল ফজল ছিলেন মুঘল যুগের ‘একজন প্রথম শ্রেণীর পন্ডিত, লেখক, রাষ্ট্রনায়ক, কূটনীতিক, সমর অধিনায়ক, ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক’। তিনি ছিলেন একজন প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তি।

এবারে তার রচিত কিছু গ্রন্থ সম্পর্কে জানব। তার রচিত গ্রন্থ গুলি হল –

আরও পড়ুন : শিবাজি ও মারাঠা শক্তির উত্থান

আকবরনামা :- 

আকবরনামা ফার্সি ভাষায় রচিত। তিনটি খন্ডে এই গ্রন্থটি রচিত। আবুল ফজলের বিখ্যাত আকবরনামা গ্রন্থটি ইংরেজি ভাষাতে অনুবাদ করেছেন এইচ. বেভারিজ (H. Beveridge) | এই বইটির ১ম খন্ডে তৈমুর লং এর সময়কাল থেকে হুমায়ুনের সময়কাল পর্যন্ত মুঘল বংশের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। 

২য় এবং ৩য় খন্ডে বর্ণনা করা হয়েছে আকবরের রাজত্বকালের সমস্ত ঘটনাকে। এইসব ঘটনাগুলির পিছনে কি উদ্দেশ্য ছিল তাও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। 

আইন -ই -আকবরী :- 

আবুল ফজলের রচিত আইন-ই – আকবরী একটি সুবিখ্যাত গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি তিনটি খন্ডে রচিত। গ্রন্থটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ব্লকম্যান ও গ্যারেট (Blockman & Garret) | এই বইটিতে আকবরের আমলের ভারতবর্ষের পরিসংখ্যান বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। 

আকবরের সাম্রাজ্যের আয়তন, সম্পদের অবস্থা, শাসন পদ্ধতি, শিল্প, কৃষি ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ আইন -ই -আকবরী তে আবুল ফজল লিপিবদ্ধ করেছেন। 

গ্রন্থটিকে জ্ঞানের ভান্ডার বলা যেতে পারে। কি নেই গ্রন্থটিতে, রস -রসদের যোগান আছে। তরুণ সমাজের জন্য আছে রঙ্গীন উপচার , বয়স্ক ও পরিণত মনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন খবরের রত্নভাণ্ডার। 

ইংরেজ অনুবাদক ব্লকম্যান তাই জোর দিয়ে বলেছেন , “আইন-ই-আকবরী হল ফার্সি ভাষায় রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে এক ও অদ্বিতীয় গ্রন্থ।’’ বইটি থেকে মধ্যযুগের জনসাধারণের জীবন যাপনের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। 

আবুল ফজলের নিজের বক্তব্যের মধ্যেই পাওয়া গেছে যে, তিনি কতটা কষ্ট স্বীকার করে ও সতর্ক হয়ে এই গ্রন্থটির উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন। 

তিনি সংবাদদাতাদের সামনে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখতেন এবং ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে উত্তর দিতে বলতেন। কারণ এই বইটিতে প্রতিটি বিষয়ের আগে, প্রস্তুত করা অন্তত কুড়িটি স্মারকলিপির ভূমিকা আছে। এমনটাই মত ঐতিহাসিকদের। 

কিন্তু এই বইটিতে তিনি আকবরের আগের মুঘল বাদশাহদের অবদানকে উপেক্ষা করেছেন। এমনকি টোডরমল, যিনি কিনা আকবরের রাজস্ব ব্যবস্থার প্রধান ব্যাক্তি ছিলেন তাঁর নামও এই গ্রন্থটিতে একবারও উচ্চারণ করা হয়নি। 

বলা যেতে পারে আইন-ই-আকবরী ইতিহাসের এক স্মারক স্তম্ভ।

রুকাত-ই-আবুলফজল :- 

রুকাত-ই-আবুল-ফজল ফার্সি ভাষায় রচিত চিঠিপত্র সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থে সম্রাট আকবর, মুরাদ, দানিয়েল, মরিয়াম মাকানি, সেলিম এবং আকবরের বেগম ও কন্যাদের লেখা চিঠির উল্লেখ রয়েছে। 

এছাড়াও আবুল ফজলের পিতামাতা, ভাই ও বিশিষ্ট মানুষদের কাছে লেখা চিঠির কথাও এই বইটিতে বলা হয়েছে। চিঠিগুলি এক একটি ঐতিহাসিক দলিল। 

ইনসা-ই-আবুল ফজল :-   

আবুল ফজলের চতুর্থ গ্রন্থের নাম হল ইনসা-ই-আবুল ফজল। এই গ্রন্থটির অপর নাম হল মুক্তুবাৎ-ই-আল্লামী। এখানেও আকবরের সময় বিখ্যাত ব্যক্তিদের লেখা চিঠি ও সরকারি আদেশ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

আকবরনামায় যে ঘটনাগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছিল, সেগুলি এখানে বিস্তারিত আকারে বলা হয়েছে। 

অবশেষে, ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্য থেকে ফেরার সময় তাঁকে হত্যা করা হয়। হত্যা করেছিলেন বীর সিংহ বুন্দেলা। পরবর্তীকালে ইনি ওরছা-র রাজা হয়েছিলেন। আর একাজে ইন্ধন দিয়েছিলেন সেলিম, যিনি ইতিহাসে জাহাঙ্গীর ( Jahangir ) নামে পরিচিত ।

মধ্যপ্রদেশের অন্ত্রীর (Antri) কাছে আবুল ফজলকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। 

তাই পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, আবুল ফজল ছিলেন মুঘল যুগের একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত মানুষ। উলেমাদের তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি বিশ্বজনীন সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী ছিলেন। একজন ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসের প্রবর্তক ছিলেন তিনি।   

আরও পড়ুন : সমাজসংস্কারক রামমোহন রায়

লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার। ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।

2 thoughts on “ইতিহাসে আবুল ফজল । Abul Fazl in History in bengali”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!