আবদুল কাদির বদায়ুনি । Abdul Qadir Badayuni in bengali

ইতিহাসে আবদুল কাদির বদায়ুনি (Abdul Qadir Badayuni) ১৫৪০-১৬০৫

কেমন আছো বন্ধু , আশা করি নিশ্চই ভাল আছো। 

আগের ব্লগে আকবরের রাজত্বকালের বিখ্যাত লেখক আবুল ফজল-কে নিয়ে আলোচনা করেছি। পারলে সেটি একবার পড়ে নিও। এবারের আলোচনার বিষয় আবদুল কাদির বদায়ুনি (Abdul Qadir Badayuni)-কে নিয়ে। 

ইনিও একজন বিখ্যাত লেখক যিনি আকবরের রাজত্বকালে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ইতিহাসে তিনি বদায়ুনি নামেই পরিচিত। 

পরিচিতি :- 

আবদুল কাদির বদায়ুনি ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের বদায়ুনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মুলুক শাহ। বদায়ুনি ছিলেন একজন সুন্নি মুসলমান। মুঘল যুগের একজন শ্রেষ্ঠ বিদ্বান ব্যক্তি হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল। 

ছাত্র অবস্থায় শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন সন্ত বাচচু-র কাছে। এরপর সেযুগের শ্রেষ্ঠ পন্ডিত আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারকের কাছেও শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।

ব্যক্তিত্ব :- 

বিভিন্ন বিষয়ের বিখ্যাত পন্ডিত ও ধার্মিক ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে আসার ফলে বদায়ুনি বিশিষ্ট পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। সঙ্গীত, ইতিহাস, জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। 

ছোটোবেলা থেকেই ইতিহাসকে ভালোবাসতেন। তাই বলা হয় যে, জীবনের অনেকটা সময় ইতিহাস পড়তে ও লিখতে তিনি ব্যয় করতেন। আনুমানিক ১৫৭৩ কিংবা ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে বদায়ুনির সাথে আকবরের পরিচয় হয়। 

আকবর বদায়ুনির প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর দরবারের ইমামের পদে নিযুক্ত করেন। এমনকি তাঁকে ১ হাজার বিঘা ‘মাদাদ-ই-মাস’ জমিও  দান করেন।

বদায়ুনির ব্যক্তিত্বে গোঁড়া ও সমালোচকের ছাপ স্পষ্ট।

তিনি আকবর, ফৈজি ও আবুল ফজলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আকবরের উদার ধর্মনীতিরও কট্টর সমালোচনা করেছেন।

কিন্তু জেনে রাখো বন্ধু হিন্দু মহাকাব্য ‘মহাভারত’-র পারসিক ভাষায় অনুবাদ আকবর বদায়ুনিকে দিয়ে করিয়েছিলেন।

আমীর, উলেমাদের তিনি পছন্দ করতেন না। তাঁদের ধর্মান্ধতা ও খারাপ আচরণের জন্য বদায়ুনি ঘৃণা ও বিদ্রুপ পোষণ করতেন। 

বদায়ুনির লেখা গ্রন্থটির সম্পর্কে নীচে দেওয়া হল –

মুন্তাখাব-উৎ-তওয়ারিক(Muntakhab-ut-Tawarikh) বা  তারিখ-ই-বদায়ুনি (Tarikh-i-Badayuni) :-  

মুঘল যুগের ইতিহাসের এক মূল্যবান গ্রন্থ এটি। এই গ্রন্থটি তিনটি খন্ডে রচিত। বদায়ুনি বইটিতে আকবরের ধর্ম ও ধর্মনীতি-কে নিয়ে সমালোচনা করেছেন। 

তারিখ-ই-বদায়ুনি গ্রন্থটি তিনটি খন্ডে লেখা হয়েছে। 

প্রথম খন্ডে বাবর ও হুমায়ুনের বিবরণ আছে। 

দ্বিতীয় খন্ডে আকবরের শাসনকালের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। 

আর তৃতীয় খন্ডে বদায়ুনি বিভিন্ন মুসলিম সাধক ও খ্যাতনামা পন্ডিতদের বিবরণ দিয়েছেন। 

পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল যুগের ইতিহাস চর্চায় বদায়ুনি এক গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর এই গ্রন্থটিকে ইতিহাস না বলে স্মৃতিচারণ বলাই ভাল। তাঁর উদারতার কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে। 

কারণ তিনি মহাভারতকে পারসিক ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। এছাড়াও শের শাহ ও ইসলাম শাহের প্রশংসা করে তিনি ধর্মনিরপেক্ষর পরিচয় দিয়েছেন। 

১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আগ্রাতে বদায়ুনির মৃত্যু হয়। ইতিহাসে বদায়ুনি গোঁড়া ও কট্টর সমালোচক হিসেবেই বিখ্যাত হয়ে থাকবেন। 

“লেখাটি পড়ে তোমার কেমন লাগলো তুমি কমেন্ট করে নিশ্চয়ই জানাবে। এর থেকে আমি আরও উৎসাহ পাবো নতুন কিছু লেখার।  ভালো থেকো, আর ইতিহাস পড়তে থেকো।”

2 thoughts on “আবদুল কাদির বদায়ুনি । Abdul Qadir Badayuni in bengali”

  1. Humayun Kabir

    বদায়ূনি গোঁড়া ও কট্টর কেন??সেটাই তো স্পষ্ট করলেন না। নাকি পেটে বিদ্যা-বুদ্ধির অভাব আছে।।

    1. যদি আমি বিষয়টিকে ঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ না হয়ে থাকি আমি অবশ্যই ক্ষমাপ্রার্থী। মুঘল ঐতিহাসিক বদায়ুনি অর্থলোভী অভিজাতদের মতো ছিলেন না। এমনকি উলেমাদের কেও পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর নিজের ব্যক্তিত্ব ও ধর্মের প্রতিই যথেষ্ট আস্থাবান ছিলেন। তাই এইদিক থেকে তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের কাছে গোঁড়া বলে পরিচিত। আর অন্যদিকে ইতিহাস বলছে বদায়ুনি আকবরের কট্টর সমালোচক ছিলেন। আকবরের উদার ধর্মনীতিকে তিনি তাঁর গ্রন্থে সমালোচনা করেছেন। তবু বদায়ুনি উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!